শনিবার এই তথ্যচিত্র দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পড়ুয়াদের একাংশ। ছবি- সংগৃহীত।
বিবিসির তথ্যচিত্র ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদী কোয়েশ্চেন’-এর প্রদর্শনী ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে দিল্লি, জেএনইউ, জামিয়ামিলিয়া-সহ দেশের বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বার কর্তৃপক্ষের আপত্তি সত্ত্বেও এই ‘বিতর্কিত’ তথ্যচিত্র দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মুম্বইয়ের ‘টাটা ইনস্টিটিউট অফ সোশ্যাল সায়েন্সেস’(টিআইএসএস)-এর পড়ুয়াদের একাংশ। শনিবার এই তথ্যচিত্র দেখানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
নরেন্দ্র মোদীর মুখ্যমন্ত্রিত্বের জমানায় গুজরাতের হিংসা নিয়ে তৈরি এই তথ্যচিত্র ঘিরে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। এই তথ্যচিত্রটি ‘একপেশে’ বলে সরব হয়েছে বিজেপি। যদিও বিবিসি দাবি করেছে, যথেষ্ট গবেষণা করে তথ্যচিত্রটি তৈরি করা হয়েছে। মোদীকে নিয়ে ওই তথ্যচিত্রের লিঙ্ক সমাজমাধ্যম থেকে তুলে নেওয়ার জন্য টুইটার ও ইউটিউবকে নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। মোদী সরকারের এই পদক্ষেপকে ‘সেন্সরশিপ’ আখ্যা দিয়েছে বিরোধীরা। এ নিয়ে রাজনৈতিক চাপান-উতোরের মধ্যেই দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন ঘিরে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। এই আবহে বিবিসির তথ্যচিত্র প্রদর্শনীর সিদ্ধান্ত নিল মুম্বইয়ের ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।
শুক্রবার টিআইএসএসের তরফে এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঠনপাঠনের পরিবেশ এবং শান্তি বিঘ্নিত হতে পারে, সে কারণে তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। অনুমতি না দেওয়া সত্ত্বেও পড়ুয়ারা যদি প্রদর্শন নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করেন, তা হলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে শুক্রবার বিকেলে জমায়েত করেন পড়ুয়ারা। কর্তৃপক্ষের সায় না থাকলেও শনিবার এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শনীর সিদ্ধান্ত নিয়েছে ‘প্রোগ্রেসিভ স্টুডেন্টস ফোরাম’ (পিএসএফ)।
গত মঙ্গলবার বিবিসির তথ্যচিত্র প্রদর্শন ঘিরে উত্তপ্ত হয়েছে দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়। এবিভিপির সদস্যদের বিরুদ্ধে পাথর ছোড়ার অভিযোগ করেছেন বাম নেতৃত্ব। যদিও দিল্লি পুলিশের তরফে জানানো হয়, এমন কোনও ঘটনা ঘটেনি। তথ্যচিত্রটির প্রদর্শন বন্ধ করতে ছাত্র সংসদের দফতরে বিদ্যুৎ এবং ইন্টারনেট সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। কর্তৃপক্ষের বাধা পেয়ে শেষ পর্যন্ত পড়ুয়াদের একাংশ ছাত্র সংসদের দফতর থেকে ক্যান্টিনে যান। সেখানেই তাঁরা তাঁদের মোবাইলে ডাউনলোড করা তথ্যচিত্রটি দেখেন। তথ্যচিত্র প্রদর্শন ঘিরে গত বুধবার উত্তেজনা ছড়ায় দিল্লির আরও এক বিশ্ববিদ্যালয় জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়ায়। অশান্তি হয়েছে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। শুক্রবার তথ্যচিত্রের প্রদর্শন শুরু হওয়ার পরে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে ঢুকে দিল্লি পুলিশ হামলা চালায় বলে অভিযোগ।
কেরলের রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমেও তথ্যচিত্র দেখানো নিয়ে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। সেখানে বাম যুব সংগঠন ডিওয়াইএফআই এবং কংগ্রেসের পৃথক উদ্যোগের বিরোধিতা করে বিক্ষোভ দেখায় এবিভিপি এবং বিজেপি। সংঘর্ষের পরিস্থিতি হয়। তাতে বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে পিনারাই বিজয়নের পুলিশ। তিরুঅনন্তপুরমের একটি আইন কলেজ ও হায়দারাবাদ কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়েও বিতর্ক তৈরি হয়েছে এই তথ্যচিত্র প্রদর্শন ঘিরে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো কলকাতার দুই নামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও এই তথ্যচিত্রের প্রদর্শন করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে দেখানো হয় ওই তথ্যচিত্রটি। তবে প্রদর্শনী ঘিরে কোনও গোলমাল হয়নি। কিন্তু শুক্রবার প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছবির প্রদর্শনী ঘিরে উত্তেজনা ছড়ায়। সেখানে তথ্যচিত্রটি দেখানোর ব্যবস্থা করেন এসএফআই সমর্থকরা। আধ ঘণ্টা বাদেই হঠাৎ বিদ্যুৎ চলে যায় প্রদর্শনী কক্ষে। এ জন্য কর্তৃপক্ষকেই দায়ী করেন ছাত্রছাত্রীরা। কিছু ক্ষণের মধ্যে বিদ্যুৎ সংযোগ ফিরে এলে আবার শুরু হয় ছবি দেখানো।