গেরুয়া শিবিরের অন্দরে দীর্ঘ দিন ধরেই প্রস্তুতি ছিল তুঙ্গে। বুধবার যেন ঢাকে কাঠি পড়ল! প্রথমে ভূমিপূজা। তার পর শিলান্যাস। অবশেষে রূপার ইট দিয়ে অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের সূচনা করলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এই অনুষ্ঠান ঘিরে গোটা অযোধ্যার ছবিটা কেমন ছিল? কেমন ছিল সাধারণের আবেগ?
রামমন্দিরের শিলান্যাস অনুষ্ঠান শুরু হওয়ার আগে থেকেই গোটা অযোধ্যা শহর তথা উত্তরপ্রদেশ জুড়ে ছিল নিরাপত্তার কড়াকড়ি। জায়গায় জায়গায় আধুনিক অস্ত্রধারীদের দেখা দিয়েছে। দেখা গিয়েছে, করোনা-বিধি মেনে চলার জন্য যোগী-রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তায় যাতায়াত নিয়ন্ত্রণও।
২৯ বছর পর উত্তরপ্রদেশের অযোধ্যায় পা রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এ দিন সকালে যোগী আদিত্যনাথের রাজ্যে পৌঁছনোর পর তাঁকে স্বাগত জানান উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। সিল্কের সোনালি কুর্তা, কাঁধে গেরুয়া গামছা ও জরির কাজ করা ধুতির পরিহিত মোদীকে দেখা যায় একটু অন্য রূপে।
রামমন্দিরের শিলান্যাস অনুষ্ঠান ঘিরে গত কয়েক দিন ধরেই চড়ছিল প্রত্যাশার পারদ। এক দিকে, রামলালার মন্দিরের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন। অন্য দিকে, সেই অনুষ্ঠান ঘিরে নজর ছিল গোটা বিশ্বের। সেই সঙ্গে যোগ হয়েছিল, দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী-সহ একাধিক হাই-প্রোফাইল নেতা-নেত্রীর অযোধ্যায় পদার্পণ। ফলে গেরুয়া-শিবিরে উৎসাহের পালে যেন হাওয়া লেগেছিল।
অযোধ্যার আম জনতার পাশাপাশি রামলালার পুজোয় বসেছিলেন অভিনেতা থেকে রাজনীতির আঙিনায় পা রাখা রবি কিষণ। গোরক্ষপুরের সাংসদকে এ দিন দেখা যায় একেবারে অন্য বেশে। পরনে গেরুয়া বসন ও সাদা ধুতি, সঙ্গে কপালে তিলক। নিজের লোকসভা কেন্দ্র গোরক্ষপুরে রাম-সীতা-লক্ষ্মণের ছবির সামনে রীতিমতো ভজন-পূজনও শুরু করেন রবি কিষণ।
ভূমিপূজার জন্য নির্ধারিত অনুষ্ঠান শুরুর আগে থেকেই যেন চাঁদের হাট বসেছিল অযোধ্যায়। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তো উপস্থিত ছিলেনই। সেই সঙ্গে হাজির ছিলেন উত্তরপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন পটেল, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত থেকে শুরু করে রামদেবের মতো ব্যক্তিত্ব। এঁদের প্রত্যেককেই ভূমিপূজার অনুষ্ঠানে স্বাগত জানান যোগী আদিত্যনাথ।
ভূমিপূজার অনুষ্ঠান শুরুর আগে এ দিন একটি পারিজাত গাছের চারা রোপণ করে প্রধানমন্ত্রী মোদী। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ এবং আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবতও।
এ দিন অনুষ্ঠানের শুরুতে আরতি করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে। গোটা দিনের অনুষ্ঠানের মাঝে ফুটে ওঠে আরও নানা ছবি। যার মধ্যে একটি ছবি বোধহয় দীর্ঘ দিন মোদী-ভক্তদের মনে গেঁথে থাকবে। ভূমিপূজার আগে রামলালার মন্দিরে মোদীর সাষ্টাঙ্গ প্রণাম।
পুরোপুরি বৈদিক আচার মেনে শেষে হয় ভূমিপূজা। বিধি মেনে তা পালন করতে দেখা যায় প্রধানমন্ত্রীকে।
রামমন্দিরের জন্য যাবতীয় গুরুগম্ভীর আচার-অনুষ্ঠানের ঘিরে অযোধ্যায় সাধারণ মানুষের উৎসাহের অন্ত ছিল না। সকলের তো এই অনুষ্ঠানের উপস্থিত থাকার সম্ভব বা ভাগ্য হয়নি, তাঁদের অনেকেই গোটা অনুষ্ঠানের সরাসরি সম্প্রচার দেখতে চোখ রেখেছেন টেলিভিশনের পর্দায়।
সাধারণ মানুষের পাশাপাশি ছিল গেরুয়া-সমর্থকদের উল্লাসের বহর। বাজি ফাটিয়ে, ঢোল বাজিয়ে রামমন্দির শিলান্যাসের উৎসব পালন করলেন তাঁরা।
রামমন্দিরের শিলান্যাস-অনুষ্ঠানে নিজের ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর দাবি, সরযূ নদীর তীরে এক স্বর্ণযুগের সূচনা হল। ছবি: পিটিআই, এএফপি এবং এপি।