কর্মবিরতি এবং বিক্ষোভ হলেও সোমবার খাদ্য ভবনে বড় কোনও অশান্তি হল না। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
সোমবার খাদ্যমন্ত্রী এবং সচিবকে দফতরে ঢুকতে তারা বাধা দিতে পারে বলে ‘খবর’ ছিল। ‘প্রস্তুত’ ছিল প্রশাসন এবং সরকারপন্থী কর্মচারী সংগঠনও। কিন্তু শেষ পর্যন্ত অশান্তির পথে হাঁটল না সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। কর্মবিরতি এবং ধর্নার মাধ্যমেই সোমবার প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ রাখলেন বর্ধিত মহার্ঘ ভাতা (ডিএ) এবং দুই কর্মচারীর বদলির নির্দেশ প্রত্যাহারের দাবিতে খাদ্য ভবনে আন্দোলনকারী সরকারি কর্মচারী সংগঠনের সমর্থকেরা।
আন্দোলনকারীদের একাংশের সূত্রে বার্তা ছিল, কর্মবিরতির সীমারেখা ছাড়িয়ে বিক্ষোভ কর্মসূচিকে নতুন মাত্রা দিতে সক্রিয় হয়েছেন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারা। তারই প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে সোমবার খাদ্য ভবন ‘অচল’ করার পরিকল্পনা হয়েছে বলেও ‘খবর’ মিলেছিল। সেই সূত্রে শনিবার প্রকাশ্যে এসেছিল আন্দোলনকারীদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপের কিছু মেসেজ (যার সত্যতা আনন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি)। তাতে সোমবার ‘জঙ্গি আন্দোলনের’ ইঙ্গিত ছিল।
সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের তরফে অবশ্য হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজগুলির সত্যতা স্বীকার করা হয়নি। খাদ্য দফতরের আন্দোলনে শামিল অভিজিৎ রায় শনিবার জানিয়েছিলেন, তাঁরা কোনও অশান্তির পক্ষপাতী নন। সোমবার তিনি বলেন, ‘‘আমি তো আগেই বলেছিলাম, আমাদের আন্দোলনকে কালিমালিপ্ত করার জন্য ওই হোয়াট্সঅ্যাপ মেসেজগুলি বাজারে ছাড়া হয়েছে। আমরা সোমবারও শান্তিপূর্ণ কর্মবিরতি পালন করেছি। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির সময় অবস্থান করেছি। দাবি তুলেছি, খাদ্য ভবনের দুই কর্মচারীকে বদলির নির্দেশ অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি খাদ্য এবং সরবরাহ দফতর নির্দেশিকা জারি করে খাদ্য ভবনের দুই কর্মী সৌমেন্দ্র নারায়ণ বসু এবং দেবু সিংহকে বদলি করছে। ঘটনাচক্রে, তাঁরা দু’জনেই রয়েছেন ডিএ আন্দোলনের প্রথম সারিতে। রাজ্য প্রশাসনের তরফে সৌমেন্দ্রকে পূর্ব বর্ধমান এবং দেবুকে পশ্চিম বর্ধমানে বদলি করা হয়েছে। খাদ্য ভবনের আন্দোলনকারীদের একটি হোয়াটস্অ্যাপ গ্রুপে সেই বদলির প্রসঙ্গের উল্লেখ করে আন্দোলনকে ‘জঙ্গি’ করার সওয়াল করা হয়েছিল বলে অভিযোগ। শুক্রবার থেকে ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের বেশ কিছু মেসেজ কর্মচারীদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছিল।
হোয়াটসঅ্যাপে ওই নির্দেশিকা এবং খাদ্য ভবনে সোমবারের পরিস্থিতি সম্পর্কে রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়ক প্রতাপ নায়েক বলেন, ‘‘সংগ্রামী যৌথ মঞ্চের নেতারাই ওই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপটি চালান। যাচাই করে দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যাবে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর মন্তব্য, ‘‘আনন্দবাজার অনলাইন অশান্তি বাধানোর ছক আগেই প্রকাশ্যে আনায় সোমবার আন্দোলনকারীরা বিরত ছিলেন। তবে আমরা বিষয়টি নজরে রেখেছি। খাদ্য ও সরবরাহ দফতরের অধিকাংশ কর্মচারী সোমবার কাজে যোগ দিয়েছিলেন। মধ্যাহ্নভোজনের সময় খাদ্যশ্রী ভবনের সামনে সমবেত হয়ে তাঁরা স্থির করেছেন, খাদ্য ভবনে কোনও অশান্তি বাধাতে দেবেন না।’’ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে খাদ্য ভবনকে অচল করার ছক কষা হয়েছে বলেও রাজ্য সরকারি কর্মচারী ফেডারেশনের আহ্বায়কের অভিযোগ।
ডিএ আন্দোলনকারী দুই কর্মচারীর বদলি ঘিরে বৃহস্পতিবার উত্তেজনা ছড়িয়েছিল খাদ্য ভবনে। তার পরেই হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপে ওই মেসেজগুলি করা হয় বলে অভিযোগ। ‘সোমবারের পরিকল্পনা’ হিসাবে সেখানে লেখা হয়— ‘ডিআর এবং ডিপিএস-কে (ডিরেক্টর পর্যায়ের আধিকারিক) তাঁদের চেম্বারে আটকে রেখে খাদ্যশ্রী ভবনের যে ক’টি ঢোকা-বেরোনোর পথ আছে, সেগুলি বন্ধ করে দিতে হবে। মন্ত্রী, সচিব-সহ অন্য আধিকারিকবৃন্দ যাতে ঢুকতে না পারেন, সেই ব্যবস্থা করলে প্রচার বেশি হবে।’
নিরাপত্তা নজরদারি এড়িয়ে সেই পরিকল্পনা কার্যকরের নির্দেশনামায় বলা হয়— ‘‘ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে কাজটা করতে হবে। প্রত্যেক দলে কমপক্ষে ৩০ জন লোক দরকার। বাকি বেশ কিছু লোক সব ক’টি দলের সঙ্গে যোগাযোগ বজায় রাখবে। জল ও খাবার পৌঁছে দেবে এবং সময়ানুযায়ী গৃহীত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে।’’ গ্রুপে একটি মেসেজে লেখা হয়, ‘‘এমন শিক্ষা দিতে হবে যাতে ভবিষ্যতে বদলির অর্ডার (নির্দেশিকা) বার করতে ভয় পায়।’’ তবে সোমবার আন্দোলনকারী কর্মীরা কর্মবিরতি পালন করলেও কোনও অশান্তি হয়নি খাদ্য ভবনে।
ওই কর্মীদের বদলির বিষয়ে প্রশ্ন করায় শনিবার খাদ্য প্রতিমন্ত্রী জ্যোৎস্না মান্ডি আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘‘যাঁদের বদলি করা হয়েছে, তাঁদের পদোন্নতি দিয়েই বদলি করা হয়েছে। সরকারি চাকরি করার অন্যতম শর্ত হচ্ছে বদলি। খাদ্য দফতরের যে অফিসগুলিতে কর্মী বা আধিকারিকের অপ্রতুলতা থাকে, সেখানে কাজে গতি আনতে কর্মী ও আধিকারিকদের পাঠানো হয়। সেই প্রক্রিয়া মেনেই এই বদলি হয়েছে।’’