মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। —ফাইল চিত্র
অসমের ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন্স (এনআরসি) বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা নিয়ে এ বার তোপ দাগলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ফকরুদ্দিন আলি আহমেদের পরিবারের সদস্য থেকে শুরু করে সিআরপিএফ ও অন্যান্য বাহিনীর জওয়ানদের বাদ পড়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে ভারতীয়দের নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার কথা বলেছেন মমতা। উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রায় এক লক্ষ গোর্খার নাম তালিকাভুক্ত না হওয়া নিয়েও।
শনিবারই অসমে নাগরিকপঞ্জির চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। তাতে বাদ পড়েছেন ১৯ লক্ষ মানুষ। নথিপত্র-সহ নতুন করে তাঁদের ফরেনার্স ট্রাইবুনালে নাগরিকত্বের প্রামাণ দিতে হবে। এই বাদ পড়া নিয়েই সরব বিরোধীরা। এমনকি, অসমের বিজেপি নেতারাও এ নিয়ে আপত্তি তুলেছেন। ফের তালিকা খতিয়ে দেখার দাবি জানিয়েছেন অসমের মন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
তৃণমূল বরাবরই এনআরসি-র বিরুদ্ধে। শনিবার তালিকা প্রকাশের পর থেকেই একাধিক নেতা এ নিয়ে মুখ খুলেছেন। এ বার পর পর টুইটে প্রকৃত ভারতীয়রা যাতে তালিকা থেকে বাদ না যান, সেই আর্জি জানালেন মমতা। তিনি লিখেছেন, ‘প্রকৃত ভারতীয়রা যাতে তালিকা থেকে বাদ না যান, এবং সমস্ত আইনি ব্যবস্থা সুনিশ্চিত থাকে সেটা সরকারকে দেখতে হবে।’
আরও পড়ুন: আক্রান্ত অর্জুন সিংহ, ফাটল মাথা, পার্টি অফিস দখল ঘিরে রণক্ষেত্র গোটা ব্যারাকপুর
প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের অনেকেই তালিকাভুক্ত না হওয়ার খবরে এনআরসি নিয়ে বারবারই প্রশ্ন উঠেছে। সেই বিষয়টিকেই হাতিয়ার করে মমতার তোপ, ‘সিআরপিএফ-সহ অন্যান্য বাহিনীর জওয়ান থেকে শুরু করে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতির পরিবারের সদস্য—এ রকম হাজার হাজার প্রকৃত ভারতীয় নাগরিক এনআরসি থেকে বাদ পড়েছেন।’’
এর পর বিপুল সংখ্যক গোর্খা সম্প্রদায়ের মানুষের নাম নেই তালিকায়। এই বিষয়টি উল্লেখ করে মমতার টুইট, ‘আগে পুরো এনআরসির বিষয়টি জানতে পারিনি। যত তথ্য আসছে, জানতে পারছি, গোর্খা সম্প্রদায়ের এক লাখ লোক বাদ পড়েছেন।’ অসমবাসীর পাশে থাকার কথা আগেই বলেছিলেন তৃণমূলের নেতারা।
আরও পড়ুন: ‘প্রতিহিংসার রাজনীতি ছাড়ুন’, জিডিপি বৃদ্ধির হার নিয়ে মোদী সরকারকে কটাক্ষ মনমোহনের
লোকসভা নির্বাচনের আগে ভোটপ্রচারে এসে এ রাজ্যেও এনআরসি চালু করার কথা বলেছিলেন অমিত শাহ। কিন্তু এ রাজ্যে যে কোনও ভাবেই এনআরসি করতে দেওয়া হবে না, তা আগেই বলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। অসম এনআরসির বিরুদ্ধে তোপ দেগে দলের সেই অবস্থানই তৃণমূল নেত্রী আরও এক বার স্পষ্ট করলেন বলেই মত রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের।
গোর্খাদের বাদ পড়া নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে গোর্খা জনমু্ক্তি মোর্চার বিনয় তামাংদের অংশও। বিবৃতি জারি বৈষম্যে অভিযোগ তুলে তীব্র প্রতিবাদও করেছেন বিনয়। তিনি জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার একটি প্রতিনিধি দল অসম পরিদর্শন করবে। লোকসভা ভোটের প্রচারে বিজেপি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল, এনআরসির জন্য ভারতীয় গোর্খাদের এক জনও সমস্যায় পড়বেন না। সেই প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেছেন, ‘দার্জিলিংয়ের সাংসদ রাজু বিস্তা, বিজেপি বিধায়ক নীরজ তামাং জিম্বা, বিমল গুরুং, রোশন গিরিদের এবং বাংলা ও অসমের বিজেপি নেতাদের প্রশ্ন করতে চাই, অসমের এক লাখ গোর্খা সম্প্রদায়ের মানুষের কী হল? বিজেপি এবং তার শরিকদেরই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে।’