প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। —ফাইল চিত্র।
দ্বিতীয় কোভিড প্যাকেজের টাকা কী ভাবে খরচের পরিকল্পনা করা হচ্ছে, রাজ্যগুলির কাছে তা জানতে চাইল কেন্দ্র। পরিকাঠামোগত ভাবে কোথায় খামতি রয়েছে, রাজ্যগুলিকে তা খতিয়ে দেখতে বলার পাশাপাশি সংক্রমণ রুখতে আগাম প্রস্তুতির উপরে আরও এক বার জোর দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। রাজ্যের তথ্যপ্রযুক্তি পরিকাঠামো কতটা প্রস্তুত, তা-ও দেখে নিতে বলা হয়েছে।
মন্ত্রিসভায় সাম্প্রতিক রদবদলের পরেই ২৩,১২৩ কোটি টাকার ‘ইমার্জেন্সি কোভিড-১৯ রেসপন্স প্যাকেজ’-এ অনুমোদন দেয় নরেন্দ্র মোদী সরকার। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানায়, এর মধ্যে ১৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি কেন্দ্র খরচ করবে। ৮ হাজার কোটি টাকা রাজ্যগুলির মধ্যে বণ্টন করা হবে। মূলত সংক্রমণের তৃতীয় ঢেউয়ের কথা ভেবেই এই অর্থে বিশেষ করে শিশুদের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো জোরদার করার কথা বলা হয়েছিল। আজ সেই প্যাকেজের বিষয়েই বিভিন্ন রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব-সহ শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে ভিডিয়ো বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় কর্তারা। সেখানেই রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে তাদের টাকা খরচের প্রস্তাব যত দ্রুত সম্ভব অনুমোদনের জন্য কেন্দ্রকে পাঠাতে বলা হয়। পর্যাপ্ত শয্যা, অক্সিজেন, ওষুধ, পিপিই থেকে শুরু করে নিভৃতবাস কেন্দ্র এবং কোভিড কেয়ার সেন্টারের বন্দোবস্ত রাখার মতো বিষয়গুলিতে আজও জোর দিয়েছে কেন্দ্র। বলা হয়েছে, শিক্ষকদের তত্ত্বাবধানে ডাক্তারির পড়ুয়া, ইন্টার্ন ও রেসিডেন্ট ডাক্তারদের পরিষেবা নেওয়া যেতে পারে মৃদু উপসর্গের রোগীদের টেলি-কনসাল্টেশনের ক্ষেত্রে। রাজ্যগুলি যখন কোভিডের কড়াকড়ি শিথিল করছে, তখন তাদের আজ ফের চিঠি দিয়ে পরীক্ষা, চিকিৎসা, চিহ্নিতকরণ, টিকাকরণ এবং কোভিড বিধি পালনের পাঁচ দফা পদক্ষেপের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ।
আইসিএমআরের এপিডেমিয়োলজি ও সংক্রামক রোগ বিভাগের প্রধান সমীরণ পাণ্ডা মনে করেন, অগস্টের শেষেই আসছে তৃতীয় ঢেউ। তবে তা দ্বিতীয় ঢেউয়ের মতো তীব্র হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাঁর মতে, তৃতীয় ঢেউকে ডেকে আনতে পারে প্রধানত চারটি ঘটনা— জনগোষ্ঠীতে এত দিনে গড়ে ওঠা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া, রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে এড়িয়ে যেতে সক্ষম কোনও ভাইরাস স্ট্রেনের আবির্ভাব, অতি-সংক্রামক স্ট্রেনের আবির্ভাব এবং রাজ্যগুলির তরফে নির্ধারিত সময়ের আগেই কড়াকড়ি তুলে নেওয়া। তৃতীয় ঢেউয়ের প্রেক্ষিতে করোনার ডেল্টা এবং ডেল্টা প্লাস স্ট্রেন (এওয়াই-১) নিয়ে বাড়তি মাথাব্যথা রয়েছে বিজ্ঞানীদের। তবে ভাইরাসের জিনোম সিকোন্সিংয়ে যুক্ত সরকারি প্যানেল ‘ইনসাকগ’-এর মতে, এওয়াই-১ এবং এওয়াই-২ নামে চিহ্নিত দু’টি প্রজাতি মূল ডেল্টা স্ট্রেনের থেকে অধিক সংক্রামক হওয়ার সম্ভাবনা কম। জুনে সারা দেশে যত নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স হয়েছে, তার মধ্যে এই দু’টি স্ট্রেনের উপস্থিতি এক শতাংশেরও কম বলে দেখা যাচ্ছে। আবার কানাডার একটি সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছে, হাসপাতালে ভর্তি কোভিড রোগীদের মৃত্যুর ঝুঁকি কমতে পারে হেপারিনের মতো রক্ত তরল করার ওষুধ।
টিকার অভাবে আজ দক্ষিণ দিল্লির ২১টি টিকাকরণ কেন্দ্র বন্ধ ছিল। এ দিকে পঞ্চাশোর্ধ্বদের ক্ষেত্রে কোভিশিল্ডের দু’টি ডোজ়ের ব্যবধান কমানোর একটি আর্জি আজ খারিজ করে দিয়েছে দিল্লি হাই কোর্ট। টিকার অভাবের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে রাজ্যগুলিকেই দুষেছিলেন কেন্দ্র স্বাস্থ্যমন্ত্রী মনসুখ মাণ্ডবিয়া। সেই প্রসঙ্গে কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম আজ বলেন, ‘‘নতুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী তাঁর পূর্বসূরি (হর্ষ বর্ধন)-র পথেই চলছেন।’’