ফেসবুক বিতর্কে শশী তারুরের (বাঁ দিকে) বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের নোটিস পাঠালেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। —ফাইল চিত্র
ফেসবুকের বিরুদ্ধে বিজেপির ঘৃণা-মন্তব্য গুরুত্ব না দেওয়ার অভিযোগ এ বার গড়াল সংসদীয় পদ্ধতিতেও। কংগ্রেস সাংসদ তথা সংসদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান শশী তারুরকে অধিকার ভঙ্গের নোটিস ধরালেন বিজেপি সাংসদ তথা ওই কমিটির সদস্য নিশিকান্ত দুবে। মার্কিন সংবাদ মাধ্যমের একটি রিপোর্টের ভিত্তিতে সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটির সামনে ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে নোটিস ধরিয়েছিলেন তারুর। সংসদীয় রীতিনীতির তোয়াক্কা না করেই তারুর ওই নোটিস পাঠিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে নোটিস পাঠিয়েছেন দুবে। সংসদের আগামী অধিবেশনেও বিষয়টি নিয়ে হইচই হতে পারে বলে মত পর্যবেক্ষকদের একাংশের।
সম্প্রতি মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ‘ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’-এ একটি প্রতিবেদন ঘিরে বিতর্কের সূত্রপাত। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বিজেপি নেতাদের বা বিজেপি সমর্থিত সংগঠনের ঘৃণা-মন্তব্যকে এড়িয়ে যান। ওই প্রতিবেদনে উদাহরণ দিয়ে দেখানো হয়েছিল, একাধিক বিজেপি নেতা উস্কানিমূলক মন্তব্য করলেও ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁদের অ্যাকাউন্ট ব্লক করেননি। বিজেপি-ও পাল্টা ফেসবুকের কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা প্রসঙ্গ তুলে পাল্টা আক্রমণ করে। যদিও ফেসবুকের তরফে পাবলিক পলিসি হেড আঁখি দাস বিষয়টি অস্বীকার করেন।
কিন্তু রাজনৈতিক এই তরজার বাইরে গিয়ে শশী তারুর আবার ফেসবুক কর্তৃপক্ষকে একটি নোটিস পাঠান। সংসদের তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে ফেসবুকের প্রতিনিধিকে কমিটির সামনে হাজির হয়ে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদন সম্পর্কে ব্যাখ্যা তলব করেছিলেন। সেই নোটিস ঘিরেই এক্তিয়ারের প্রশ্ন তুলে পাল্টা নোটিস পাঠিয়েছেন বিজেপি সাংসদ দুবে।
আরও পড়ুন: সমবায় ব্যাঙ্কের তহবিল তছরুপ মামলায় অর্জুনের বাড়িতে তল্লাশি, করা হবে জেরাও
নোটিসে দুবের অভিযোগ, ‘‘তারুর সমস্ত নীতি-নৈতিকতা ও সংসদীয় পদ্ধতির সীমা লঙ্ঘন করেছেন। নিজের অধিকারের সীমা লঙ্ঘন করে সংসদীয় কমিটির স্বাভাবিক কাজকর্মে বাধার সৃষ্টি করেছেন।’’ নোটিসে দুবে আরও বলেছেন, ‘‘সংসদের এক জন প্রতিনিধি হিসেবে শুধু ওঁর নিজের নয়, তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির মতো গুরুত্বপূর্ণ কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে তাঁর পদমর্যাদারও অসম্মান করেছেন।’’
লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লাকে পাঠানো ওই নোটিসে দুবের আর্জি, শশী তারুরের বিরুদ্ধে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনা হোক। স্পিকার নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন অথবা অধিকার সংক্রান্ত কমিটির কাছে পাঠিয়ে দিতে পারেন। দুবের যুক্তি, তারুর বিষয়টি নিয়ে কমিটির কোনও সদস্যের সঙ্গে আলোচনা করেননি। তিনি বলেন, ‘‘তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক স্থায়ী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে শশী তারুর স্পষ্ট ভাবেই অধিকার ভঙ্গ করেছেন।’’
আরও পড়ুন: নীরবে সরানো হল ফেডারেশনের মাথা থেকে, তৃণমূলে কি গুরুত্ব কমছে শুভেন্দুর?
সংসদীয় প্রথা মেনে নোটিস পাঠানোর আগেও তারুরকে আক্রমণ করেছেন দুবে। জনসমক্ষে তিনি বলেছেন, লোকসভার স্পিকার বা সেক্রেটারি জেনারেলের কাছে অনুমোদন না নিয়েই শশী তারুর ওই নোটিস পাঠিয়েছেন। যদিও তারুরের পাল্টা যুক্তি ছিল, এই ধরনের বিরাট জনস্বার্থের সঙ্গে জড়িত বিষয়ে সংসদীয় প্যানেলের হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়।
কিন্তু তারুরের বিরুদ্ধে পাঠানো নোটিসে দুবে আরও অভিযোগ করেছেন, ‘‘কোনও এক জন ব্যক্তির সঙ্গে ফেসবুক বা হোয়াটসঅ্যাপ কর্তৃপক্ষের সমস্যা হয়েছিল। এই ঘটনা সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত হয়েছে। এটা বলার প্রয়োজন নেই যে, এই ধরনের ঘটনা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ঘটেই থাকে। এটা সুস্থ গণতন্ত্রের লক্ষ্মণ, যেখানে যে কোনও ব্যক্তি ভয়ভীতিহীন ও স্বাধীন ভাবে মত প্রকাশ করতে পারেন।’’