পিনারাই বিজয়ন, সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং ই কে পলানীস্বামী। ফাইল চিত্র।
জনমত ইভিএম-বন্দি হয়ে গিয়েছে প্রায় এক মাস আগেই। কিন্তু গণনা থমকে ছিল পশ্চিমবঙ্গের ৮ দফার ভোটপর্বের কারণে। বাংলার পাশাপাশি রবিবার সকাল থেকে ভোট গণনা শুরু হবে আরও তিন রাজ্য, অসম, তামিলনাড়ু, কেরল এবং কেন্দ্রশাসিত পুদুচেরির ভোটের। তার মধ্যে অন্তত দু’টিতে এ বার ক্ষমতা বদলের সম্ভাবনা প্রবল বলেই মনে করা হচ্ছে। বুথফেরত সমীক্ষাগুলিতেও এমন সম্ভাবনারই ইঙ্গিত মিলেছে।
১২৬ আসনের অসম বিধানসভায় ২০১৬ সালে ৬০টিতে জিতেছিল বিজেপি। দুই সহযোগী দল অসম গণ পরিষদ (অগপ) এবং বিপিএফ জিতেছিল ১৪ এবং ১২টিতে। আলাদা লড়ে কংগ্রেস ২৬ এবং এআইইউডিএফ ১৩টিতে জেতে। এ বার এআইইউডিএফ এবং বিপিএফের পাশাপাশি সিপিআই (এমএল লিবারেশন)-সহ তিন বাম দল, আরজেডি-র সঙ্গে সমঝোতা করেছে কংগ্রেস। এনআরসি-সিএএ বিরোধী আন্দোলনের নেতা অজিত ভুঁইয়ার দল আঞ্চলিক গণ মোর্চাও এই জোটে সামিল।
অন্য দিকে, বিপিএফের বদলে কংগ্রেসের প্রাক্তন সহযোগী বড়ো জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক দল ইউপিপিএল-এর সঙ্গে এ বার জোট গড়েছে বিজেপি। অগপ-ও ফের পদ্ম শিবিরের সঙ্গেই গাঁটছড়া বেঁধেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশ মনে করছেন, বিধানসভা ভোটে কড়া লড়াইয়ের পরে ক্ষমতায় ফিরতে পারেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল। অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষাতেও এগিয়ে রাখা হয়েছে বিজেপি-জোটকে। তবে নিম্ন অসম, বড়ো স্বশাসিত অঞ্চল এবং বরাক উপত্যকায় বিজেপি-কে বিপাকে ফেলতে পারে জোট। ছাত্র সংগঠন ‘আসু’র প্রাক্তন নেতাদের গড়া দল অসম জাতীয় পরিষদ এবং সমাজকর্মী অতুল গগৈয়ের রাইজর দল উজান অসমের কয়েকটি কেন্দ্রে বিজেপি-কে প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে ফেলতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরলে দীর্ঘ দিন ধরেই ৫ বছর অন্তর সরকার বদলের ইতিহাস রয়েছে। বরাবরের মতো এ বারও সেখানে মূল লড়াই কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউডিএফ এবং সিপিএম নেতৃত্বাধীন এলডিএফ জোটের মধ্যে। বিজেপি সেখানে এ বারও ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে নেই। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে এ বার অধিকাংশ বুথফেরত সমীক্ষা মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়নের নেতৃত্বাধীন এলডিএফ জোটের ক্ষমতায় ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছে। গত বছর সোনা পাচার কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়লেও কোভিড পরিস্থিতিতে বিজয়ন সরকারের ভূমিকা প্রশংসা পেয়েছে। তা ছাড়া, মধ্য কেরলের প্রভাবশালী আঞ্চলিক দল কেরল কংগ্রেস (মণি)-র ইউডিএফ ছেড়ে সিপিএমের জোটে যোগ দেওয়া এবং ভোটের মুখে পি সি চাকোর মতো প্রভাবশালী কংগ্রেস নেতার দলত্যাগ ‘পরিবর্তনের ঐতিহ্য’ ভেঙে দিতে পারে বলে ভোট বিশেষজ্ঞদের অনেকে মনে করছেন। যদিও ১৪০ আসনের কেরল বিধানসভায় দুই জোটের ব্যবধান খুব বেশি হবে না বলেই অধিকাংশ বুথ ফেরত সমীক্ষার পূর্বাভাস।
কেরলের পাশের রাজ্য তামিলনাড়ুতেও আশির দশকের শেষ পর্ব থেকে ৫ বছর অন্তর সরকার বদলের পরম্পরার সূচনা হয়েছিল। কিন্তু ২০১১ এবং ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে জিতে সেই ধারার অবসান ঘটান এডিএমকে নেত্রী জয়ললিতা। এ বার আম্মার অবর্তমানে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে দীর্ণ এডিএমকে-র ক্ষমতা থেকে বিদায় কার্যত নিশ্চিত। বিজেপি এবং আঞ্চলিক দল পিএমকে-র সঙ্গে জোট করলেও ২৩৪ আসনের তামিলনাড়ু বিধানসভায় পলানীস্বামী-পন্নীরসেলভমের দলের আসন সংখ্যা ৫০-এক নীচে নেমে যেতে পারে বলে ইঙ্গিত মিলেছে একাধিক সমীক্ষায়। অন্যদিকে, কংগ্রেস এবং বামেদের সঙ্গে আসন সমঝোতা করে দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জিততে পারেন প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এম করুণানিধির ছেলে তথা ডিএমকে প্রধান এম কে স্ট্যালিন।
দুই প্রধান প্রতিপক্ষের বাইরে কয়েকটি আসন পেতে পারে আরও দু’টি জোট। প্রথমটিতে আছে, জয়ললিতার সঙ্গী শশীকলার ভাইপো তথা প্রাক্তন এডিএমকে নেতা টি টি ভি দীনাকরণের দল এএমএমকে এবং চিত্রতারকা তথা প্রাক্তন বিরোধী দলনেতা বিজয়কান্তের ডিএমডিকে। দ্বিতীয় জোটটি দুই অভিনেতা কমল হাসন এবং শরথকুমারের দল এমএনএম এবং এআইএসএমকে-র।
তামিলনাড়ু বেষ্টিত পুদুচেরিতে গত বিধানসভা ভোটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছিল কংগ্রেস-ডিএমকে জোট। কিন্তু শাসকজোটের কয়েকজন বিধায়কের দলত্যাগের জেরে সেখানে ফেব্রুয়ারিতে মুখ্যমন্ত্রী ভি নায়ায়ণস্বামীর নেতৃত্বাধীন সেই সরকারের পতন ঘটে। পরাজয়ের আশঙ্কায় এ বার প্রার্থীই হননি কংগ্রেস নেতা নারায়ণস্বামী। ডিএমকে-র সঙ্গে আসন রফা হলেও ভোটপর্বের মাঝেই দুই সহযোগীর মতবিরোধ প্রকাশ্যে এসেছে বারবার। অন্যদিকে, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা এনআর কংগ্রেসের প্রতিষ্ঠাতা এন রঙ্গস্বামীর দলের সঙ্গে এ বার জোট গড়েছে বিজেপি। এডিএমকে-ও রয়েছে এই জোটে। ৩০ আসনের পুদুচেরিতে এ বার পদ্ম শিবিরের বিপুল জয় নিশ্চিত বলেই সবক’টি বুথ ফেরত সমীক্ষার ইঙ্গিত।