পৌষমেলায় বিকিকিনি। সোমবার শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে। ছবি: বিশ্বজিৎ রায়চৌধুরী।
শান্তিনিকেতনকে ইউনেস্কো ‘ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ’ বা বিশ্ব ঐতিহ্যক্ষেত্রের স্বীকৃতি দেওয়ার পরে, প্রথম পৌষমেলা আয়োজিত হল এ বার। পাঁচ বছর পরে শান্তিনিকেতনের পূর্বপল্লির মাঠে ফের পৌষমেলা আয়োজন করেছে বিশ্বভারতী ও শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট। চিরাচরিত প্রথা মেনে সোমবার, ৭ পৌষ ভোরে গৌর প্রাঙ্গণে বৈতালিক, শান্তিনিকেতন গৃহের সানাই ও সকালে ছাতিমতলায় ব্রহ্ম উপাসনার মধ্য দিয়ে পৌষ উৎসবের সঙ্গে পৌষমেলারও সূচনা করা হয়।
উপাসনা শেষে ‘আগুনের পরশমণি...’ গেয়ে শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে উদয়নগৃহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে পুষ্পার্ঘ্য নিবেদন করেন বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বিনয় কুমার সরেন, জেলাশাসক বিধান রায়, জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ, আশ্রমিক, ছাত্রছাত্রীরা। পরে মেলা প্রাঙ্গণে বিনোদন মঞ্চে বাউল, কীর্তন প্রভৃতি পরিবেশিত হয়। কিছু স্টলের উদ্বোধনও করেন অতিথিরা। এ বছর মেলায় প্রায় ১৮০০ স্টল বসেছে। বিনোদন মঞ্চে নানা ধরনের লোকসংস্কৃতি ও আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে। বিনোদন মঞ্চের অন্যতম আকর্ষণ সংশোধনাগারের আবাসিকদের অনুষ্ঠান।
বিশ্বভারতীর তরফে বিশেষ প্রদর্শনীর পাশাপাশি মেলায় ক্ষুদ্র, ছোট মাঝারি ও বস্ত্র দফতরে স্টলে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্প কাঁথা স্টিচের দেওয়াল চাদরের মধ্য দিয়ে তুলে অভিনব প্রচার চালাচ্ছেন বোলপুরের কাঁথা স্টিচ শিল্পী মমতাজ বিবি। তাঁর দেওয়াল চাদরে উঠে এসেছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, সবুজ সাথী, স্বাস্থ্য সাথীর মতো নানা প্রকল্পের কথা।
মমতাজ বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এতগুলি প্রকল্প জনসাধারণের জন্য করেছেন। তাই মানুষের কাছে সেগুলি তুলে ধরতেই পৌষমেলাকে বেছে নেওয়া।”
প্রথম দিন মেলায় বিক্রি বেশ ভাল বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্বভারতীর ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য বলেন, “আমার জীবনে আজকের দিনটি এক অন্য অনুভূতি। উপাচার্য হিসেবে পৌষমেলা ও উৎসবের সূচনা করতে পারা আমার কাছে পরম প্রাপ্তি।” জেলাশাসকের কথায়, ‘‘এ এমন এক অনুভূতি, যা ভাষায় প্রকাশ করা যাবে না। ৭ পৌষ দেশবাসী এবং বিশ্ববাসীর কাছে গুরুত্বপূর্ণ দিন।”
বিশ্বভারতীর ছাত্রী সুরভী দাস, নীহারিকা দাস বলেন, “এই মেলা মহর্ষির হাত ধরে শুরু হয়েছিল, তাই মেলা বন্ধ হওয়া উচিত নয়। মেলা আবার পুরনো চেহারায় ফিরে আসায় আমরা খুবই আনন্দিত।” সকাল থেকেই দেশ-বিদেশ থেকে বহু মানুষ ভিড় জমিয়েছিলেন মেলায়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভিড়ও বাড়তে থাকে। মেলা চলবে ২৮ তারিখ পর্যন্ত। সব মিলিয়ে প্রথম দিনের পৌষমেলা রইল জমজমাট।