জাকির নাইক
বিতর্কিত ধর্মপ্রচারক জাকির নাইকের সঙ্গে গাঁধী পরিবারের যোগসূত্র তুলে ধরে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে প্রচারে নামল বিজেপি। আর বিদেশ থেকে জাকির নাইক এক খোলা চিঠিতে পাঁচটি প্রশ্ন রাখলেন ভারতবাসীর উদ্দেশে। যদিও ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার পরেই আইএস জঙ্গিদের সন্ত্রাসে মদত ও প্ররোচনা জোগানোর যে অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে উঠেছে, তা নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য জাকির করেনননি।
জাকিরের বক্তব্য, l ধর্মপ্রচার তো তিনি গত ২৫ বছর ধরেই করে আসছেন! এখন কেন তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হচ্ছে? l সরকারি তদন্তে কোনও প্রমাণ না পাওয়া সত্ত্বেও ফের কেন তদন্ত হচ্ছে তাঁর বিরুদ্ধে? l তাঁর সংস্থা ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর রেজিস্ট্রেশন ‘রিনিউ’ করেও ফের কেন তা বাতিল করা হল। l সরকারি গোপন তথ্য ফাঁস করার পিছনে কোনও চক্রান্ত কি রয়েছে? l জোর করে ধর্ম বদল করানোর প্রমাণ কোথায়? কোথায় তারা, যাদের ধর্মান্তরণ করানো হয়েছে? এরই পাশাপাশি ‘পিস টিভি’র কর্ণধার জাকিরের বক্তব্য, এখনও তিনি বিচার বিভাগের উপরে আস্থা রাখছেন। তবে যা চলছে, এখনই তা বন্ধ না করলে চড়া দাম দিতে হবে তার।
জাকির তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালালেও বিজেপি এখন তাঁর সঙ্গে কংগ্রেসের যোগকে হাতিয়ার করছে ভোটের ময়দানে। বিজেপির অভিযোগ, জাকিরের সংস্থা ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’ সনিয়া গাঁধী পরিচালিত ‘রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন’কে ৫০ লক্ষ টাকা ‘ঘুষ’ দিয়েছিল। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ আজ অভিযোগ করেন, ‘‘জাকির নাইকের যাবতীয় অনৈতিক ও দেশ-বিরোধী কাজ ধামাচাপা দেওয়ার জন্যই এই ঘুষ দেওয়া হয়েছিল ইউপিএ আমলে।’’
ঘটনাটি ঠিক কী?
সনিয়া গাঁধী পরিচালিত রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশনকে ৫০ লক্ষ টাকা অনুদান দেওয়া হয়েছিল ২০১১ সালে। এই ফাউন্ডেশনে সনিয়া গাঁধী ছাড়াও রয়েছেন রাহুল গাঁধী, প্রিয়ঙ্কা বঢ়রা, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, পি চিদম্বরমের মতো নেতারা।
বিজেপির অভিযোগ, প্রথমে রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন এই অনুদান প্রাপ্তির কথা অস্বীকার করে। পরে স্বীকার করে বলে, এই ফাউন্ডেশনের অধীনে ‘রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’-এ এই অনুদান দেওয়া হয়েছিল। কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির দাবি, ‘‘জাকির নাইকের সংস্থার গতিবিধি সম্প্রতি সমক্ষে আসার পরে এই অর্থ ফেরত দেওয়া হয়েছে।’’ যদিও অর্থ ফেরতের কথা অস্বীকার করেছে জাকিরের সংস্থা। তাদের কথায়, ‘রাজীব গাঁধী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট’ নয়, অর্থ দেওয়া হয়েছিল ‘রাজীব গাঁধী ফাউন্ডেশন’কেই। আর এখন যদি তারা অর্থ ফেরত দেওয়ার পরিকল্পনাও করে থাকে, এখনও পর্যন্ত তা এসে পৌছয়নি।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তদন্তেই জাকিরের সংস্থার টাকা দেওয়ার যাবতীয় তথ্য উঠে এসেছে। ফলে দরকার মনে করলেই নরেন্দ্র মোদীর সরকার এ নিয়ে আইন মাফিক ব্যবস্থা নিতে পারে। কিন্তু এ নিয়ে উচ্চবাচ্য না করে বিজেপি এখন উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী প্রচারে বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তুলে ফায়দা লুটতে চাইছে। রাহুল গাঁধী এখন উত্তরপ্রদেশ চষে বেড়াচ্ছেন। রোজ তোপ দাগছেন বিজেপিকে। জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে হিন্দু ও সংখ্যালঘু ভোটকে কাছে টানতে চাইছেন কংগ্রেস সহসভাপতি। এই সময়েই গাঁধী পরিবারের উপরে ‘সন্ত্রাসবাদীদের মদতদাতা’ তকমা সেঁটে দিতে পারলে হিন্দু ও আধুনিক সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক থেকে দূরে রাখা যাবে কংগ্রেসকে। এবং সেই কারণেই কেন্দ্রের আইনমন্ত্রীকে দিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করিয়ে বিজেপি প্রশ্ন তুলছে, ২০১২ সালেই ইউপিএ সরকারের তথ্য-সম্প্রচার মন্ত্রী সংসদে এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে জানিয়েছিলেন, জাকির পরিচালিত ‘পিস টিভি’র গতিবিধি সন্দেহজনক এবং বিষয়টি সরকারের নজরে রয়েছে। রবিশঙ্করের প্রশ্ন, তা হলে কেন ২০১২ সালেই এই অর্থ ফেরত দেওয়া হল না?
উল্টে তার পরের বছর কেন্দ্রের সংখ্যালঘু উন্নয়ন মন্ত্রী রহমান খান জাকির নাইকের তারিফ করে একটি চিঠি লেখেন কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারিকে। গেরুয়া শিবির থেকে জাকিরকে যাতে অপদস্থ হতে না হয়, তার জন্য সাহায্যও চেয়েছিলেন সংখ্যালঘু মন্ত্রী।
রবিশঙ্করের বক্তব্য, এমনটা নয় যে সেই সময় শুধুমাত্র দিগ্বিজয় সিংহের মতো একা কেউ সন্ত্রাসবাদীদের সমব্যাথী ছিলেন। এখন দেখা যাচ্ছে গোটা কংগ্রেস এর সমর্থনে ছিল। এবং গাঁধী পরিবারের প্রত্যক্ষ নজরদারিতেই চলছিল এ সব।