প্রতীকী ছবি।
বাজেটে স্বাস্থ্য খাতে ১৯ শতাংশ বরাদ্দ বাড়ালেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৫২,৮০০ কোটি টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৬০,৯০৮.২২ কোটি টাকা।
এই বাজেটে কেন্দ্রের স্বাস্থ্য বিমা প্রকল্প ‘আয়ুষ্মান ভারত-প্রধানমন্ত্রী জন আরোগ্য যোজনা’-র জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৬,৪০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পে প্রতিটি দরিদ্র পরিবারকে বার্ষিক ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্য বিমা দেওয়া হবে। তবে এ দিনের বাজেট বক্তৃতায় ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের নাম এক বারই শোনা গিয়েছে নির্মলার মুখে। আর ‘স্বাস্থ্য’ শব্দটি বার তিনেক।
জাতীয় শহর স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে ‘আয়ুষ্মান ভারত হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার’ গড়ে তোলার জন্য বাজেটে ২৪৯.৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছেন নির্মলা। জাতীয় গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের অধীনে হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস সেন্টার গড়ে তোলার জন্য ১,৩৪৯.৯৭ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে বাজেটে। এই প্রকল্পের অধীনে ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ১.৫ লক্ষ উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মানোন্নয়ন করা হবে। সেখানে রক্তচাপ, ডায়াবিটিস, ক্যানসার এবং বয়সজনিত রোগের চিকিৎসা করা হবে।
গত বার জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৩০,১২৯.৬১ কোটি টাকা। এ বার তা বেড়ে হয়েছে ৩২,৯৯৫ কোটি টাকা। রাষ্ট্রীয় স্বাস্থ্য বিমা যোজনায় ১৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। গত বছর ন্যাশনাল এড্স অ্যান্ড এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামে বরাদ্দ করা হয়েছিল ২,১০০ কোটি টাকা। এ বার কেন্দ্র তা বাড়িয়ে ২,৫০০ কোটি টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে। এ বছর এমসের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে ৩,৫৯৯.৬৫ কোটি টাকা। গত বছর এই বরাদ্দ ছিল ৩,০১৮ কোটি টাকা।
এ বারের বাজেটে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য প্রকল্পে কমেছে বরাদ্দ। গত বছর বরাদ্দ হয়েছিল ৫০ কোটি টাকা। এ বার ৪০ কোটি টাকা। যে সিদ্ধান্ত মেনে নিতে পারছেন না মানবাধিকার কর্মী রত্নাবলী রায়। তাঁর কথায়, ‘‘রাষ্ট্র তার প্রান্তিক মানুষদের কোন চোখে দেখে, এ থেকেই বোঝা যায়। পরিসংখ্যান বলছে, আত্মহত্যা মারণ আকার নিয়েছে। মানসিক অসুস্থতার বোঝা আমাদের সমাজের উপরে অনেক বেশি। মানসিক স্বাস্থ্য আইন পড়লে বাজেট বরাদ্দ কমত না বলেই আমার বিশ্বাস।’’
ক্যানসার, ডায়াবিটিসের মতো রোগ প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রণের জন্য যে সব প্রকল্প রয়েছে, সেখানে বরাদ্দ ২৯৫ কোটি টাকা থেকে কমিয়ে ১৭৫ কোটি টাকা করা হয়েছে। এই প্রসঙ্গে ক্যানসার চিকিৎসক সুবীর গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রোগ নির্ণয় এবং তার প্রতিরোধ যদি লক্ষ্য হয়, তা হলে গ্রামীণ চিকিৎসা ব্যবস্থার পরিকাঠামোগত উন্নয়ন জরুরি। সে দিক থেকে বরাদ্দ কমানো কাম্য নয়। অগ্রাধিকার কোনটা, তা সরকারকে ঠিক করতে হবে।’’
কমেছে মেডিক্যাল কলেজগুলির বরাদ্দও। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষে এই খাতে বরাদ্দ করা হয়েছিল ৭৫০ কোটি টাকা। এ বার কেন্দ্র ৫৫০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দিয়েছে। এ ছাড়া নার্সিং পরিষেবার উন্নতির জন্য ৬৪ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। ফার্মাসি স্কুল এবং কলেজের উন্নতির জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে পাঁচ কোটি টাকা। ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে জেলা হাসপাতাল এবং রাজ্য সরকারি মেডিক্যাল কলেজের (স্নাতকোত্তর) উন্নয়নে। জেলা হাসপাতালগুলিকে নতুন মেডিক্যাল কলেজে উন্নীত করার জন্য কেন্দ্র বরাদ্দ করেছে ২,০০০ কোটি টাকা। আর সরকারি মেডিক্যাল কলেজ (স্নাতক স্তরে) এবং কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলির উন্নয়নের জন্য ১,৩৬১ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র। এ ছাড়া বিভিন্ন রাজ্যে ইনস্টিটিউশন অব প্যারামেডিক্যাল সায়েন্সেস এবং প্যারামেডিক্যাল কলেজ গড়ার জন্য ২০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে।
বাজেটের প্রশংসা করে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষ বর্ধন বলেন, ‘‘এই বাজেট নরেন্দ্র মোদী সরকারের বাস্তববোধ এবং দূরদর্শিতার প্রকাশ।’’
অ্যালায়েন্স অব ডক্টরর্স ফর এথিক্যাল হেলথকেয়ার অবশ্য এই বাজেটকে ‘দিশাহীন’ বলে সমালোচনা করেছে। তাদের বক্তব্য, গোরক্ষপুর এবং মুজফ্ফরপুরে এত বড় স্বাস্থ্য বিপর্যয়ের পরেও নির্মলার বাজেটে তার কোনও উল্লেখ না থাকাটা দুর্ভাগ্যজনক।