ডাক্তাররা বসে থাকেন, হাসপাতালে কোষ্ঠী দেখে ‘রোগ নির্ণয়’ করেন জ্যোতিষী!

জয়পুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বদলে রোগীরা নিজেদের কোষ্ঠী নিয়ে আসছেন। প্রথমে জ্যোতিষীরা সেই কোষ্ঠী পরীক্ষা করে ‘রোগ’ নির্ণয় করেন।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুলাই ২০১৯ ০৩:০৫
Share:

এই হাসপাতালেই জ্যোতিষীরা প্রথমে রোগ নির্ণয় করেন।

রোগীদের কোষ্ঠীবিচার করে ‘রোগ নির্ণয়’! এমনই চলছে রাজস্থানের রাজধানী জয়পুরে একটি বেসরকারি হাসপাতালে! বসুন্ধরা রাজের বিজেপি সরকারের আমলে একটি জ্যোতিষী সংগঠনের যে পরিকল্পনা সবুজ সঙ্কেত পেয়েছিল, তা পুরোদস্তুর চালু হয়েছে কংগ্রেস সরকার ক্ষমতায় আসার পর, গত ৬ ফেব্রুয়ারি।

Advertisement

জয়পুরের ওই বেসরকারি হাসপাতালে ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা-নিরীক্ষার বদলে রোগীরা নিজেদের কোষ্ঠী নিয়ে আসছেন। প্রথমে জ্যোতিষীরা সেই কোষ্ঠী পরীক্ষা করে ‘রোগ’ নির্ণয় করেন। তার পর রোগী যান হাসপাতালের চিকিৎসকদের কাছে। সেই চিকিৎসাও খানিকটা অ্যালোপ্যাথি, খানিকটা আয়ুর্বেদ, ইউনানি, যোগ-এর মিশেল। যাকে পরিভাষায় ‘ক্রসপ্যাথি’ বলে এবং চিকিৎসাশাস্ত্রে যা ‘অন্যায়’ বলে ধরা হয়। যাঁদের কোষ্ঠী নেই, তাঁরা চাইলে ৫০০ টাকার বিনিময়ে কোষ্ঠী তৈরি করা হচ্ছে!

এ হেন রোগ নির্ণয় পদ্ধতি ঘিরে নিন্দা ও সমালোচনার পরও কোনও প্রশাসনিক তৎপরতা চোখে পড়েনি। উল্টে রাজ্যে স্বাস্থ্য দফতরের মুখপাত্র গোবিন্দ জি পারিখ ফোনে বলেন, ‘‘আমরা তো অনুমতি দিইনি। বসুন্ধরা সরকার দিয়েছিল। তা ছাড়া, বেসরকারি হাসপাতাল যা খুশি করতে পারে। আমরা ওদের কী করে নিয়ন্ত্রণ করব?’’

Advertisement

সরকারি নির্দেশনামায় পাঁচ জন সরকারি চিকিৎসককে জ্যোতিষ ও চিকিৎসাকে মেলানোর গবেষণার জন্য নিয়োগ করা হয়েছে।

অথচ, ২০১৮ সালের ২৭ জুলাই সে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর থেকে একটি নির্দেশ জারি করা হয়েছিল। সেখানে পাঁচ জন সরকারি চিকিৎসকের নাম করে বলা হয়েছিল— সরকারি কাজে বিঘ্ন না-ঘটিয়ে এবং টাকা না-নিয়ে তাঁরা ওই সংগঠনে প্রাচ্য জ্যোতিষ শোধ সংস্থানে জ্যোতিষাচার্য অ্যাপ্লিকেশন ও মেডিক্যাল অ্যাপ্লিকেশনের ক্লাস নেবেন। বেআইনি চিকিৎসাপদ্ধতিকে উৎসাহ দেওয়ার এই অনুমতি কংগ্রেস সরকার কেন বাতিল করছে না? এই প্রশ্নে পারিখ মন্তব্য করতে চাননি।

ওই জ্যোতিষী সংগঠনের তরফে জানানো হয়েছে, ২০১৬ সালে তারা ওই হাসপাতাল-প্রকল্পের প্রস্তাব বসুন্ধরা সরকারকে দেয়। অনুমোদনও পায়। বিজেপি সরকার শহরের বৈশালীনগর এলাকায় জমির ব্যবস্থাও করে দেয়। তার পর জ্যোতিষ ও চিকিৎসাকে মেলানোর গবেষণা চালাতে ৫ জন সরকারি চিকিৎসককে আংশিক সময়ের জন্য এখানে নিয়োগও করে। এটা কি কুসংস্কার, অন্ধবিশ্বাস ও ভুল চিকিৎসাপদ্ধতিকে সমর্থন করা নয়? বিজেপি সরকার কেন তা অনুমোদন করেছিল?

বিজেপি আমলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী কালীচরণ শরাফকে ফোন করলে তাঁর জবাব, ‘‘কাকে কখন কী অনুমতি দিয়েছি, মনে রাখিনি।’’ আর রাজস্থানে বিজেপি-র মুখপাত্র বিনয় কাটিহার বলেন, ‘‘মানুষ তো কঠিন রোগে পড়লে মন্দিরে যায়, গুরুজিদের কাছে যায়, জ্যোতিষীর কাছে যায়। এটা বিশ্বাসের প্রশ্ন। অনেক মানুষ এটা চাইছিলেন। তাতে বাধা দেওয়ার কারণ নেই।’’ওই সংস্থার প্রধান তথা ওই হাসপাতালের মূল পরিকল্পক অখিলেশ শর্মার কথায়, ‘‘জ্যোতিষীরা তো চিকিৎসা করছেন না। করছেন ডাক্তারেরা। আমরা শুধু কোষ্ঠী বিচার করে মূল রোগ নির্ণয় করছি। এটা একবার চালু হলে ডায়াগনসিসে গাদা-গাদা টাকা খরচ হবে না। আর কাউকে এই পদ্ধতিতে রোগ নির্ণয়ে বাধ্য করছি না। যাঁরা বিশ্বাস করছেন, তাঁরা আসছেন।’’

সব শুনে আইএমএ-র সর্বভারতীয় সভাপতি শান্তনু সেনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি পথে যা করার করা হবে।’’

—নিজস্ব চিত্র।

এবার শুধু খবর পড়া নয়, খবর দেখাও।সাবস্ক্রাইব করুনআমাদেরYouTube Channel - এ।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement