চলছে ফসলের গোড়া পোড়ানো। পঞ্জাবের পাটিয়ালায়। পিটিআই
বছরের পর বছর অক্টোবর-নভেম্বরে দিল্লির আকাশ ধোঁয়াশায় ঢেকে গেলেও কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার কার্যকরী পদক্ষেপ করেনি। অবশেষে সুপ্রিম কোর্ট নিজের হাতে রাশ তুলে নিচ্ছে দেখে দিল্লির বায়ুদূষণ নিয়ে নড়ে বসল কেন্দ্রীয় সরকার।
মোদী সরকার আজ সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছে, দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকায় বায়ু দূষণে রাশ টানতে খুব শীঘ্রই আইন আনা হবে। আগামী চার-পাঁচ দিনের মধ্যেই তার খসড়া চূড়ান্ত হয়ে যাবে। সেই আইনে রাজধানী এলাকায় প্রতি বছর শীতের সময় বায়ুদূষণে লাগাম দিতে একটি স্থায়ী সংস্থা তৈরি হবে। দিল্লির ধোঁয়াশার প্রধান কারণ পঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশের মতো আশপাশের রাজ্যে ফসলের গোড়া পোড়ানোর সমস্যা সমাধানেও পদক্ষেপ করবে এই সংস্থা।
রাজধানীর বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে আনতে সুপ্রিম কোর্ট ১৬ অক্টোবর প্রাক্তন বিচারপতি মদন বি লোকুরকে এক সদস্যের কমিশন হিসেবে নিয়োগ করে। অতিমারির মধ্যে দিল্লির দূষণ নতুন করে উদ্বেগ বাড়িয়েছে। ন্যাশনাল সেন্টার ফর ডিজ়িজ় কন্ট্রোল জানিয়েছে, শীতের সময় দিল্লিতে প্রতিদিন নতুন করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছুঁতে পারে। এমনিতেই এখন প্রতিদিন নতুন কেসের সংখ্যা ৪ হাজার ছাপিয়ে গিয়েছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সমীক্ষা অনুযায়ী, বাতাসে প্রতি ঘনমিটারে এক মাইক্রোগ্রাম দূষণ বাড়লেই কোভিডে মৃত্যুর সংখ্যা ৮% বাড়তে পারে। এই প্রেক্ষাপটেই সুপ্রিম কোর্ট লোকুর কমিশন নিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সূত্রের খবর, কোর্টের এই সিদ্ধান্তেই কেন্দ্রের টনক নড়ে। বিচারবিভাগীয় কমিশনের হাতে ক্ষমতা চলে গেলে কেন্দ্রকেই অস্বস্তিতে পড়তে হবে বলে আশঙ্কা তৈরি হয়। তার পরেই কেন্দ্রীয় পরিবেশমন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর দিল্লি ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলির সঙ্গে বৈঠক করেন। সেই অনুযায়ীই আইন এনে সরকারি সংস্থা তৈরির সিদ্ধান্ত হয়।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তকে আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি শরদ অরবিন্দ বোবডে স্বাগত জানিয়ে মন্তব্য করেছেন, “শহরে সকলেরই দম বন্ধ হয়ে আসছে। এই দূষণে লাগাম পরাতেই হবে।’’ কেন্দ্রের তরফে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা প্রধান বিচারপতিকে অনুরোধ জানান, আদালত যেন লোকুর কমিশন নিয়োগের সিদ্ধান্ত স্থগিত রাখে।
আরও পড়ুন: পঞ্জাবের রাবণ-দহনে কেন মোদীর মুখ! বিতর্ক
দিল্লির এক কিশোর দূষণমুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার অধিকার চেয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিল। তার হয়ে আইনজীবী বিকাশ সিংহ কেন্দ্রের আর্জির পাল্টা যুক্তিতে বলেন, আইন হলেও তা এ বছর কার্যকর হবে না। তত দিন লোকুর কমিশন কাজ করুক। মেহতা মেনে নেন, এখন দূষণ নিয়ন্ত্রণে যে ব্যবস্থা রয়েছে, তা ঠিক মতো কাজ করছে না। কিন্তু তাঁর যুক্তি, প্রয়োজনে কেন্দ্রীয় সরকার দ্রুত আইন কার্যকর করতে অধ্যাদেশও জারি করতে পারে।
সুপ্রিম কোর্ট লোকুর কমিশন নিয়োগ স্থগিতের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কেন্দ্রকেও আইনের খসড়া পেশ করার নির্দেশ দিয়েছে। প্রধান বিচারপতি বলেন, এই পদক্ষেপ জরুরি ছিল। এটা জনস্বার্থের মামলার বিষয়। দূষণে মানুষের দম বন্ধ হয়ে আসার বিষয়।
আরও পড়ুন: তেল-গ্যাসে মোদী চান স্বনির্ভরতা