ফাইল চিত্র।
কৃষকেরা সঙ্গে রাখুন বি আর অম্বেডকরের ছবি। ব্রিটিশ ভারতের জাঠ নেতা স্যর ছোটু রামের ছবি থাকুক দলিতদের বাড়িতে। গত কাল এমনই এক প্রস্তাব নেওয়া হল হরিয়ানার হিসারের কৃষক মহাপঞ্চায়েতে। লক্ষ্য— জাতপাতের বিভাজন যেন কৃষি আইন ঘিরে আন্দোলনকে দুর্বল করতে না-পারে। এ ভাবেই যেন কৃষক আন্দোলনকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।
আর সেই কারণেই দলিতদের কাছে টানতে বার্তা দেওয়া হল কৃষক নেতাদের। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, হরিয়ানায় প্রত্যেক ভোটে জাতপাতের অঙ্ক বড় হয়ে ওঠে। এখানকার ২০ শতাংশ মানুষ তফসিলি জনজাতির। সেই রাজ্যেই জাতের ঊর্ধ্বে উঠে এমন পদক্ষেপ কার্যকর হলে তা নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ।
হিসারের বারওয়ালা শহরে ওই মহাপঞ্চায়েতে ছিলেন কৃষক ইউনিয়ন নেতা গুরনাম চাদুনী। কৃষক ও দলিতদের মধ্যে আরও বেশি সংযোগের ডাক দেন তিনি। চাদুনী বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই সরকারের বিরুদ্ধে নয়, পুঁজিবাদীদের বিরুদ্ধে। সরকার আজ পর্যন্ত আমাদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে এসেছে— কখনও জাতের নামে, কখনও ধর্মের নামে। সরকারের এই ষড়যন্ত্রটা বুঝুন।’’
পঞ্জাব-হরিয়ানায় আর কোনও মহাপঞ্চায়েত আয়োজনের পক্ষপাতী নন চাদুনী। তাঁর মতে, কৃষি আইনের বিষয়ে জানা হয়ে গিয়েছে ওই দুই রাজ্যের। এ বার সময় অন্যান্য রাজ্যে নজর দেওয়ার। চাদুনী বলেন, ‘‘শ্রমিকেরা বুঝুন, কৃষি আইনের বিরুদ্ধে লড়াইটা শুধু কৃষকদের জন্য নয়। কৃষকেরা নিজেদের কাজ করবেন। কিন্তু সব চেয়ে বেশি ভুগবেন সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষ। তাই তাঁদের অনুরোধ করব এই আন্দোলনে আরও বেশি করে যোগ দিতে।’’ আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বিজেপি বা বিজেপি সমর্থিত প্রার্থী ছাড়া অন্য যাকে খুশি ভোট দিতে সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
আজই একগুচ্ছ নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কৃষকেরা। সংযুক্ত কৃষক মোর্চা জানিয়েছে, ২৩ ফেব্রুয়ারি ‘পাগড়ি সম্ভাল দিবস’, ২৪শে ‘দমন বিরোধী দিবস’, ২৬শে ‘যুব কিসান দিবস’, ২৭শে ‘মজদুর কিসান একতা দিবস’ পালন করা হবে। কৃষক নেতা যোগেন্দ্র যাদব জানান, ৮ মার্চ সংসদের অধিবেশন শুরুর কথা মাথায় রেখে আন্দোলনের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করা হবে। মোর্চার কয়েক জন নেতাকে মহারাষ্ট্রের যবৎমালে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে তাঁরা জামিন পান। প্রসঙ্গত, কিসান মোর্চার অন্যতম নেতা দাতার সিংহ আজ প্রয়াত হয়েছেন।
হরিয়ানায় যখন ‘নয়া ঐক্যের’ ছবি, তখন রাজস্থানে কৃষকদের সমর্থনে সভা ঘিরেই কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট হয়ে উঠেছে। শুক্রবার জয়পুরের কাছে বিশাল সভা করেন সচিন পাইলট। সেখানে তাঁর অনুগত ১৭ নেতা ছিলেন। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী অশোক গহলৌতের শিবিরের কাউকে দেখা যায়নি। আবার এক দিন পরে কংগ্রেসের জয়পুর শাখার উদ্যোগে আরও একটি সভা হয়। সেখানে পাইলট-শিবির ছিল গরহাজির।
এটি কি সমান্তরাল রাজনীতি? জল্পনা উড়িয়ে পাইলট বলেন, ‘‘না না, এটা দলের অনুষ্ঠান। আমরা সকলেই কৃষকদের সমর্থনে সভা করব।’’ সভার আয়োজক বেদপ্রকাশ সোলাঙ্কি বলেন, ‘‘আমি গোবিন্দ সিংহ দোতাসেরা (প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি)-কে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু ওঁর একটা বিয়েবাড়ি আছে। আট দিন ধরে মুখ্যমন্ত্রীর অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাইনি।’’ দোতাসেরা বলেছেন, ‘‘দলে কোনও ফাটল নেই।’’