কর্নাটকের ভোটে তীব্র লড়াই হতে পারে কংগ্রেস এবং বিজেপির। ছবি: পিটিআই।
যুযুধান রাজনৈতিক দলগুলির তুমুল ব্যস্ততার মধ্যে সোমবার বিকেলে কর্নাটকে বিধানসভা ভোটের প্রচারপর্ব শেষ হল। আগামী বুধবার (১০ মার্চ) সে রাজ্যের ২২৪টি আসনের সব ক’টিতেই ভোটগ্রহণ হবে। গণনা আগামী শনিবার (১৩ মার্চ)।
ইতিহাস বলছে আশির দশকে প্রয়াত রামকৃষ্ণ হেগড়ের নেতৃত্বাধীন জনতা দল উপর্যুপরি দু’টি বিধানসভা ভোটে জিতে ক্ষমতা দখল করেছিল। তার পর থেকে প্রতি ৫ বছর অন্তর ক্ষমতার পরিবর্তন দেখেছে দক্ষিণ ভারতের ওই রাজ্য। এ বার সেই ধারা বদলাবে বলে ক্ষমতাসীন বিজেপির দাবি। অন্য দিকে, প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস গত ৪ দশকের ধারা মেনে ক্ষমতায় ফেরার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী।
২২৪ আসনের কর্নাটক বিধানসভা সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য প্রয়োজন ১১৩ বিধায়ক। ঘটনাচক্রে, ২০০৭ সাল থেকে ৪ দফায় ক্ষমতা দখল করলেও কখনওই সেই সংখ্যা ছুঁতে পারেনি পদ্ম-শিবির। তাদের ৪ মুখ্যমন্ত্রীর মধ্যে কেউই ৪ বছরের মেয়াদ পূর্ণ করতে পারেননি। এর মধ্যে ২০০৮-এর নির্বাচনে বিজেপির ফল সবচেয়ে ভাল হয়েছিল। তারা জিতেছিল ১১০টি আসনে।
২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে ১০৪টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস ৮০ এবং প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার জেডি(এস) ৩৭টিতে জেতে। কংগ্রেসের সঙ্গে ভোট পরবর্তী সমঝোতা করে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন দেবগৌড়া-পুত্র কুমারস্বামী। কিন্তু ২০১৯-এর জুলাই মাসে দু’দলের দেড় ডজনেরও বেশি বিধায়ক ভাঙিয়ে ক্ষমতা দখল করেছিল বিজেপি।
এ বার কয়েকটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত, কংগ্রেস নতুন বিধানসভায় বৃহত্তম দল হতে পারে। হিজাব বিতর্ক বা টিপু সুলতান প্রসঙ্গ ছাপিয়ে কন্নড় ভোটারদের মধ্যে গত সাড়ে ৩ বছর ধরে বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ধারাবাহিক ভাবে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগগুলি বেশি প্রভাব ফেলতে পারে বলেও কয়েকটি জনমত সমীক্ষার ইঙ্গিত। এই পরিস্থিতিতে প্রচারের শেষবেলায় মরিয়া বিজেপি মেরুকরণের চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।
গত মঙ্গলবার কংগ্রেসের নির্বাচনী ইস্তাহারে কর্নাটকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য সঙ্ঘ পরিবারের সংগঠন বজরং দল এবং কট্টরপন্থী মুসলিম সংগঠন পিএফআইয়ের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। তার পর থেকেই ওই প্রসঙ্গে ধারাবাহিক ভাবে কংগ্রেসকে নিশানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রতিটি সভায় নিয়ম করে ‘জয় বজরংবলী’ স্লোগান দিয়ে বক্তৃতা শুরু করেছেন।
কংগ্রেসের অভিযোগ, হার বাঁচাতে মরিয়া মোদী উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবেই বিতর্কিত সিনেমা ‘দ্য কেরালা স্টোরি’-র প্রসঙ্গ তুলেছেন। প্রচারের শেষপর্বে সোনিয়া গান্ধী, রাহুল গান্ধীর নাম করে দেশবিরোধী বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তি ‘টুকড়ে টুকড়ে গ্যাং’-এর সঙ্গে কংগ্রেসের ‘যোগসূত্রের’ অভিযোগ তুলেছেন। সেই সঙ্গে কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গের রাজ্যে ভোটের প্রচারে বার বার প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ব্যক্তিগত আক্রমণের অভিযোগ তুলেছেন কংগ্রেসের বিরুদ্ধে।
সাধারণ ভাবে কর্নাটকে ভোটে রাজনৈতিক হিংসার অভিযোগ বিশেষ ওঠে না। কিন্তু ভোট কিনতে টাকা এবং মদ বিলির অভিযোগ মেলে ভুরি ভুরি। এই পরিস্থিতিতে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে গত সপ্তাহ থেকে গোয়া-সহ কয়েকটি পড়শি রাজ্যে কর্নাটক সীমানাবর্তী জেলাগুলিতে মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে। পাশাপাশি নিয়ম করে রাস্তাগুলিতে ‘নাকা তল্লাশি’ অভিযান চলছে। এ পর্যন্ত ধারাবাহিক অভিযানে ৩৭৫ কোটি হিসাব বহির্ভূত টাকা উদ্ধার হয়েছে বলে জানিয়েছে কমিশন।