শিল্পী কার্লোস লাতুফ (বাঁ-দিকে)। কার্লোসের আঁকা কার্টুন হাতে পার্ক সার্কাসে। —নিজস্ব চিত্র
সৌদি সাংবাদিক জামাল খাশোগি খুন থেকে শুরু করে ব্রেক্সিট, সিরিয়া, ইরান, প্যালেস্তাইনের হাল কিংবা ডোনাল্ড ট্রাম্পের গ্রিনল্যান্ড কিনতে চাওয়া নিয়ে গত কয়েক বছরে লাগাতার ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন ব্রাজিলের শিল্পী কার্লোস লাতুফ। হলোকস্ট নিয়ে আঁকা তাঁর কার্টুন-সিরিজ গত বছর আন্তর্জাতিক সম্মানও দিয়েছে তাঁকে। এ বছর, ২৫ জানুয়ারি লাতুফ আঁকলেন ‘শাহিন বাগের মা’— সংবিধান কোলে ‘আগ্রাসন’ রুখছেন মোদী-শাহের। ক্যানভাসের কোণে বড় বড় করে লেখা ‘নো সিএএ-এনপিআর-এনআরসি’। ফেসবুকে সেই কার্টুন পোস্ট করে হিন্দিতেই লিখেছিলেন— শত্রুদের হাত থেকে সংবিধান রক্ষার এই লড়াই চলবেই। দিল্লির সঙ্গে কলকাতার মিছিলেও দেখা গিয়েছে লাতুফের আঁকা সেই কার্টুন হাতে দাঁড়িয়ে কলেজপড়ুয়ারা।
ইজ়রায়েল-প্যালেস্তাইন-ইরান ফেলে হঠাৎ তাঁর এই ‘ভারত দর্শন’ কেন? জবাবি ই-মেলে ব্রাজিলের শিল্পী লিখলেন, ‘‘নাগরিকত্ব দেওয়ার নামে শরণার্থীদের মধ্যে বিভাজন তৈরি করে, বিশেষত সংখ্যালঘুদের হেনস্থা করার ব্যাপারে আপনাদের প্রধানমন্ত্রী তো দেখছি মার্কিন প্রেসিডেন্টকেই হুবহু নকল করছেন! এই অন্যায় দেখে চুপ থাকা গেল না।’’ ‘প্যালেস্তাইনি মা’-এর শিল্পীর কার্টুন খাতায় তাই এ বার ‘শাহিন বাগের মা।’
লাতুফ যখন এই ব্যঙ্গচিত্র নিজের ফেসবুক ওয়ালে পোস্ট করছেন, ঘটনাচক্রে তাঁর নিজের দেশেরই প্রেসিডেন্ট তখন দিল্লিতে। যাঁকে বিশ্বের একটা বড় অংশ ‘ব্রাজিলীয় ট্রাম্প’ বলে চেনে, সেই জাইর বোলসোনারোকে কেন প্রজাতন্ত্র দিবসের অতিথি হিসেবে ডাকা হবে— তা নিয়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল যন্তরমন্তরে। সেই প্রসঙ্গ উঠতেই লাতুফের সোজাসাপ্টা জবাব— ‘‘আসলে আমরা এমন একটা সময়ে বাস করছি, যখন বিশ্বের সর্বত্র কট্টর ডানপন্থীদের রমরমা। এক আকাশের নীচে তিনটে ‘ট্রাম্প’! ভাবা যায়?’’
আরও পড়ুন: হিন্দু শবযাত্রাকে রাস্তা ছেড়ে দিল শাহিন বাগ
মাঝখানের এই ক’টা দিনে ‘আসল ট্রাম্প’ আর ‘ব্রাজিলীয় ট্রাম্পকে’ নিয়ে লাগাতার ব্যঙ্গচিত্র এঁকেছেন লাতুফ। কোথাও চুক্তির কাগজপত্র পুড়িয়ে যুদ্ধের ধোঁয়া ছাড়ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট। তো কোথাও, পরজীবীর চেহারা নিয়ে ধুঁকছেন বোলসোনারো। ১ ফেব্রুয়ারি লাতুফ ফের পড়লেন ভারত নিয়ে। এ বার গাঁধীর মুখে ‘নো এনআরসি’! ভারত নিয়ে লাগাতার আঁকছেন! লাতুফের কথায়, ‘‘ভারতের মাটিতে ঠান্ডা পানীয় সংস্থাগুলির আগ্রাসন নিয়ে বহু বছর আগে এক বার এঁকেছিলাম। কিন্তু এ বার কলম যেন থামতেই চাইছে না।’’
আঁকছেন লাতুফ। আর এঁকেই ফেসবুকে দিচ্ছেন। কিন্তু সঙ্গের ছোট-ছোট হিন্দি ইন্ট্রোগুলো কি গুগল ট্রান্সলেটরের? স্মাইলি রেখেই লাতুফ মেলে লিখলেন, ‘‘এতটা যান্ত্রিক আর হতে পারলাম কই! হিন্দিভাষী বন্ধুর অভাব আছে নাকি ফেসবুকে?’’
বছর পাঁচেক আগে লাতুফের কলমের আঁচড়ে ফুটে উঠেছিল বাংলাও— ‘পাল্টা আঘাত’। সেটা ছিল বাংলাদেশকে নিয়ে। ছাত্র আন্দোলনে পুলিশি হামলার প্রতিবাদ। বাংলা বা হিন্দি জানেন না শিল্পী। শুধু আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্যানভাস-ভাষাটা বোঝেন। ব্রাজিল থেকে কলকাতা, বাঁধা পড়ে সেই ভাষায়।