বছরে ১২ লক্ষ বায়ুদূষণের বলি, বলছে রিপোর্ট

যে বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি, দূষণের কারণে সেই বাতাসই এখন নিঃশব্দে ঘাতকে পরিণত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে পরিবেশবিদরা।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০১৯ ০১:০৯
Share:

মুখোশ-মা: দূষণের মাত্রা প্রবল। তাই বারাণসীর শিব-পার্বতী মন্দিরে শিব, দুর্গা, কালী ও সাই বাবার বিগ্রহের মুখে দূষণরোধী মুখোশ পরালেন মন্দির কর্তৃপক্ষ। মন্দিরের পুরোহিত হরিশ মিশ্র জানাচ্ছেন, বারাণসীতে বিগ্রহকে জীবন্ত বলে মনে করেন অনেকে। সেই বিশ্বাস থেকেই এই ব্যবস্থা। ছবি: সোশ্যাল মিডিয়া

নিঃশব্দ ঘাতক!

Advertisement

যে বাতাসে শ্বাস-প্রশ্বাস নিচ্ছি, দূষণের কারণে সেই বাতাসই এখন নিঃশব্দে ঘাতকে পরিণত হয়েছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসক থেকে পরিবেশবিদরা। আমেরিকার হেল্থ এফেক্ট ইনস্টিটিউট জানিয়েছে, গোটা ভারতে বছরে স্রেফ বিষাক্ত বায়ুতে শ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়ার কারণে মারা যাচ্ছেন প্রায় ১২ লক্ষ মানুষ। সারা বিশ্বের বাতাসের মান পরীক্ষা করে ওই প্রতিষ্ঠান জানিয়েছে, গোটা পৃথিবীর প্রায় ৫০ লক্ষ মানুষ ফি বছর বায়ুদূষণের কারণে মারা যাচ্ছেন। অর্থাৎ বায়ুদূষণ বিশ্বের ৯.৮৭ শতাংশ মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, বায়ুদূষণজনিত মৃত্যুর তালিকায় শীর্ষে রয়েছে ভারত ও চিন। দু’দেশেই বছরে ১২ লক্ষ করে লোক অর্থাৎ প্রায় ২৪ লক্ষ লোক বায়ু দূষণের কারণে অকালে মারা যাচ্ছেন।

চিকিৎসকদের মতে, বায়ুদূষণের সবচেয়ে খারাপ প্রভাব পড়ে শিশুদের দেহে। এমসের চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ‘গ্লোবাল বার্ডেন অব ডিজিজ’ রিপোর্ট অনুযায়ী ২০১৭ সালে বছরে ভারতে প্রায় ১.৯৫ লক্ষ শিশুর মৃত্যুর পিছনে কারণ ছিল বায়ু দূষণ। অর্থাৎ গড়ে প্রতি দিন প্রায় ৫৩৫ জন শিশুর জীবন কেড়ে নিচ্ছে দূষিত বাতাস। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, গত তিন দশকে বায়ুদূষণের কারণে এক কোটির বেশি শিশু পাঁচ বছর বয়স হওয়ার আগেই মারা গিয়েছে।

Advertisement

আরও পড়ুন: বায়ু দূষণের জের মন্দিরেও, বিগ্রহেও মুখোশ

শিশু দেহে বায়ুদূষণের প্রভাব নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন এমসের ফুসফুস বিশেষজ্ঞ রণদীপ গুলেরিয়া। তাঁর মতে, দীর্ঘ সময় দূষিত বায়ুতে থাকলে শিশু দেহে মারাত্মক প্রভাব হয়। গুলেরিয়ার মতে, এ ধরনের শিশুদের বয়সের তুলনায় ফুসফুস সঠিক ভাবে বেড়ে ওঠে না। একটু বড় হলে এদের মধ্যে শ্বাসকষ্টজনিত রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অন্যদের তুলনায় অনেকাটাই বেড়ে যায়। যাদের

জন্মগত হাঁপানির সমস্যা রয়েছে তাদের চিত্রটি আরও খারাপ। চিকিৎসকদের মতে, ধূমপানে কোনও ব্যক্তির ফুসফুসে যতটা ক্ষতি হয়, বায়ু দূষণের কারণে দিল্লি ও সংলগ্ন এলাকার মানুষের ফুসফুসের অবস্থাও প্রায় ততটাই খারাপ।

চিকিৎসকদের কাছে মূল উদ্বেগের বিষয় হল দিল্লির বাতাসে ভাসমান ক্ষতিকর কণার উপস্থিতি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বা হু’-র মতে এ দেশের প্রায় ৯৮ শতাংশ শিশুই কোনও ভাবে ক্ষতিকর কণার শিকার। মূলত ক্ষেতের আগাছা পোড়ানো ধোঁয়া দিল্লির বায়ু দূষণের মূল কারণ হওয়ায় বাতাসে ক্ষতিকর ভাসমান পিএম২ ও পিএম১০ কণার উপস্থিতি স্বাভাবিকের কয়েক গুণ বেশি থাকে। যা শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে সোজা ফুসফুস ও রক্তে মিশে যায়। রক্তে ক্ষতিকর কণার উপস্থিতির ফলে অনেক সময়ে ধমনী ফুলে যায়। বাধা পায় রক্তপ্রবাহ। যার ফলে হৃদ্‌রোগে আক্রান্ত বা স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এমসের একটি সূত্রের দাবি, ফি বছর বায়ু দূষণের শিকার হওয়ায় আশি শতাংশ দিল্লিবাসীর ফুসফুসের অবস্থা দেশের অন্য প্রান্তের মানুষের চেয়ে খারাপ। প্রতি বছর শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বাড়ছে। এ বছরে এমসে প্রায় কুড়ি শতাংশ বেশি রুগি শ্বাসকষ্টজনিত কারণে ভর্তি হয়েছেন।

দ্য এনার্জি অ্যান্ড রিসোর্স ইনস্টিটিউট (টেরি) সংস্থার গবেষক অরিন্দম দত্তের মতে, শুধু দিল্লি নয়, বায়ু দূষণের শিকার রাজধানী সংলগ্ন অঞ্চল ছাড়াও কানপুর ও বারাণসী-গাঙ্গেয় অববাহিকার বাসিন্দারা। ভারতের জনসংখ্যার ৪০ শতাংশ মানুষ থাকেন এখানে। হু’-এর মতে, গত দু’দশকে অববাহিকায় বায়ু দূষণ বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের গড় আয়ু কমেছে অন্তত সাত বছর।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement