গুপ্ত যুগের উদ্ধার হওয়া মন্দির। টুইটার
মাটির নীচে থেকে উদ্ধার হল প্রায় ১,৫০০ বছর পুরনো একটি মন্দিরের ভগ্নাবশেষ। ঘটনাস্থল, উত্তরপ্রদেশের এটাওয়া জেলার বিলসার গ্রাম। ভারতীয় পুরাতাত্ত্বিক সর্বেক্ষণের (এএসআই) উদ্ধার করা এই নিদর্শন গুপ্ত যুগের বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা। উদ্ধার হয়েছে শঙ্খলিপিতে লেখা নিদর্শনও।
বিলসার গ্রামটি প্রাচীন একটি টিলার উপর অবস্থিত। ১৯২৮ সালে বিলসারকে সংরক্ষিত এলাকা বলে ঘোষণা করে এএসআই। তার পর থেকে এখানে সময়-সুযোগ অনুযায়ী একটু একটু করে খননকাজ চালাচ্ছে বিভাগ। এ বছর অগস্টের শেষের দিকে সেই কাজে নেমে আগেই উদ্ধার হওয়া দু’টি স্তম্ভ আরও একটু গভীরে সমীক্ষা করতে আশপাশে আরও খননকাজ চালায় এএসআই। সেই সূত্রে একটি প্রাচীন সিঁড়ি নজরে আসে তাঁদের। তার গায়ে শঙ্খলিপির নিদর্শন দেখতে পায় খননকাজের দায়িত্বে থাকা দলটি। মূলত চার থেকে আট শতকের মধ্যে এই লিপি ব্যবহৃত হতো বলে জানাচ্ছেন বিশেষজ্ঞেরা। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, শঙ্খলিপি বিভিন্ন ধর্মীয় স্থানেই ব্যবহৃত হতো।
এই লিপি পাঠোদ্ধারের পরে দেখা যায়, সেখানে ‘শ্রী মহেন্দ্রাদিত্য’ উপাধির উল্লেখ রয়েছে। গুপ্ত বংশের শাসক প্রথম কুমারগুপ্তকে এই উপাধি দেওয়া হয়েছিল। পাঁচ শতকে উত্তর এবং মধ্য ভারত জুড়ে রাজত্ব করেছেন তিনি। এই সিঁড়ির সূত্র ধরেই গুপ্ত যুগের মন্দিরের কাঠামো উদ্ধার করেছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ, যা তৈরি করা হয়েছিল ব্রাহ্মণ, জৈন এবং বৌদ্ধদের জন্য। এখনও পর্যন্ত এই ধরনের গঠনের দু’টি মাত্র প্রাচীন মন্দিরের সন্ধান পেয়েছে পুরাতত্ত্ব বিভাগ। যে কারণে এই খননকার্য অত্যন্ত গুরুত্বের এবং তাৎপর্যপূর্ণ বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
মন্দিরটির মোট চারটে স্তম্ভ রয়েছে। যার মধ্যে দু’টি গোলাকার এবং দুই কোণে অবস্থিত। এই দু’টির গায়েই ‘গুপ্ত ব্রাহ্মী’ লিপিতে লেখা রয়েছে। যা নিয়ে এর আগে বেশ কিছু পর্যালোচনা এবং অনুসন্ধান হয়েছে এবং তা প্রকাশিতও হয়েছে বলে জানান এএসআই-এর আগরা সার্কলের সুপার বসন্ত সওয়ারকার। ফলে এখন তাঁদের নজর ছিল বাকি দু’টি স্তম্ভের দিকে,
যেগুলির অনেকটাই এত দিন মাটির নীচে চাপা ছিল।
এই স্তম্ভগুলি আবার সমতল এবং মসৃণ। আকারে সমকোণ চতুর্ভুজ। সমান্তরাল ভাবে রাখা এবং একই দিকে মুখ করা। দু’টির সামনের দিকেই রাক্ষস, গণ এবং বিভিন্ন জ্যামিতিক চিহ্ন রয়েছে। সওয়ারকার জানান, এগুলির সূত্রে হয়তো আরও কোনও প্রাচীন কাঠামো উদ্ধার হতে পারে এই ভেবেই খননকাজ শুরু করেছিলেন তাঁরা। যার পরেই এই সিঁড়ির
দেখা মেলে।
প্রাচীন মন্দিরের তালিকায় দেওঘরের ‘দশাবতার মন্দির’ এবং কানপুর দেহাত এলাকার ‘ভিতরগাঁও মন্দির’-এর পর গুপ্ত যুগের এই মন্দিরটি তৃতীয় সংযোজন বলে জানাচ্ছেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক মানবেন্দ্র পুন্ধির। তিনি আরও জানান, এর আগে মূলত পাথর কেটেই মন্দির তৈরি করা হত। তা থেকে সরে এসে গুপ্ত যুগেই প্রথম এ ধরনের গঠনের প্রচলন হয়। এটায় উদ্ধার হওয়া এই স্তম্ভগুলির পুরো অংশেই কারুকার্য রয়েছে। আগে উদ্ধার হওয়া স্তম্ভগুলিতে শুধু নীচের অংশেই কারুকার্য ছিল। এমনকি এ বার যে সিঁড়িগুলির দেখা মিলেছে সেগুলিও আগে উদ্ধার হওয়া নিদর্শনগুলির থেকে গঠনের দিক থেকে অনেকটা এগিয়েই।
পাশাপাশি সওয়ারকার জানান, এই সিঁড়িতে যে লিপির দেখা মিলেছে, তার সঙ্গে রাজ্যেরই লখিমপুর খেরা অঞ্চল থেকে উদ্ধার হওয়া একটি ঘোড়ার মূর্তির গায়ের লিপির মিল রয়েছে। দুটোই শঙ্খলিপি বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ওই ঘোড়ার মূর্তিটিও গুপ্ত যুগের। সেটিও প্রথম কুমারগুপ্তের সময়ের বলে সংশ্লিষ্ট আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন। বর্তমানে এই মূর্তিটি লখনউয়ের একটি জাদুঘরে রয়েছে।
সংরক্ষণের ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করার পর একটি ছাউনি লাগিয়ে ১৫০০ বছর প্রাচীন এই নিদর্শন পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হবে বলে পুরাতত্ত্ব বিভাগ সূত্রের খবর।