নিহত খলিস্তানি নেতা জার্নেল সিংহ ভিন্দ্রানওয়ালে সম্পর্কে মন্তব্যের দায়ে এ বার দলের অন্দরে সমালোচনার মুখে পড়়লেন বিজেপির অভিনেত্রী-সাংসদ কঙ্গনা রানাউত। বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সোমপ্রকাশ বুধবার হিমাচল প্রদেশের মাণ্ডীর কঙ্গনার উদ্দেশে সমাজমাধ্যমে লিখেছেন, ‘‘স্পর্শকাতর বিষয়ের গুরুত্ব না বুঝে অবাঞ্ছিত মন্তব্য করবেন না।’’
কঙ্গনা আশির দশকে স্বর্ণমন্দিরে সেনা অভিযানে নিহত খলিস্তানি নেতা ভিন্দ্রানওয়ালেকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলেছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্যের নিন্দা করে এক্স পোস্টে সোমপ্রকাশের হুঁশিয়ারি, ‘‘মনে রাখবেন, এ ধরনের মন্তব্য শিখ জনগোষ্ঠীর ভাবাবেগ আহত করত পারে। পঞ্জাবে শান্তি নষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি করা উচিত নয়।’’
প্রসঙ্গত, গত এক মাসের মধ্যে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার দলের অন্দরে সমালোচনার মুখে পড়লেন কঙ্গনা। অগস্টের তৃতীয় সপ্তাহে সমাজমাধ্যমের একটি পোস্টে কঙ্গনা লিখেছিলেন, ‘‘ভারতে কৃষক আন্দোলন বাংলাদেশের মতো পরিস্থিতি তৈরি করতে পারত। কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিচক্ষণ সিদ্ধান্তের জন্যই তা হতে পারেনি।’’ ওই পোস্টে কঙ্গনা এ-ও লিখেছিলেন যে, ‘‘কৃষক আন্দোলন চলাকালীন ঝুলন্ত অবস্থায় বহু দেহ পাওয়া গিয়েছে। সেই সময় প্রচুর ধর্ষণের ঘটনাও ঘটেছে।’’ এর পরেই বিজেপির তরফে লিখিত বিবৃতিতে বলা হয়েছিল, ‘‘দলের নীতি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলার দায়িত্ব দেওয়া হয়নি কঙ্গনাকে। তাঁকে সেই অনুমতিও দেওয়া হয়নি। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব তাঁকে ভবিষ্যতে এই ধরনের মন্তব্য করা থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন।’’
কিন্তু তার পরেও আবার বিতর্কিত বিষয়ে মুখ খুললেন বিতর্কিত বিজেপি সাংসদ। প্রসঙ্গত, পঞ্জাবে অশান্ত আশির দশকে ‘ত্রাস’ হয়ে উঠেছিলেন কট্টরপন্থী এবং রক্ষণশীল শিখনেতা হিসাবে পরিচিত ভিন্দ্রানওয়ালে। তাঁর বিরুদ্ধে শান্তিকামী ও নরমপন্থী শিখ এবং হিন্দুদের হত্যা করার অভিযোগ ওঠে। প্রশাসনের বহু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ভিন্দ্রানওয়ালের রোষে পড়েছিলেন। ভিন্দ্রানওয়ালের পাশে দাঁড়ানোর অভিযোগ ওঠে শিখদের অন্যতম শীর্ষ ধর্মীয় সংগঠন অকাল তখ্তের বিরুদ্ধে।
ভিন্দ্রানওয়ালে বিপুল অস্ত্রশস্ত্র, দলবল নিয়ে অমৃতসরের স্বর্ণমন্দিরের ভিতরে ঘাঁটি গাড়লে, ১৯৮৪ সালের ১ জুন ‘অপারেশন ব্লু স্টার’ চালানোর সিদ্ধান্ত নেয় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার। ভারতীয় সেনার হামলায় ভিন্দ্রানওয়ালে মুক্ত হয় শিখদের পবিত্র তীর্থ স্বর্ণমন্দির। ১৯৮৪ সালের অক্টোবর মাসে দুই শিখ দেহরক্ষীর গুলিতে নিহত হন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা। অন্যতম হত্যাকারী সতবন্ত সিংহ জেরায় জানিয়েছিলেন, পবিত্র তীর্থস্থলে সেনা অভিযানের প্রতিশোধ নিতেই এই পদক্ষেপ করেছিলেন তাঁরা।