অমিত শাহের ডাকে মণিপুর নিয়ে সর্বদল বৈঠক। ছবি— পিটিআই।
মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের ডাকা সর্বদল বৈঠকে বিরোধীদের ‘কঠিন’ প্রশ্নের মুখে পড়লেন অমিত শাহ। মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠায় এক সপ্তাহের মধ্যে সব দলের প্রতিনিধিদের পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে তৃণমূল। তাঁদের প্রশ্ন, মণিপুরকে কি কাশ্মীর বানাতে চাইছে বিজেপি সরকার? যদিও শাহের দাবি, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে মণিপুরে শান্তি ফেরাতে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে সর্বদল বৈঠক ডাকার জন্য গত এক মাসে বিরোধীরা বার বার দাবি জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহ কুকি এবং মেইতেই প্রধান এলাকা সফর করে কিছু পদক্ষেপ করার পরেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এই পরিস্থিতিতে মেইতেই সামাজিক সংগঠনগুলির যৌথমঞ্চ ‘থৌবাল আপুনবা লুপ’ চলতি সপ্তাহের গোড়ায় বিবৃতি দিয়ে মণিপুরে শান্তি ফেরানোর বিষয়ে মোদী সরকারের সদিচ্ছা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। তার পরেই তড়িঘড়ি ডাকা হয় সর্বদল বৈঠক। শনিবারের সেই বৈঠকে বিরোধীদের কড়া প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় সরকারকে।
সর্বদল বৈঠকে তৃণমূলের প্রতিনিধি সাংসদ ডেরেক ও’ব্রায়েন দাবি করেন, শাহের মণিপুর সফরের পর পরিস্থিতি আরও ঘোরাল হয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার কি মণিপুরকে কাশ্মীর বানাতে চাইছে? যে ভুল হয়েছে তা যত শীঘ্র সম্ভব স্বীকার করে ঠিক পথে হাঁটা শুরু করুক কেন্দ্রীয় সরকার।’’
বৈঠকে শাহ জানান, এমন এক দিনও যায়নি যে দিন মণিপুরের পরিস্থিতি নিয়ে তিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেননি অথবা, মোদী নিজে এ ব্যাপারে তাঁকে কোনও পরামর্শ দেননি। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের কাছে এই দাবি করেন বিজেপির তরফে মণিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা সম্বিত পাত্র। তিনি জানান, মোদীর নির্দেশেই মণিপুরে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সমস্ত রকম প্রয়াস নেওয়া হচ্ছে।
সূত্রের খবর, বৈঠকে মণিপুরের উপর একটি দৃশ্যকাব্য উপস্থাপনা দেখানো হয়। তাতে মণিপুরের ভৌগোলিক অবস্থান এবং ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট ছিল। কিন্তু চলতি সমস্যার সমাধান কী করে সম্ভব, তার কোনও রূপরেখা ছিল না। এই সময় কংগ্রেস, এসপি, আরজেডি মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহের ইস্তফা দাবি করে। তাঁদের দাবি, বীরেন সিংহ যত দিন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী পদে রয়েছেন, তত দিন সেই রাজ্যে শান্তি ফেরানোর আশা করা যায় না। সর্বদল বৈঠকে দাবি ওঠে, প্রধানমন্ত্রী মোদী এখনই বরখাস্ত করুন মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রীকে। তাঁর বদলে দায়িত্ব নিন এমন কেউ, যিনি হিংসাবিধ্বস্ত রাজ্যে ঐক্যসাধনের কঠিনতম কাজটি করতে পারবেন।
মণিপুর নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কেন নীরব, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিরোধী নেতারা। বৈঠকে কংগ্রেস, তৃণমূল ছাড়াও হাজির ছিল সিপিএম, শিবসেনার উদ্ধব গোষ্ঠী। হাজির ছিলেন বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গয়াল, বিজেপি সাংসদ তথা মণিপুরের দায়িত্বপ্রাপ্ত সম্বিত পাত্র।
গত ৩ মে থেকে জ্বলছে মণিপুর। জাতিগত হিংসায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ। ঘরছাড়া অবস্থায় ত্রাণশিবিরে আশ্রয় নিয়েছে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নামানো হয়েছে সেনা। কিন্তু তবুও মণিপুরে শান্তি ফেরানো যাচ্ছে না।