প্রতীকী ছবি।
আইফোনে হ্যাক-বার্তা পাঠানোর ঘটনায় কেন্দ্রের নোটিসের জবাব দেবেন অ্যাপল কর্তৃপক্ষ। সংস্থার একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, লিখিত জবাবের পাশাপাশি সংস্থার তরফে উচ্চপদস্থ আধিকারিকেরা নরেন্দ্র মোদী সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের সংশ্লিষ্ট কমিটির সামনে হাজির হয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যা দিতে পারেন।
বৃহস্পতিবার ‘রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকিং’-এর প্রমাণ দিতে অ্যাপলকে নোটিস পাঠিয়েছিল কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রক। কেন্দ্রীয় সচিবালয়ের এক আধিকারিকের মন্তব্য উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছিল, তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত সংসদের স্ট্যান্ডিং কমিটি তাদের পরবর্তী বৈঠকে অ্যাপলের প্রতিনিধিকে ডেকে পাঠানোর কথা ভাবছে।
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার ওই মোবাইল ফোন নির্মাতা সংস্থাটি জানিয়েছে, নোটিস পাওয়ার পরে ভারত সরকারের কাছে হ্যাক-বার্তার ‘কারণ’ ব্যাখ্যা করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলছে। প্রসঙ্গত, তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রকের অধীনস্থ সংস্থা ‘ভারতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা’ (ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা ‘সিইআরটি-ইন’) কয়েক জন বিরোধী নেতা-নেত্রীর ফোনে অ্যাপলের হ্যাক-বার্তার ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে রয়েছে।
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র গত ৩১ অক্টোবর (মঙ্গলবার) আমেরিকার সংস্থা অ্যাপলের মেসেজ এবং ইমেল নোটিফিকেশনের স্ক্রিনশট এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে দাবি করেছিলেন, তাঁর আইফোন নরেন্দ্র মোদী সরকার হ্যাক করতে চাইছে বলে ওই সতর্কবার্তা এসেছে। সেই হ্যাক-বার্তায় লেখা, ‘‘রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারেরা আপনাকে ‘টার্গেট’ করেছে। অ্যাপল আইডির সঙ্গে আপনার যে আইফোনটি যুক্ত করা আছে, সেটি হ্যাক করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আপনি কে, কী করেন— সম্ভবত এ সব দেখে হ্যাকারেরা নির্দিষ্ট করে আপনাকেই ‘টার্গেট’ করেছে।’’
ওই হ্যাক-বার্তায় অ্যাপল থেকে আরও বলা হয়েছে, ‘‘এই রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারেরা যদি আপনার আইফোনে এক বার ঢুকতে পারে, আপনার ব্যক্তিগত তথ্য, কথোপকথন এমনকি ক্যামেরা এবং মাইক্রোফোনও ওদের হাতে চলে যাবে। তাই দয়া করে এই সতর্কবার্তাকে উপেক্ষা করবেন না।’’ মহুয়ার পাশাপাশি, কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, শিবসেনার প্রিয়ঙ্কাও অ্যাপল সংস্থা থেকে পাওয়া ‘সতর্কবার্তার’ কথা জানিয়েছেন। একই অভিযোগ এসেছে আপ সাংসদ রাঘব চড্ডা, সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরির তরফেও। মহুয়ার দাবি, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব এবং কংগ্রেসের পবন খেড়ার কাছেও অ্যাপলের তরফে হ্যাকিংয়ের সম্ভাবনা সংক্রান্ত একই সতর্কবার্তা (অ্যালার্ট মেসেজ) এসেছে। সতর্কবার্তায় স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছে, ‘রাষ্ট্র পরিচালিত হ্যাকারেরাই এই কাজ করছে’।
মহুয়ার অভিযোগের পরেই বুধবার কেন্দ্রীয় তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণো মঙ্গলবারের ঘটনার সাফাই দিয়ে দাবি করেছিলেন, অ্যাপলের তরফে ওই সতর্কবার্তা আরও অন্তত দেড়শোটি দেশে গিয়েছে। তিনি বলেছিলেন, ‘‘সব সময় এমন সতর্কবার্তা সত্যি হয়, তা নয়। এই বার্তাও সেই রকম ‘ফল্স অ্যালার্ম’ হতে পারে।” তবে একই সঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘‘ওই বার্তা কেন এল, তা জানতে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছি। যাঁরা ওই সতর্কবার্তা পেয়েছেন, তাঁরা যেন তদন্তে সহযোগিতা করেন।’’ সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে, ‘অ্যালগরিদ্মের ত্রুটি’র কারণেই এমন বার্তা পেয়েছেন অনেক নেতা। শিবসেনা সাংসদ প্রিয়ঙ্কা একে ‘হাস্যকর অজুহাত’ বলেছেন। তাঁর প্রশ্ন, বেছে বেছে কেন শুধু বিরোধী নেতাদেরই হ্যাক-বার্তা পাঠাল অ্যাপল?
বিরোধী নেতাদের কাছে পাঠানো আইফোন হ্যাক সংক্রান্ত সতর্কবার্তা প্রসঙ্গে মঙ্গলবারই ‘সাফাই’ দিয়েছিল অ্যাপল। টেকনিক্যাল সাপোর্ট পেজে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছিল, রাষ্ট্র পরিচালিত হামলাকারীরা সাধারণত আর্থিক ভাবে পুষ্ট এবং অত্যাধুনিক হয়। গোয়েন্দাদের হুঁশিয়ারির উপর নির্ভর করে এ ধরনের হামলা ধরতে গেলে দেখা যায়, তা অনেক সময়ই ত্রুটিযুক্ত এবং অসম্পূর্ণ। সংস্থার তরফে আরও জানানো হল, কিছু নোটিফিকেশন অনেক সময়ই মিথ্যে সঙ্কেত হতে পারে। আবার অনেক হামলা ধরাই পড়ে না। পাশাপাশি, সংস্থার বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘এই নিয়ে আর তথ্য দেওয়া সম্ভব নয়। কারণ, এর ফলে রাষ্ট্র পরিচালিত হামলাকারীরা ভবিষ্যতে ধরা পড়া থেকে বাঁচার পথ পেয়ে যাবে।’’