ভাষণ দিচ্ছেন কেজরীবাল। ছবি: টুইটার থেকে সংগৃহীত।
কে, কাকে ভোট দিয়েছেন জানার প্রয়োজন নেই, বিজেপি, কংগ্রেস নির্বিশেষে সকলের মুখ্যমন্ত্রী তিনি। তৃতীয় বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিয়ে এমনটাই জানিয়ে দিলেন অরবিন্দ কেজরীবাল। এর আগে ভোটে জয়লাভের পরেও বিজেপির নাম মুখে আনেননি তিনি। কিন্তু রবিবার শপথ গ্রহণের পর কেজরীবাল জানিয়ে দেন, মানুষ বিজেপি ভোট দিয়ে থাকুন বা কংগ্রেসকে, তিনি সকলের মুখ্যমন্ত্রী। সকলের জন্য কাজ করাই তাঁর লক্ষ্য।
এ দিন কেজরীবাল বলেন, ‘‘কেউ আপকে ভোট দিয়েছেন, কেউ বিজেপিকে। কেউ কংগ্রেসকে ভোট দিয়েছেন, তো কেউ আবার অন্য কোনও দলকে। কিন্তু শপথ নেওয়ার পর আজ থেকে আমি আপনাদের সকলের মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি, কংগ্রেস-সহ সব দলের মুখ্যমন্ত্রী আমি। গত পাঁচ বছর শুধু কাজ করে গিয়েছি। কাজের ক্ষেত্রে কোনও ভেদাভেদ করিনি। কেউ বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন বলে তাঁর কাজ করব না বলিনি। সবার জন্য কাজ করেছি। বিজেপির এলাকাতেও রাস্তা তৈরি করেছি। পানীয় জলের পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছি। তাই ২ কোটি দিল্লিবাসীর কাছে আর্জি, নির্বাচন শেষ। যাকেই ভোট দিয়ে থাকুন না কেন, আজ থেকে আপনারা সকলে আমার পরিবার। যে কোনওরকম প্রয়োজনই হোক না কেন, নির্দ্বিধায় আমার কাছে চলে আসবেন। কে কোন পার্টির, কে কোন ধর্মের, কো কোন জাতের দেখব না আমি।’’
নির্বাচনী প্রচার চলাকালীন কেজরীবালকে ‘সন্ত্রাসবাদী’ বলে কটাক্ষ করেছিলেন বিজেপি নেতৃত্ব। এ দিন সরাসরি তা উল্লেখ না করলেও, কেজরীবাল জানিয়ে দেন, ভোটের সময় যে, যা বলেছেন, সব ক্ষমা করে দিয়েছেন তিনি। কেজরীবাল বলেন, ‘‘দিল্লির জন্য আরও অনেক কাজ বাকি। আমি একা করতে পারব না। সকলে মিলে করতে হবে। নির্বাচন শেষ। যেমন রাজনীতি হয়, হয়েছে। আমাকে অনেক কথা বলা হয়েছে। কিন্তু বিরোধীরা আমাকে যা বলেছেন, সব ক্ষমা করে দিয়েছি আমি। ওঁদের কাছে অনুরোধ, রাজনীতিতে যা হয়েছে সব ভুলে যান। সকলের সঙ্গে মিলে দিল্লির উন্নতি করতে চাই আমি।’’
কেজরীবালের ভাষণ।
আরও পড়ুন: জামিয়ার লাইব্রেরিতে ঢুকে পুলিশের এলোপাথাড়ি লাঠি, সেই ঘটনার ভিডিয়ো এ বার প্রকাশ্যে এল
বিভাজন ও বৈষম্যের রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে বরাবর কাজকেই অগ্রাধিকার দিয়েছেন তিনি, আগামী পাঁচ বছরও দিল্লির উন্নতিতেই কাজ করে যেতে তিনি বদ্ধপরিকর বলেও জানিয়ে দেন কেজরীবাল। তাঁর কথায়, ‘‘দিল্লিবাসী, আপনারা নতুন রাজনীতির জন্ম দিয়েছেন। কাজকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন। এই রাজনীতি দুর্নীতিমুক্ত ভারত গড়ার রাজনীতি, ২১ শতকের ভারতের রাজনীতি। দেশের সর্বত্র এই নতুন রাজনীতি ছড়িয়ে পড়ুক। তাই অনেকেই বিনামূল্যে ১০০ ইউনিট, ২০০ ইউনিট বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা বলছেন। দিল্লিবাসী, আপনাদের জন্যই এটা সম্ভব হয়েছে। এখন কোনও নেতা যদি বলেন সরকারি স্কুলের কিছু হবে না, মানুষ বলেন দিল্লিকে দেখে শিখুন। দিল্লির মানুষ দেশের রাজনীতির সংজ্ঞা পাল্টে দিয়েছেন।নেতা আসবে যাবে, দল আসবে যাবে, উন্নতির চাবিকাঠি মানুষের হাতেই।’’
এ দিন শপথ অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন কেজরীবাল। বারাণসী সফরে যাওয়ায় অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারেননি তিনি। সে প্রসঙ্গে কেজরীবাল বলেন, ‘‘কেন্দ্র সরকারের সঙ্গে মিলে দিল্লিকে পৃথিবীর এক নম্বর শহর বানাতে চাই আমি। আজকের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। কিন্তু অন্য অনুষ্ঠানে ব্যস্ত উনি। তাই আসতে পারেননি। দিল্লির উন্নতির জন্য ওঁর কাছে এবং কেন্দ্রীয় সরকারের কাছেও আশীর্বাদ চাইছি।’’
আরও পড়ুন: করোনায় মৃত্যু ফ্রান্সে, এই প্রথম ইউরোপে, সংক্রমণ রুখতে নোটবন্দি চিনে
বিনামূল্যে মানুষের কাছে নানা পরিষেবা পৌঁছে দিয়েছেন বলেই কেজরীবাল ভোটে জিতেছেন বলে গত কয়েক দিন ধরেই সরব হয়েছে বিরোধীরা। এ দিন তাদেরও একহাত নেন কেজরীবাল। তাঁর বক্তব্য, ‘‘পৃথিবীতে যা কিছু অমূল্য, তা বিনামূল্যেই দিয়েছেন ভগবান। সরকারি স্কুলে পড়ুয়াদের কাছ থেকে টাকা নেব কেন? হাসপাতালে কেন বিনামূল্যে চিকিৎসা পাবেন না মানুষ? কেজরীবাল দিল্লিকে ভালবাসেন, দিল্লিবাসীও কেজরীবালকে ভালবাসেন, এই ভালবাসার কোনও মূল্য হয় না।’’