Tea leaves

চিনে শিকড় ছত্রাকের, অসমে চায়ের রোগ ধরলেন গবেষকেরা

শিলচরের এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক পীযূষ পাণ্ডে জানান, অসমের বিভিন্ন চা বাগানের গাছ এই লিফ নেক্রোসিসে আক্রান্ত হয়েছে।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ০৯:০৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

কোভিড অতিমারির আঁতুড় বলে গোটা বিশ্ব আঙুল তুলেছিল চিনের দিকে। এ বার আরও একটি উদ্বেগজনক অসুখের উৎস হিসেবে সেই চিনকেই চিহ্নিত করলেন ভারতীয় গবেষকেরা। এই রোগ অবশ্য মানুষের নয়, গাছের। চা পাতার গুণমান নষ্টের কারণ খুঁজতে নেমে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষক দল চা গাছের ‘লিফ নেক্রোসিস’ রোগ ধরতে পেরেছে। এই রোগের সঙ্গে চিনের যোগ প্রমাণিত হয়েছে বলেই গবেষকদের দাবি।

Advertisement

শিলচরের এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক পীযূষ পাণ্ডে জানান, অসমের বিভিন্ন চা বাগানের গাছ এই লিফ নেক্রোসিসে আক্রান্ত হয়েছে। ‘ল্যাজিওডিপ্লডিয়া থিওব্রমি’ নামের এক ধরনের ছত্রাক থেকে এই রোগের সৃষ্টি। অধ্যাপক পাণ্ডের দাবি, লিফ নেক্রোসিস বা ল্যাজিওডিপ্লডিয়া থিওব্রমির কথা ভারতে চায়ের গবেষণায় আগে কখনওই শোনা যায়নি। এর আগে এই রোগ ও ছত্রাক একমাত্র চিনেই দেখা গিয়েছিল বলে নানা গবেষণাপত্রে উল্লেখ রয়েছে।

আন্তর্জাতিক গবেষণা পত্রিকা ‘আর্কাইভস অব মাইক্রোবায়োলজি’-র চলতি বছরের জুন সংখ্যায় আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণা সংক্রান্ত নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে। এর পরেই চা শিল্প মহলে এ নিয়ে চর্চা শুরু হয়। রোজকান্দি টি এস্টেটের জেনারেল ম্যানেজার ঈশ্বরভাই ওবাদিয়া বলেন, ‘‘এই গবেষণায় অসমের চা শিল্প বড় উপকৃত হল। এখন প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’’ এই গবেষণাকে অসমের চা শিল্পের জন্য ‘বড় কাজ’ বলে উল্লেখ করেছেন টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার বরাক ভ্যালি শাখার সচিব শরদিন্দু ভট্টাচার্য।

Advertisement

অধ্যাপক পাণ্ডে জানান, অসমে চায়ের গুণমান বৃদ্ধির জন্য নানা কৌশল নেওয়া হলেও প্রত্যাশিত ফল কেন মিলছে না, তারই কারণ অনুসন্ধানের দায়িত্ব তাঁদের দিয়েছিল ভারত সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রকের মাইক্রোবায়োলজি দফতর। অধ্যাপক পাণ্ডের তত্ত্বাবধানে কাছাড় ও ডিব্রুগড় জেলার বিভিন্ন চা বাগানে ঘুরে মূল কাজটা করেছেন গবেষক খেয়ালি ঘোষ। সঙ্গে ছিলেন আরও তিন গবেষক সন্দীপ দাস, নন্দিতা দাস ও শিল্পী সরঙপঙ।

পাণ্ডের কথায়, প্রথমে তাঁদের মনে হয়েছিল, কর্টিসিয়াম ছত্রাকের প্রভাবে চা গাছগুলি ‘ব্ল্যাক রুট’ রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। পরে দু’বছর ধরে গবেষণা চালিয়ে তাঁরা নিশ্চিত হন, গাছগুলির আসলে লিফ নেক্রোসিস রোগ হচ্ছে। পাণ্ডের কথায়, লিফ নেক্রোসিস রোগের কারণ যে ল্যাজিওডিপ্লডিয়া থিওব্রমি ছত্রাক, তার চিহ্ন অসমের দুই প্রান্তের চা বাগানেই মিলেছে। এ নিয়ে দেশের অন্যত্রও গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। প্রয়োজন এর প্রতিকারের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণেরও।

আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য রাজীবমোহন পন্থ এমন এক গবেষণার জন্য পাণ্ডে ও তাঁর দলের গবেষকদের অভিনন্দন জানান। তিনি বলেন, ‘‘এই অঞ্চলের চা শিল্পের উন্নতিতে আসাম বিশ্ববিদ্যালয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement