হিমন্তবিশ্ব শর্মা। ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সফরেও কমেনি অশান্তি। তাই ফের বিজেপির উত্তর-পূর্বের চাণক্য হিসেবে পরিচিত হিমন্তবিশ্ব শর্মার হাতেই মণিপুর শান্ত করার ভার দিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের খবর, মেইতেইদের সঙ্গে ইম্ফলে গিয়ে বৈঠক করার পরে এ বার কুকি জঙ্গি নেতাদের সঙ্গে গুয়াহাটিতে বসে গোপন বৈঠক সেরে ফেললেন হিমন্ত।
নেডা জোটের মাথা হিসেবে হিমন্ত উত্তর-পূর্বকে ‘কংগ্রেসমুক্ত’ করেছেন। মণিপুরে সংখ্যাধিক্য না থাকার পরেও তাঁর কৌশলেই গদিতে বসেছেন এন বীরেন সিংহ। পরে, বার তিনেক বিধায়কদের বিদ্রোহ সামলে বীরেনের গদি বাঁচিয়েছেন হিমন্ত। অবশ্য ৩ মে থেকে চলা মণিপুরের অশান্তি ও কুকি-মেইতেই সংঘর্ষ থেকে সচেতন দূরত্ব বজায় রেখেছিলেন তিনি।
অমিত শাহের সফরের পরে তৈরি হয়েছে বিচারবিভাগীয় কমিশন। ছ’টি মামলা রুজু করে তদন্তভার হাতে নিয়েছে সিবিআই। তৈরি হয়েছে শান্তি কমিটিও। কিন্তু হিংসা থামেনি। উল্টে শান্তি কমিটিতে বীরেনকে মাথায় রাখায় ক্ষিপ্ত জনজাতিদের যৌথ মঞ্চ। এমন প্রেক্ষাপটে হিমন্ত দুই পক্ষের সঙ্গেই আলোচনার ভার নিয়েছেন।
সূত্রের খবর, রবিবার গোপনে গুয়াহাটি আসেন সংঘর্ষবিরতিতে থাকা কুকিদের ১৭টি জঙ্গি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ কেএনও ও আটটি কুকি সংগঠনের যৌথ মঞ্চ ইউপিএফের চার শীর্ষ নেতা। রাতেই তাঁদের সঙ্গে গোপন বৈঠক করেন হিমন্ত। মেইতেইদের দাবি, মণিপুরে সংঘর্ষবিরতিতে থাকা ২৫টি কুকি জঙ্গি সংগঠনই হিংসার মূল কারণ। কিন্তু কেন্দ্র তাদের নিয়ন্ত্রণ করা বা সংঘর্ষবিরতি শেষ করায় উদ্যোগী হচ্ছে না। ১০ জুন মণিপুর সরকার ও বিভিন্ন মেইতেই সংগঠনের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করে ফেরা হিমন্ত ১১ জুন কুকিদের যৌথ মঞ্চের নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনায় বসে সমঝোতার সূত্রসন্ধান শুরু করলেন।
কেএনও মুখপাত্র সেইলেন হাওকিপ বলেন, “বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। আলোচনা সঠিক পথে এগিয়েছে। তিনি দুই তরফে শান্তির আহ্বান জানান। আমরাও শান্তির পথে সদিচ্ছা প্রকাশ করে জানিয়েছি সব সংবেদনশীল এলাকার ভার যেন পুরোপুরি কেন্দ্রীয় বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়। আক্রমণ বন্ধ না হলে শান্তি ফিরবে না। হিমম্ত জানিয়েছেন শান্তির বার্তা নিয়ে কুকিদের এলাকা কাংপোকপি ও চূড়াচাঁদপুরে যাবেন।”
কংগ্রেসের জয়রাম রমেশ, ভক্তচরণ দাস ও মুকুল ওয়াসনিকরা আজ দিল্লিতে মণিপুর নিয়ে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, অমিত শাহ ১৫ দিনের মধ্যে রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করবেন বললেও তাঁর ফেরার দুই সপ্তাহ পরেও মণিপুরে রোজ চলছে গুলি, জ্বলছে আগুন, বন্ধ জাতীয় সড়ক, ৫০ হাজার মানুষ ত্রাণ শিবিরে আছেন। কংগ্রেসের দাবি, শাহের শান্তির আহ্বান পুরোপুরি ব্যর্থ। তাই হিমন্তকে ভার ঠেলে দিয়েছেন শাহ।
মণিপুরের রাজ্যপাল অনুসূয়া উইকে চূড়াচাঁদপুরের লামকা এলাকা সফরের সময়ে সোমবার ওই জেলার লোকলাকফাই গ্রামে হামলায় মৃত্যু হয় এক যুবকের। কাংপোকপি জেলার খামেনলোকেও সংঘর্ষে পাঁচ জন আহত। তাঁদের এক জন সঙ্কটজনক।
দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতারা বলেন, প্রধানমন্ত্রী ১০০টি ‘মন কি বাত’ সারলেন কিন্তু মণিপুর নিয়ে তিনি আশ্চর্য ভাবে নীরব। এ বার মণিপুর কি বাত-এর সময় এসেছে।