গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
মধ্যপ্রদেশের বিতর্কিত ভোজশালা চত্বরের ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র রিপোর্ট পেশ করল ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া বা এএসআই)। সোমবার মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টে ওই রিপোর্ট জমা পড়েছে। মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের ইনদওর বেঞ্চে জমা পড়া ওই ২,০০০ পাতার রিপোর্টে ভোজশালার জমির তলায় দেবদেবীর মূর্তি এবং মন্দিরের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়েছে বলে হিন্দুত্ববাদীদের দাবি।
মধ্যপ্রদেশের ধার শহরে প্রায় হাজার বছরের পুরনো ওই কামাল মওলানার দরগা এবং মসজিদ রয়েছে এএসআই-এর তত্ত্বাবধানে। হিন্দুত্ববাদীদের দাবি, সৌধটি আসলে রাজা ভোজের তৈরি প্রাচীন সরস্বতী মন্দির। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী প্রতি মঙ্গলবার হিন্দুদের পুজো দিতে দেওয়া হয় ভোজশালায়। মুসলিমদের শুক্রবারে নমাজ পড়তে দেওয়া হয়। সপ্তাহের অন্যান্য দিন যে কেউ প্রবেশ করতে পারেন। তবে সেই দিনগুলিতে কাউকে পুজো দিতে বা নমাজ পড়তে দেওয়া হয় না এই ঐতিহাসিক সৌধে।
কিন্তু সেই ব্যবস্থায় ইতি টানতে হাই কোর্টের ২০২২ সালে আদালতের দ্বারস্থ হয় হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি। আবেদনকারী পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর জৈন মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টকে জানান, ২০০৩ সালের একটি নোটিসের জেরে মুসলিমদের ভোজশালায় নমাজের অধিকার দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু পুরাতাত্ত্বিক প্রমাণ খতিয়ে দেখলে বোঝা যাবে, সেটি আসলে হিন্দু মন্দির। বারাণসীর জ্ঞানবাপীর মতো ভোজশালাতেও এএসআই-এর ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’র আবেদন জানানো হয়েছিল হিন্দু পক্ষের তরফে।
গত ১১ মার্চ মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্ট সেই আবেদন মেনে রায় ঘোষণার পরে ভোজশালায় সমীক্ষার কাজও শুরু হয়। কিন্তু মুসলিম পক্ষ সেই রায় চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানিয়েছিল। কিন্তু চলতি বছরের ১ এপ্রিল ‘বৈজ্ঞানিক সমীক্ষা’য় ছাড়পত্র দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। সেই সঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি হৃষীকেশ রায় এবং বিচারপতি পিকে মিশ্রের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল, কোনও অবস্থাতেই ওই বিতর্কিত কাঠামোর ‘চরিত্র’ বদলের চেষ্টা বরদাস্ত করা হবে না।
কেন্দ্রীয় সরকার, মধ্যপ্রদেশ সরকার এবং সে রাজ্যের ধার জেলা প্রশাসনকে সেই নির্দেশ পালন করতে বলা হয়েছিল। যদিও হিন্দুত্ববাদী পক্ষের আইনজীবী হরিশঙ্কর সোমবার বলেন, ‘‘ভোজশালা মন্দিরে ৯৪টি ভাঙা দেবদেবীর মূর্তির সন্ধন মিলেছে। সেই সঙ্গে পাথরে খোদাই করা পশুদের অবয়বও শনাক্ত হয়েছে।’’ তাঁর দাবি, মুসলিমদের ধর্মস্থানে পশুদের মূর্তি থাকে না। তাই ভোজশালায় নমাজ বন্ধ করা উচিত। প্রসঙ্গত, গত ফেব্রুয়ারিতে এএসআই রিপোর্টে ‘হিন্দুত্বের অস্তিত্বের’ কথা জানানোর পরেই জ্ঞানবাপীর ‘ব্যাস কা তহ্খানা’য় পূজার্চনার অনুমতি দিয়েছিল বারাণসী জেলা আদালত।