(বাঁ দিকে) গুজরাতের সেই মেডিক্যাল কলেজ। মৃত ছাত্র (ডান দিকে)। — ফাইল চিত্র।
গুজরাতের মেডিক্যাল কলেজে ডাক্তারি পড়ুয়ার মৃত্যু ঘিরে রহস্য এখনও বহাল। সিনিয়র ছাত্রদের বিরুদ্ধে ‘র্যাগিং’য়ের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার জেরে বিধ্বস্ত মৃত ছাত্রের পরিবার। ভাইয়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন ছাত্রের দাদা, ‘‘এরা মানুষ? এরা কেমন ডাক্তার হবে?’’
মৃতের দাদা গৌরব মেথানিয়া সংবাদমাধ্যমকে জানান, শনিবার রাতে ভাইয়ের সঙ্গে শেষ বার কথা হয়েছিল তাঁর। এর পর গভীর রাতে একটি ফোন আসে। অপর প্রান্ত থেকে অপরিচিত কণ্ঠ জানায়, অনিলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাঁরা যেন দ্রুত হাসপাতালে পৌঁছে যান। ধরপুরের ওই মেডিক্যাল কলেজ থেকে প্রায় ১৫০ কিলোমিটার দূরে সুরেন্দ্রনগর জেলায় থাকে অনিলের পরিবার। সেই দূরত্ব পেরিয়ে ভোর ৪টের সময় তাঁরা যখন হাসপাতালে পৌঁছন, তত ক্ষণে মৃত্যু হয়েছে অনিলের।
পড়াশোনায় বরাবরই ভাল ছিলেন অনিল। আশপাশের দু’তিনটি গ্রামের সকলে এক ডাকে চিনতেন তাঁকে। অনিলের পরিবারে এর আগে কেউ কখনও এমবিবিএস পড়েননি। বংশের প্রথম ‘ডাক্তার’, তাই পরিবারের অনেক স্বপ্নও ছিল অনিলকে ঘিরে। ‘‘কিন্তু অকালেই শেষ হয়ে গেল সব’’, দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন দাদা।
এখন কী চায় ওই ছাত্রের পরিবার? গৌরবের কথায়, ‘‘চাই দোষীদের কঠোর সাজা হোক। যাবজ্জীবন কারাদণ্ড হোক। কিন্তু যারা এমন কাজ করল, যাদের এমন অপরাধী মানসিকতা, তারা ডাক্তার হবে? তারা ভবিষ্যতে দেশের উন্নতিসাধন করবে, না ক্ষতি করবে? কেমন ডাক্তার হবে এরা? কঠোর সাজা হওয়ার পাশাপাশি তাদের পড়াশোনাও বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’’
শনিবার গুজরাতের পাটন জেলার ধরপুরের জিএমইআরএস মেডিক্যাল কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র অনিল নটবরভাই মেথানিয়ার মৃত্যু হয়। অভিযোগ ওঠে, হস্টেলে ‘র্যাগিং’য়ের শিকার হয়েই মৃত্যু হয়েছে অনিলের। শনিবার রাতে কলেজের কয়েক জন সিনিয়র পড়ুয়া প্রথম বর্ষের কয়েক জন ছাত্রকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন অনিলও। এর পর তিন ঘণ্টা ঠায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয় তাঁদের। এক বারের জন্যও বসতে দেওয়া হয়নি। দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থাতেই নানা ভাবে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের প্রশ্ন করতে থাকেন সিনিয়রেরা। সে সময়েই অনিল জ্ঞান হারান বলে দাবি। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছু ক্ষণ পর মৃত্যু হয় তাঁর। সেই ঘটনার কথা প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে যায়। পড়ুয়া-মৃত্যুর ঘটনায় মঙ্গলবার ১৫ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তবে, এখনও তদন্ত চলছে। ধৃত ১৫ জন ছাড়াও আর কে কে এই ঘটনার নেপথ্যে আছেন, তার খোঁজ শুরু হয়েছে।