—প্রতীকী চিত্র।
আগামী জুলাইয়ের মধ্যে ২৫ কোটি ভারতীয়কে করোনার টিকা দেওয়াই লক্ষ্য। অক্টোবরের শুরুতে এমনটাই জানিয়েছিল কেন্দ্র। সেই লক্ষ্যে পৌঁছতেই এ বার তোড়জোড় শুরু। টিকাকরণ প্রক্রিয়া যাতে সুষ্ঠ ভাবে চালানো যায়, সে জন্য সমস্ত রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে বিশেষ কমিটি গড়ার নির্দেশ দেওয়া হল। টিকাকরণ শুরু করতে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করবে ওই কমিটি। শুধু তাই নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ার যুগে করোনা টিকা নিয়ে ভুয়ো খবর ছড়ালে সাধারণ মানুষ তা নিতে উৎসাহ না-ও দেখাতে পারেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালিয়ে গোড়াতেই যাতে এই ধরনের ভুয়ো খবর সরিয়ে ফেলা যায়, সেই দায়িত্বও সামলাবে ওই কমিটি।
ভারতে ‘স্পুটনিক ভি’র ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালাতে ইতিমধ্যেই রাশিয়াকে অনুমতি দিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। আগামী বছরের দ্বিতীয় অথবা তৃতীয় ত্রৈমাসিকে অক্সফোর্ডের তৈরি টিকাও ভারতের বাজারে এসে পৌঁছবে বলে ইতিমধ্যেই সিরাম ইনস্টিটিউটের তরফে জানানো হয়েছে। নয়াদিল্লি সূত্রে জানা গিয়েচে, টিকা হাতে এলে প্রথমে স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরই তা প্রয়োগ করা হবে। তার প্রস্তুতির উপর নজরদারি চালানোর জন্যই রাজ্য এবং জেলাস্তরে বিশেষ কমিটি তৈরির নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কোন পদ্ধতিতে টিকাকরণ শুরু হবে, টিকা মজুতের পক্ষে সহায়ক পরিবেশ রয়েছে কি না, টিকাকরণের পক্ষে কী কী বাধা আসতে পারে, তা পর্যবেক্ষণ করে সুরাহা বাতলে দেবে ওই কমিটি।
এ নিয়ে রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে ইতিমধ্যেই চিঠি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যসচিব রাজেশ ভূষণ। তাতে বলা হয়েছে, প্রত্যেক রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে তিনটি স্তরে কমিটি গড়তে হবে। মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে থাকবে স্টেট স্টিয়ারিং কমিটি (এসএসসি), অতিরিক্ত মুখ্যসচিব অথবা প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি (স্বাস্থ্য)-র নেতৃত্বে থাকবে স্টেট টাস্কফোর্স (এসটিএফ) এবং জেলাশাসকের নেতৃত্বে থাকবে ডিস্ট্রিক্ট টাস্ক ফোর্স (ডিটিএফ)। এগুলো গঠন করতে হবে। এসএসসি-র দেওয়া শর্তাবলী এক মাসের মধ্যে পূরণ করতে হবে, এসটিএফএ-র নির্দেশাবলী পালন করতে হবে দু’সপ্তাহের মধ্যে এবং এক সপ্তাহের মধ্যে ডিটিএফ-এর শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।
আরও পড়ুন: শিবসেনার হাত ধরে ফের রাজনীতিতে ঊর্মিলা, বিধান পরিষদে মনোনীত করছেন উদ্ধব
কোন কমিটি কিসের দায়িত্বে থাকবে, তা-ও আলাদা ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে ওই চিঠিতে। বলা হয়েছে, প্রত্যেক নাগরিকের কাছে করোনা টিকা পৌঁছচ্ছে কি না, টিকাবণ্টনের দায়িত্বে থাকা সমস্ত বিভাগ সক্রিয় ভাবে টিকাকরণে অংশ নিচ্ছে কি না এবং সমস্ত গোষ্ঠী এবং সম্প্রদায়ের মানুষ সমান ভাবে টিকাগ্রহণে অংশ নিচ্ছেন (সরকারি পরিভাষায় জন ভাগীদারী) কি না, তা সুনিশ্চিত করার দায়িত্ব এসএসসি-র। যে সমস্ত জেলা, ব্লক এবং ওয়ার্ড ভাল কাজ করবে, তাদের পুরস্কৃতও করা হবে।
টিকাকরণের জন্য বরাদ্দ অর্থের সঠিক বণ্টন হচ্ছে কি না, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্দিষ্ট জায়গায় টিকা পৌঁছচ্ছে কি না, তা দেখার দায়িত্ব এসটিএফ-এর। সরকারি ও বেসরকারি ক্ষেত্রে টিকাপ্রয়োগকারীদের শনাক্ত করার দায়িত্বও তাঁদের। শুধু তাই নয়, প্রথম দফায় স্বাস্থ্যকর্মীদের উপরই টিকা প্রয়োগ করা হবে। গোটা প্রক্রিয়ার পরিকল্পনার দায়িত্ব এসটিএফ-এর। এ ছাড়াও টিকাকরণের জন্য যে জায়গা ঠিক করা হবে, সেখানে যাতে কোনও রকম ঝামেলা না বাধে, অযথা ভিড় না জমে, তা দেখভালের দায়িত্বও এসটিএফ-এর।
আরও পড়ুন: কমল নাথ আর ‘তারকা প্রচারক’ নন, জানিয়ে দিল নির্বাচন কমিশন
কোথায়, কত জন নাগরিকের উপর করোনা টিকা প্রয়োগ করা হচ্ছে, যাঁরা টিকাকরণের দায়িত্বে রয়েছেন তাঁরা উপযুক্ত প্রশিক্ষণ পেয়েছেন কি না, কোনও রকম বাধা-বিঘ্ন ছাড়া সর্বত্র টিকা পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে কি না, এ সবের দায়িত্বে থাকবে ডিটিএফ। কোথায় কত টিকার প্রয়োজন পড়ছে, কে তার দায়িত্বে থাকবেন, এ সব ঠিক করার দায়িত্বও তাদের। এ ছাড়া গুজবের জেরে টিকাকরণ প্রক্রিয়া যাতে ব্যাহত না হয়, সাধারণ মানুষকে টিকাগ্রহণে উৎসাহিত করাও তাদের দায়িত্বের মধ্যেও পড়বে। বরাদ্দ অর্থ সময় মতো নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছচ্ছে কি না, সরকারি উদ্যোগে সাধারণ মানুষের কী প্রতিক্রিয়া, তা নিয়ে রিপোর্ট জমা দিতে হবে তাদের।