রাস্তা বন্ধ শ্রীনগরে (বাঁ দিকে)। কোথাও বিক্ষোভে পুড়ল টায়ারও (মাঝে)। কিছু স্কুল খুললেও পড়ুয়াদের পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। অগত্যা পাঠশালা বসল শ্রীনগরে শিক্ষিকার বাড়িতেই। ছবি: এপি, রয়টার্স।
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার পরে কাশ্মীরকে উন্নয়নের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন। এ বার সেই কাজে হাত দেওয়ার জন্য প্রশাসনকে নির্দেশ দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। খাতায়কলমে অবস্থা স্বাভাবিক বলে দেখানোর চেষ্টা করলেও কাশ্মীর নিয়ে চোরা উদ্বেগ যে সরকারের অন্দরে রয়েছে, মোদীর এ দিনের বার্তায় সেটাও প্রচ্ছন্ন বলে মনে করছেন অনেকে। কারণ এ দিনই কাশ্মীরে সংবাদমাধ্যমের উপরে রাশ টানার চেষ্টাও আরও শক্তপোক্ত হয়েছে। শ্রীনগরে যে সব সাংবাদিক সরকারি আবাসনে থাকেন, তাঁদের আবাসন ছেড়ে দিতে বলা হয়েছে বলে খবর।
আজ কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকের পরে মন্ত্রী পরিষদের বৈঠক ডাকেন মোদী। সূত্রের খবর, সেখানে জলশক্তি, অর্থনীতি ও শেষে জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে প্রেজেন্টেশন দেয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ নিজে জম্মু-কাশ্মীরের ইতিহাস ব্যাখ্যা করে জানান, আগের কোনও সরকারই কাশ্মীর নিয়ে সদর্থক পদক্ষেপ করেনি। কী কারণে এখনও কিছু নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখা হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করে তিনি জানান, পাকিস্তান যাতে কৌশলে আগুন জ্বালতে না-পারে তা নিয়ে সতর্ক থাকতে হচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে।
এর পরে মোদী জানান, কাশ্মীরের জন্য এখনই সব মন্ত্রককে কাজ শুরু করতে হবে। কাশ্মীরের মন জয় করতে হবে উন্নয়নের মাধ্যমে। উপত্যকায় সরকারি ভাবে স্কুল-কলেজ খুললেও পড়ুয়াদের পাঠাতে সাহস পাচ্ছেন না অভিভাবকেরা। ফলে ক্লাসঘর ফাঁকাই। এই অবস্থায় পড়ুয়াদের সঙ্গে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের কথা বলতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মোদী জানিয়েছেন, কাশ্মীরি তথা দেশের মানুষকে এমন প্রতিশ্রুতি দিতে হবে, যা বাস্তবে রূপায়ণ করা যায়। উন্নয়নের বার্তা দিতে এ দিনই শ্রীনগরে সাংবাদিক বৈঠক করেন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকও। তিনি বলেন, ‘‘শীঘ্রই রাজ্যের উন্নয়নের জন্য বড় ঘোষণা করবে কেন্দ্র।’’ সেই সঙ্গে তিনি জানান, দু’তিন মাসের মধ্যে রাজ্য সরকারে ৫০ হাজার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।
কিন্তু উন্নয়নের বার্তা দিলেও কাশ্মীর পরিস্থিতি উদ্বেগেই রাখছে কেন্দ্রকে। অনেকের মতে, উপত্যকার খবর যাতে না-বেরোয় সে জন্য প্রশাসনের চেষ্টার অন্ত নেই। সেখানে সংবাদমাধ্যমের উপরে নিয়ন্ত্রণ আরও শক্ত হচ্ছে বলে শ্রীনগর থেকে খবর। বেছে বেছে সাংবাদিকদের বলা হচ্ছে, অবিলম্বে সরকারি আবাসন খালি করে দিতে। তার কোনও কারণ ব্যাখ্যা করেনি প্রশাসন। সর্বভারতীয় একটি চ্যানেলের সাংবাদিক নাজ়ির মাসুদি বলেন, ‘‘আমি প্রতি মাসে ১১ হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে আবাসনে থাকি। সেটা ছাড়তে বলা হয়েছে।’’ আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থার সাংবাদিক ফয়াজ় বুখারি, মার্কিন সংবাদপত্রের সাংবাদিক সামির ইয়াসিরকেও একই নোটিস দেওয়া হয়েছে। সরকারি একটি মিডিয়া সেন্টারে কাজ করছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকেরা। অভিযোগ, তাঁরা কোথায় কী বার্তা পাঠাচ্ছেন, তার উপরে সাদা পোশাকে নজর রাখছিলেন গোয়েন্দারা। এক প্রবীণ সাংবাদিকের কথায়, ‘‘সাংবাদিকতা নয়, আমরা এখন সরকারের জনসংযোগের কাজ করছি।’’