দিল্লিতে শুক্রবার রাতে বৈঠকে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে আলোচনায় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি) দেশ জুড়ে চালু করার আগে নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশ করানোর লক্ষ্য নিয়ে এগোচ্ছে বিজেপি। সংসদের চলতি শীতকালীন অধিবেশনের শেষ দিকেই ওই বিল পেশ করার তোড়জোড় চালাচ্ছে কেন্দ্রীয় সরকার। তার আগে উত্তর-পূর্বের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সংগঠনকে আলোচনায় ডাকলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দিল্লিতে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বাড়িতে শুক্রবার রাতে বৈঠক হয়েছে ত্রিপুরা, মিজোরাম-সহ উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রী, বিরোধী দলনেতা ও বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে।
গোটা উত্তর-পূর্বের বেশির ভাগ দল ও সংগঠনই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের (সিএবি) প্রতিবাদে নেমেছে। এই পরিস্থিতিতে এ দিনের বৈঠকে বিজেপি-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও দলীয় নেতাদের শাহ ফের পরামর্শ দিয়েছেন, সিএবি পাশ হলে একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ছাড়া অন্য কারও যে বিপদ হবে না, সে কথা ভাল ভাবে প্রচার করতে হবে। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও শাহ বৈঠক করবেন। তাঁদের বৈঠকের পরে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব দেবের মন্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ এই বৈঠকে সিএবি-র নানা দিক নিয়ে পর্যালোচনা হয়েছে।’’
এরই মধ্যে উত্তর-পূর্বের ১২ জন অ-বিজেপি সাংসদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, সিএবি-র ফলে জনজাতিরা বিপন্ন হবেন, অনেকে ভিটেছাড়াও হবেন। পাশাপাশি, এ দিন রাজ্যসভায় অসমের পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও জয়রাম রমেশ। রাজ্যসভায় কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম বলেন, শাহ অসমের যে ৬টি ‘ডিটেনশন সেন্টার’-এর কথা বলেছেন, তার মধ্যে শিলচরের একটি সেন্টারে ক’দিন আগেই তিনি ঘুরে এসেছেন। সেখানে ৭২ জন বিদেশি বন্দি। তার মধ্যে ৭ জন মায়ানমারের, ১৭ জন বাংলাদেশ থেকে। ওই ১৭ জন বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইলেও সে দেশের সরকার স্বীকৃতি দিচ্ছে না। জয়রামের অভিযোগ, সেন্টারে ভারতীয় নাগরিক বলে দাবি করা ৪৮ জনের প্রতি সরকার আদৌ মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখাচ্ছে না। তাঁর বক্তব্য, আইন মোতাবেক তিন বছর শেষ হলে দু’লক্ষ টাকা বন্ড দিয়ে জামিন পাওয়া যায়। অন্তত ভারতীয় নাগরিক বলে যাঁরা দাবি করছেন, তাঁদের আইনি সাহায্য দেওয়া হোক। কাজের জন্য এ দিক-ও দিক ঘোরাঘুরি করতে গিয়ে তাঁরা যথাযথ নথি রাখতে পারেননি। জয়রামের এই বক্তব্যে সায় দিয়ে মনমোহনও বলেন, ‘‘এই উদ্বেগে আমিও শরিক।’’
আরও পড়ুন: আরে কলোনির একটি গাছের পাতাও কাটা যাবে না, দায়িত্ব নিয়েই নির্দেশ উদ্ধবের
সিএবি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ডাকা বৈঠকে ত্রিপুরার সিপিএম ও কংগ্রেস অবশ্য যোগ দিতে যায়নি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার শাহকে চিঠি লিখে জানিয়েছেন, নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতির জন্য দেশের সংবিধানে যে নীতির কথা বলা আছে, ওই সংশোধনী বিল আগাগোড়া তার বিরুদ্ধে। একই সুরে ত্রিপুরা সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক গৌতম দাশ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে লিখেছেন, ওই বিলের বিরুদ্ধে তাঁদের দলের অবস্থান স্পষ্ট। ওই বিল দেশের নাগরিকত্বের ধারণার মূলেই আঘাত করছে। আবার ত্রিপুরা রাজ্য উপজাতি গণমুক্তি পরিষদের সভাপতি জিতেন্দ্র চৌধুরী লিখিত ভাবে জানিয়ে দিয়েছেন, লোকসভার সদস্য থাকাকালীনই তিনি সংশোধনীর প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছিলেন এবং এখনও করছেন।
বিজেপির জোট-শরিক আইপিএফটি-র সাধারণ সম্পাদক মেবার কুমার জামাতিয়া, বিরোধী আইএনপিটি-র জগদীশ দেববর্মারা সিএবি-র বিরোধী হলেও বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। ত্রিপুরা কংগ্রেসের নেতা পীযূষকান্তি বিশ্বাস বৈঠককে ‘লোক দেখানো’ আখ্যা দিয়ে বলেছেন, বিল পেশের অনেক আগেই আলোচনা করা দরকার ছিল। বিল আটকানোর জন্য গণতান্ত্রিক ভাবে সব রকম আন্দোলন তাঁরা করবেন।