—প্রতীকী ছবি।
পারস্পরিক অবিশ্বাস এখনও কাটেনি। কিন্তু বিপর্যয় ও দুর্গতি মিলিয়ে দিয়েছে দুই প্রতিপক্ষকেই।
এক সপ্তাহের বেশি মণিপুরে কাটিয়ে কুকি ও মেইতেইদের বেশ কয়েকটি শিবিরের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখে দুর্গতদের চিকিৎসার কাজ সেরে এটাই বলছেন সদ্য কলকাতায় ফেরা মণিপুর পিস মেডিক্যাল মিশনের সদস্যেরা। মণিপুরে গোষ্ঠী সংঘর্ষ শুরুর পরে বাংলা থেকে এই প্রথম দলটি সে রাজ্যে গিয়েছিল।
বহু কাঠখড় পুড়িয়ে আইজ়ল থেকে সড়কপথে চূড়াচাঁদপুর এবং পরে মৈরাং ও ইম্ফলে পৌঁছে কুকি এবং মেইতেইদের মধ্যে সব মিলিয়ে ৮টি স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করেছিলেন বাংলার ডাক্তারেরা। প্রবীণ চিকিৎসক সুমিতা দাস বা আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ফাইনাল ইয়ারের পড়ুয়া তিয়াশা করেরা বলছিলেন, ‘‘দু’টি শিবিরেই সর্দি, কাশি, জ্বর, কনজাংটিভাইটিস ইত্যাদি নানা সংক্রামক রোগের ছড়াছড়ি। কিন্তু ঘরছাড়া উদ্বাস্তু নরনারীর মানসিক ক্ষতটাই সব থেকে তীব্র। ১৬-১৭র তরুণ থেকে পঞ্চাশোত্তীর্ণ— সবাই আতঙ্কে দিশাহারা।’’
ডাক্তারেরা দেখেছেন, কুকি-মা সন্তান কেঁদে উঠলেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছেন। আর এক জন মহিলা মাঝে মধ্যেই হিংস্র জানোয়ারের কাল্পনিক গর্জন শুনতে পাচ্ছেন, ভয়ে সিঁটিয়ে আছেন। নাগাড়ে ‘কাউন্সেলিং’ ছাড়া সারা জীবনের মতো তাঁরা মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা ডাক্তারদের।
চিকিৎসা মিশনের তরফে মানবাধিকার কর্মী বিপ্লব ভট্টাচার্য বলছেন, ‘‘আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী উদ্বাস্তু শিবির পরিচর্যার কোনও নিয়মই মণিপুরে মানা হচ্ছে না। চিকিৎসা ব্যবস্থা বা ছোটদের স্কুল— কিছুই নেই। স্কুল চললে অবস্থা একটু ভাল হত।’’ চিকিৎসা ও সেবা দলটির আক্ষেপ, অশান্তি বন্ধ করতে সদর্থক উদ্যোগ তত দেখা যাচ্ছে না।
কুকি এবং মেইতেই এলাকার মধ্যে অলিখিত সীমান্ত। নানা সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, মণিপুরে কুকি, মেইতেই মিলিয়ে উদ্বাস্তু প্রায় ৪০ হাজারেরও বেশি। অচলাবস্থার জেরে দু’টি জায়গাতেই রাজ্য এবং কেন্দ্রের প্রতি ক্ষোভ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন মণিপুর থেকে ফেরা ডাক্তার, সমাজকর্মীরা।
এ দিকে, পাল্লেলের সংঘর্ষে ৩ জনের মৃত্যুর রেশ না কাটতেই ফের মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে গাড়িতে আসা সশস্ত্র মেইতেই বাহিনী ইরেং ও করম ভাইফেই গ্রামের মধ্যবর্তী অংশে হামলা চালিয়েছে। তারা গ্রামবাসীদের উপরে এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়ে পালায় বলে অভিযোগ। ঘটনাস্থলেই মারা যান এন লৌভুম, এস তুবই ও এন কিপগেন নামে তিন জন।
কুকিদের দাবি, নিছক সশস্ত্র মেইতেই গ্রামরক্ষী নয়, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা এই ঘটনা ঘটিয়েছে। সেনা সূত্রেও জানানো হয়, পাল্লেলে সাম্প্রতিক হিংসার ঘটনায় মেইতেইদের মধ্যে মিশে থাকা জঙ্গিরাই যৌথ বাহিনীকে লক্ষ্য করে গুলি করেছিল। গুলিবিদ্ধ হন লেফটেন্যান্ট কর্নেল রমন ত্যাগী। সেনা সূত্রে দাবি, বেশ কয়েক বছর চুপ থাকা মণিপুরি জঙ্গি সংগঠন পিএলএ, ইউএনএলএফ, প্রিপাক, কেওয়াইকেএল সংগঠনগুলি সাম্প্রতিক সংঘর্ষের সুযোগে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে।