গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
গোটা দেশের নেতাদের পটনায় জড়ো করছে বিজেপি। দলে যতগুলি শাখা সংগঠন রয়েছে তার মিলিত কর্মসমিতির বৈঠক হবে আগামী ৩০ ও ৩১ জুলাই। তাতে প্রতিটি সংগঠনের সর্বভারতীয় নেতা এবং কর্মসমিতির সদস্যরা তো থাকবেনই, সেই সঙ্গে দেশের সব রাজ্যের সব মোর্চার সভাপতিকে ডাকা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, ওই বৈঠকের দু’দিন আগেই পটনায় পৌঁছে যেতে বলা হয়েছে সকলকে। বিজেপির পরিকল্পনা অনুযায়ী ওই বৈঠকের আগের দু’দিন বিহারের ২৪৩ বিধানসভা আসনে ছড়িয়ে যাবেন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা বিজেপি নেতারা। জোটসঙ্গী নীতীশ কুমারের জনতা দল ইউনাইটেডের দখলে থাকা বিধানসভা আসনগুলিতেও সংগঠন শক্তিশালী করার উদ্যোগী হয়েছে বিজেপি।
সম্প্রতি একই পদ্ধতিতে তেলঙ্গানায় সংগঠন বিস্তারের পরিকল্পনা নেয় বিজেপি। গত ২ ও ৩ জুলাই হায়দরাবাদে বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠক ছিল। কিন্তু তার আগেই ৩০ জুন কর্মসমিতির সদস্যদের তেলঙ্গানায় হাজির করে বিজেপি। রাজ্যের ১১৯টি বিধানসভা এলাকায় ওই নেতাদের দু’দিনের জন্য পাঠানো হয়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি সাংগঠনিক বৈঠকেও যোগ দেন তাঁরা। বাংলা থেকে যাওয়া সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারী, দিলীপ ঘোষও ওই কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছিলেন। তবে এ বার সকলে ডাক পাননি। রাজ্য থেকে ডাকা হয়েছে দলের সাতটি শাখা সংগঠন মহিলা, যুব, এসসি, এসটি, ওবিসি, কিষাণ ও সংখ্যালঘু মোর্চার রাজ্য সভাপতিদের। সেই সঙ্গে রাজ্য সভাপতি সুকান্ত এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তীকেও ডাকা হয়েছে।
বিজেপি এখনও পর্যন্ত দক্ষিণে সে ভাবে সংগঠন বিস্তার করতে পারেনি। কর্নাটক ছাড়া কোথাও সরকারেও যেতে পারেনি। সেই হিসাবে তেলঙ্গানার কর্মসূচি হলেও বিহারে জোট সরকার থেকে কেন রাজ্যজুড়ে এমন প্রচার পরিকল্পনা? এটা কি নীতীশের উপরে চাপ তৈরি করার পরিকল্পনা? এমন প্রশ্নের জবাবে বিহার বিজেপির সহ-সভাপতি শিবনারায়ণ মাহাতো আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমাদের সঙ্গে জেডিইউ-এর সম্পর্ক ভাল। তাদের উপরে চাপ তৈরির কোনও পরিকল্পনাই নেই। দলের একটা কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। যেখানে আমরা জিতেছি এবং হেরেছি সেখানেও যাওয়া হবে।’’ একই সঙ্গে তাঁর দাবি, ‘‘জোট সঙ্গী থাকলেও নিজেদের সংগঠন বাড়ানোয় তো কোনও বাধা নেই।’’
প্রসঙ্গত, বিহারে বিজেপির দখলে ৭৪ আসন থাকলেও ৪৩ আসন পাওয়া জেডিইউ-এর নীতীশকে মুখ্যমন্ত্রী করে। তবে ইদানীং দুই শরিক দলের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে মতপার্থক্য সামনে এসেছে। বিহারে পরের বিধানসভা নির্বাচন ২০২৬ সালে। কিন্তু তার আগে ২০২৪ সালেই রয়েছে লোকসভা নির্বাচন। রাজ্যের ৪০টি আসনের ৩৯টি বিজেপি জোটের হলেও দলের দখলে মাত্র ১৭টি। রাজনৈতিক মহলের ধারণা, বিহারে একক শক্তি বাড়াতেই বিজেপির এই পরিকল্পনা।
বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কর্মসূচিতে অংশ না নিলেও ৩০ ও ৩১ জুলাই হওয়া বৈঠকে হাজির থাকবেন সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডা এবং সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) বিএল সন্তোষ। ঠিক হয়েছে, বিহারের যে বিধানসভায় যে গোষ্ঠীর মানুষের বাস বেশি, সেই হিসাবে আসনগুলিতে এস, এসটি, ওবিসি, সংখ্যালঘু মোর্চার নেতাদের পাঠানো হবে। কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প ছাড়াও বিহারের জন্য গত কয়েক বছরে কেন্দ্র কী কী করেছে, তার প্রচার চলবে। সেই সঙ্গে সাধারণ মানুষের চাহিদাও জানতে চাইবেন নেতারা। কথা বলবেন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পাওয়া পরিবারের সঙ্গেও। এর পরে প্রত্যেক নেতা দায়িত্ব পাওয়া বিধানসভা এলাকা ঘুরে একটি রিপোর্ট কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জমা দেবেন।