প্রতীকী ছবি।
কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ও পেনশনভোগীদের জন্য ৪% মহার্ঘ ভাতা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিল কেন্দ্রীয় সরকার। এর ফলে তাঁদের মহার্ঘ ভাতা বেড়ে হল ২১%। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকেই নতুন মহার্ঘ ভাতা কার্যকর হবে। শুক্রবারের এই ঘোষণায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীদের মধ্যে ‘বকেয়া’ ডিএ নিয়ে অসন্তোষ ফের এক বার মাথাচাড়া দিয়েছে। বিরোধী কর্মী সংগঠনগুলির দাবি, কেন্দ্রের এ দিনের ঘোষণার পরে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারি কর্মীদের বকেয়া মহার্ঘভাতার ফারাক হল ২১%। শাসক দলের অন্দরেই বকেয়া ডিএ মেটানোর দাবি উঠতে শুরু করেছে।
কেন্দ্রের এ দিনের সিদ্ধান্তে ৪৮.৩৪ লক্ষ কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারী ও ৬৫.২৬ লক্ষ পেনশনভোগী। এ জন্য প্রতি বছর কেন্দ্রকে ১২ হাজার ৫১০ কোটি টাকার বোঝা বইতে হবে। মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে কেন্দ্রীয় তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী প্রকাশ জাভড়েকর এ দিন বলেন, ‘‘এর ফলে ১ কোটি ১৩ লক্ষের বেশি পরিবার উপকৃত হবে। ২০১৬-তে মোদী সরকার সপ্তম বেতন কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করার পরেও কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা লাভবান হয়েছিলেন। সেই কমিশনের সুপারিশের সূত্র মেনেই মহার্ঘ ভাতা বাড়ানো হল।’’
এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির বক্তব্য, ২০১৬-তে নতুন বেতনক্রম চালু করার পর থেকে কেন্দ্র জুলাই ও জানুয়ারি— বছরে দু’বার করে নির্দিষ্ট হারে মহার্ঘভাতা বাড়িয়েছে। ২০১৬-র ১ জুলাই ২%, ২০১৭-তে জানুয়ারিতে ২% ও জুলাইয়ে ১%, ২০১৮-র জানুয়ারি ও জুলাইয়ে ২% করে, ২০১৯-এর জানুয়ারিতে ৩% ও জুলাইয়ে ৫% ডিএ পেয়েছেন কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা। চলতি বছরে ১ জানুয়ারি থেকে ফের ৪% নিয়ে এ পর্যন্ত ২১% মহার্ঘভাতা পেয়ে গেলেন তাঁরা।
রাজ্য সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির নেতাদের বক্তব্য, রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ষষ্ঠ বেতন কমিশনের অধীনে নতুন হারে বেতন পেতে শুরু করলেও সেই বেতন কমিশনকে ‘নোশনাল’ হিসেবে ধরা হচ্ছেছে। রাজ্য অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স (এআইসিপিআই) অনুযায়ী রীতি মেনে ডিএ বা ডিআর (অবসরপ্রাপ্তদের জন্য) দিলে ২০১৬-র ১ জানুয়ারিতেই তার পরিমাণ হত ১২৫%। সেই ১২৫% ডিএ রাজ্যে সরকারি কর্মচারীরা পেয়েছেন ৩ বছর পরে, ২০১৯ সালের ১ জানুয়ারি। এ রাজ্যে ডিএ-নীতি ঠিকঠাক মানা হলে, ২০১৯-এ যখন রাজ্যের কর্মী বা অবসরপ্রাপ্তেরা ১২৫% ডিএ বা ডিআর পেলেন, তখনই তা হওয়া উচিত ছিল ১৫৪%। পাশাপাশি, নতুন বেতনে এখনও ডিএ-এর কোনও উল্লেখ রাখেনি রাজ্য। তার কোনও ঘোষণাও হয়নি। ফলে নতুন বেতন কমিশনের অধীনে পাওয়া বেতনের উপরে প্রাপ্ত ডিএ-এর পরিমাণ ‘শূন্য’।
ডিএ নিয়ে রাজ্য প্রশাসনিক ট্রাইবুনালে মামলাও চলছে। কনফেডারেশন অব স্টেট গভর্নমেন্টস এমপ্লয়িজের সাধারণ সম্পাদক মলয় মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমরা মনে করি, মামলা চলার কারণে সরকার এই বকেয়া ডিএ দিচ্ছে না। তবে মামলার রায় মেনে বকেয়া সব ডিএ সরকারকে দিতেই হবে।’’ রাজ্য কোঅর্ডিনেশন কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিজয় শংকর সিংহের কথায়, ‘‘মহার্ঘভাতা দয়ার দান নয়। এটা ন্যায্য ও আইনি অধিকার। অথচ আমাদের রাজ্যে সরকার মহার্ঘভাতা ছাড়াই বেতন কমিশন চালু করেছে, যা ভারতের কোথাও হয়নি। রাজ্য সরকারি কর্মীরা পাহাড় প্রমাণ আর্থিক বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এর প্রতিবাদে আগামী সোমবার কলকাতা-সহ রাজ্যের সব ব্লক, মহকুমা, জেলা সদরের প্রতিটি সরকারি দপ্তরে টিফিনের বিরতিতে বিক্ষোভে শামিল হবেন রাজ্য সরকারি কর্মীরা।’’
যদিও তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক সৌম্য বিশ্বাস বলেন, ‘‘কেন্দ্রের ভাবা উচিত, রাজ্যের উপরে বিপুল পরিমাণ ঋণের বোঝা রয়েছে। রাজ্যের হাতে টাকা ছাপানোর মেশিন নেই। বিভিন্ন প্রকল্পে টাকা বন্ধ করছে কেন্দ্র। জনমুখী প্রকল্পগুলি চালানোর পাশাপাশি সেই ঘাটতিও রাজ্যকে পূরণ করতে হচ্ছে। ফলে ইচ্ছা থাকলেও সেই সমতা রাজ্য সরকার আনতে পারছে না।’’ সংগঠনের মেন্টর গ্রুপের সদস্য মনোজ চক্রবর্তী অবশ্য বলেন, ‘‘রাজ্য সরকারের কর্মচারীরা প্রকৃত অর্থে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। পেনশনভোগীদের অবস্থা আরও শোচনীয়। কেন্দ্র এক দিকে সুদ কমাচ্ছে, অন্য দিকে প্রাপ্য বকেয়া ডিএ পাচ্ছেন না রাজ্য সরকারি কর্মী বা অবসরপ্রাপ্তেরা। আশা করি, রাজ্য সরকার গুরুত্ব দিয়ে পরিস্থিতিটা বিবেচনা করবে।’’