বৃহস্পতিবার বঙ্গে আসছেন অমিত শাহ। ফাইল চিত্র
মতুয়া সম্প্রদায়ের মন পেতে হবে। সামনে দাঁড়িয়ে দিতে হবে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) কার্যকর নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের পরিকল্পনার রূপরেখা। মূলত সেটা করতেই বৃহস্পতিবার বঙ্গসফরে আসছেন অমিত শাহ। তবে ঠাকুরনগরে মতুয়া সমাবেশে যোগ দেওয়ার আগে কোচবিহারেও কর্মসূচি রয়েছে তাঁর। সেখানেও রাজবংশী ভোট পদ্মশিবিরে টানার অঙ্ক কষতে হবে তাঁকে। সেখানেও রয়েছে প্রতিশ্রুতি দেওয়ার চাপ।
প্রসঙ্গত, দিল্লিতে বিস্ফোরণের কারণে ৩০ এবং ৩১ জানুয়ারির বঙ্গসফর বাতিল হয়েছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিতের। তবে ৩১ তারিখের ‘খামতি’ পূরণ হয়ে গিয়েছিল চার্টার্ড বিমানে চাপিয়ে রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়দের দিল্লি নিয়ে গিয়ে বিজেপি-তে যোগদান সম্পন্ন করিয়ে এবং ডুমুরজলার সভায় ‘ভার্চুয়ালি’ উপস্থিত থেকে। কিন্তু মতুয়াপাড়ার খামতি ‘ভার্চুয়ালি’ মেটানো সম্ভব নয়। তাই তাঁকে সেই দিনই ফোনে ‘আসছি’ বলে কথা দিতে হয়েছিল। বুধবার থেকেই তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে মতুয়া সম্প্রদায়ের মানুষ আসছেন ঠাকুরনগরে। কারও মাধ্যমে নয়, সকলেই অমিতের মুখ থেকে নাগরিকত্ব আইনের রূপরেখা নিয়ে নির্দিষ্ট আশ্বাস শুনতে চান।
কিন্তু সশরীরে কোচবিহারে যাওয়াও খুবই প্রয়োজন অমিতের। সেখানে রাজবংশী ভোটের অঙ্ক মেলাতে তাঁকেই যেতে হবে। যেটা দলের অন্য কোনও নেতাকে দিয়ে সম্ভব নয়। তাই একই দিনে উত্তরের কোচবিহার ও দক্ষিণের ঠাকুরনগরে সভা রেখে দুই অঙ্ক মেলাতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘দু নম্বর’ ।
অঙ্ক মেলানোর প্রথম ধাপ কোচবিহারে বৃহস্পতিবার দুপুরে। কিন্তু তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যাচ্ছে বুধবার রাতেই। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবারই অসমে চলে যাচ্ছেন অমিত। বৃহস্পতিবার সকালের গন্তব্য অসমের চিরাং জেলা। এখন সেখানেই রয়েছেন কেন্দ্রের এনডিএ সরকারের শরিক দল ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর নেতা অনন্ত রায়। একাধিক রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় গ্রেফতারি পরোয়ানা থাকা ‘ফেরার’ অনন্তর আস্তানায় প্রাতঃরাশ সেরে হেলিকপ্টারে কোচবিহারে আসার কথা অমিতের। তেমন হলে সেই হেলিকপ্টারে থাকতে পারেন অনন্তও। তবে সেটি এখনও চূড়ান্ত নয়।
এনডিএ-র শরিকদলের নেতা হলেও অনন্তর অন্য পরিচয় কোচবিহারের ‘স্বঘোষিত মহারাজা’ হিসাবে। রাজবাড়ির আদলে একটি বাড়িও রয়েছে তাঁর কোচবিহারে। যদিও এখন সেখানে থাকতে পারেন না অনন্ত। ‘মহারাজা’ থাকেন অসমে। সেখানে গিয়েই বৈঠক করার কথা অমিতের। পশ্চিমবঙ্গের পাশাপাশি অসমেও এবার বিধানসভা নির্বাচন। আর তাতে রাজবংশী ভোট একটা বড় বিষয়। কোচ রাজবংশীদের সাড়ে ১৮ লক্ষ মানুষ তাঁদের সঙ্গে রয়েছেন বলে বহুবার দাবি করেছেন অনন্ত। কোচ সম্প্রদায়ের মানুষদের তফসিলি জনজাতি হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার দাবিতে বিজেপি-র সঙ্গে অনেকবারই দর কষাকষি করেছে অনন্তর দল জিসিপিএ। বাংলা এবং অসমে ভোটের আগে অমিত সেই প্রতিশ্রুতি দিন— এমন দাবিও রয়েছে তাঁদের।
গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট যেমন বিজেপি-কে বড় সমর্থন দিয়েছিল, তেমনই রাজবংশী গোষ্ঠীর বড় অংশের ভোটও তারাই পেয়েছিল বলে দাবি করে গেরুয়া শিবির। কিছুদিন আগেই কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী তৃণমূল ছেড়ে বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন। তবে বসে নেই তৃণমূলও। রাজবংশী সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় তৃণমূলের খারাপ ফলের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একাধিক উদ্যোগ নিয়েছেন। রাজ্য সরকার পুলিশে ‘নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন’ চালু করা, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা, পঞ্চানন বর্মার জন্মভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে।
অন্য দিকে, বিজেপি-র মধ্যেই দাবি উঠেছে— কেন্দ্রীয় সরকারও একটি ‘নারায়ণী রেজিমেন্ট’ তৈরি করুক। সেই দাবি জানিয়ে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিক সরব হয়েছেন। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠিও পাঠিয়েছেন তিনি। সেটা নিয়েও চাপে আছে বিজেপি। এ বার তাই রাজবংশী মন পেতে খোদ অমিত দিল্লি থেকে কোচবিহার আসছেন ভায়া অসম। সকালে সেটা মিলিয়ে বিকেলে অমিত খুঁজবেন মতুয়ামন।