প্রতীকী ছবি।
ফুসফুস প্রতিস্থাপনের ঝুঁকি কমতে চলেছে। একইসঙ্গে প্রতিস্থাপনের জন্য সংগ্রহ করা ফুসফুস নষ্টও হবে কম। ফলে প্রতিস্থাপনে ইচ্ছুক রোগীরা সময়ে আরও বেশি ফুসফুসের যোগান পাবেন। এমনই দাবি হায়দরাবাদের কৃষ্ণা ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেসেসের। তারা জানিয়েছে, এক বিশেষ প্রযুক্তিতে প্রতিস্থাপনের অঙ্গ দীর্ঘক্ষণ ভাল রাখার প্রযুক্তি এসেছে তাদের হাতে। যা ব্যবহার করে ইতিমধ্যেই একটি সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপনও করেছে তারা। এই প্রথম ভারতে এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সফল ফুসফুস প্রতিস্থাপন সম্ভব হল বলেও জানিয়েছে হায়দরাবাদের সংস্থাটি।
দাতার দেহ থেকে নেওয়া ফুসফুস গ্রহীতার শরীর গ্রহণ করবে কি না, তা নিয়ে এতদিন অনেকটা অনিশ্চয়তা থাকত। তবে হায়দরাবাদে সম্প্রতি নতুন প্রযুক্তির সাহায্যে ‘শ্বাস-নেওয়া ফুসফুস’ দাতার শরীর থেকে নিয়ে সফল ভাবে প্রতিস্থাপন করা গিয়েছে রোগীর শরীরে। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন এই প্রক্রিয়ায় অস্ত্রোপচারের ঝুঁকি যেমন কমানো যাবে তেমনই প্রতিস্থাপনের পর রোগীর সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও বাড়বে।
এর আগে এই প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র আমেরিকা এবং কানাডাতেই চালু ছিল । তবে এ বার ভারতেও ব্যবহার করা যাবে। করোনা অতিমারির আবহে যখন ক্ষতিগ্রস্ত ফুসফুসের চিকিৎসা বা প্রতিস্থাপনের জন্য লাইন ক্রমেই লম্বা হচ্ছে, তখন এই নতুন প্রক্রিয়া অনেকটা দিশা দেখাবে বলেও মনে করছেন চিকিৎসকদের একাংশ।
চিকিৎসকরা এ ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব আরোপ করছেন অঙ্গ নষ্ট হওয়ার বিষয়টিতে। দাতার শরীর থেকে ফুসফুস সংগ্রহ করার পর অনেক সময়েই সংক্রমণের কারণে বা ভিতরের কোনও অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাওয়ার ফলে প্রতিস্থাপনের পরও তা কাজ করত না। এতে যে পরিমাণ ফুসফুস প্রতিস্থাপনের জন্য হাতে আসত, তার অর্ধেকই নষ্ট হয়ে যেত।
নতুন প্রক্রিয়ায় দাতার থেকে ফুসফুস নেওয়ার পর তা ভালে রাখার জন্য অনেকটা সময় পাওয়া যাবে। এই সময় দেবে একটি বিশেষ যন্ত্র। যন্ত্রটির নাম অরগ্যান রিকন্ডিশনিং বক্স। ফুসফুস সংগ্রহের পর এর ভিতর সেটিকে রাখা হলে বিভিন্ন পুষ্টি তরল, অ্যান্টিবায়োটিক এবং অন্যান্য জরুরি তরলের সাহায্যে অঙ্গ নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা কমানো যাবে। একই সঙ্গে ভেন্টিলেশনের সাহায্যে কৃত্রিম ভাবে শ্বাস নেওয়ানো হবে ফুসফুসটিকে। বাড়ানো হবে ফুসফুসের কাজ করার ক্ষমতাও। প্রয়োজনে ফুসফুসটি ভালো আছে কি না তা পরীক্ষা করেও দেখে নেওয়া যাবে। এই পুরো বিষয়টি চিকিৎসকদের অস্ত্রোপচারের প্রস্তুতির জন্য কিছুটা বেশি সময় দেবে।
ফলে যখন প্রতিস্থাপন হবে তখন ফুসফুসটি অত্যন্ত ভাল অবস্থায় থাকবে। রোগীর শরীর তা সহজে গ্রহণ করতে পারবে।
শনিবার হায়দরাবাদের কৃষ্ণা ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস-এ এই ধরনের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে। পুরো বিষয়টির নেতৃত্বে ছিলেন যিনি, সেই চিকিৎসক সন্দীপ আতাওয়ার জানিয়েছেন প্রযুক্তিটিকে কাঙ্ক্ষিত নৈপুণ্যের জায়গায় নিয়ে যেতে অতিরিক্ত ছ’মাস ব্যয় করা হয়েছে। তাঁর দাবি এই প্রযুক্তি প্রতিস্থাপনের অঙ্গ নষ্ট হওয়ার প্রবণতা অন্তত ৩০ শতাংশ কমাবে।