ফাইল চিত্র।
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে লড়বেন না অখিলেশ যাদব। উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ সোমবার এই ঘোষণা করেছেন। যদিও কেন এই সিদ্ধান্ত, তার কোনও কারণ ব্যখ্যা করেননি। তবে এর আগেও কখনও তিনি উত্তর প্রদেশের বিধানসভা ভোটে লড়েননি। বিধান পরিষদের সদস্য হওয়ার সুবাদে মুখ্যমন্ত্রীর পদে বসেছিলেন।
সোমবার অখিলেশ জানিয়েছেন, তিনি না লড়লেও তাঁর দল রাষ্ট্রীয় লোক দলের সঙ্গে জোট বেঁধে বিধানসভা নির্বাচনে লড়বে। যদিও দু’দলের আসন সমঝোতার বিষয়টি চূড়ান্ত হয়নি এখনও।
সোমবার সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ভোটে না লড়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন সমাজবাদী পার্টি (সপা)-র প্রতিষ্ঠাতা মুলায়ম সিংহ যাদবের পুত্র। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী এবং আজমগড়ের সপা সাংসদ যে দলের মুখ্যমন্ত্রীর মুখ, সে ব্যাপারে কোনও দ্বিমত প্রকাশ্যে আসেনি এখনও। তবে কী কারণে ভোটে লড়া থেকে বিরত থাকছেন অখিলেশ? সমাজবাদী পার্টির তরফেও উত্তর মেলেনি।
২০২২ সালের শুরুতেই বিধানসভা নির্বাচন উত্তরপ্রদেশে। নির্বাচনের জন্য ইতিমধ্যেই প্রস্তুতি শুরু করে দিয়েছে বিজেপি, কংগ্রেস-সহ অন্য সব রাজনৈতিক দল।
কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ চলার মধ্যেই উত্তরপ্রদেশে মে মাসে ব্লক পঞ্চায়েতে বিপুল ভাবে পরাজিত হয়েছিল বিজেপি। কিছুটা অপ্রত্যাশিত ভাবেই ভাল ফলাফল করে অখিলেশের দল। অথচ তার পর থেকে মে মাসের সেই জয়কে বিধানসভা ভোটে কাজে লাগানোর জন্য সে ভাবে মাঠে দেখা যায়নি অখিলেশ তথা তাঁর দলকে। যেখানে কোভিড-মোকাবিলার ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতাকে অস্ত্র করে এবং ব্লক পঞ্চায়েতে মানুষের প্রকাশ্য ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা, সেখানে তেমন কোনও বড় মাপের জনসভা করতে দেখা যায়নি অখিলেশকে। অথচ নির্বাচন আর খুব বেশি দূরে নেই।
রাজ্যের রাজনৈতিক শিবিরের মতে, গত দেড় বছরে অখিলেশ যতটা বিদেশে সময় কাটিয়েছেন, তার সিকিভাগও তাঁকে লখনউয়ে দেখা যায়নি। বিভিন্ন জেলা এবং প্রত্যন্ত গ্রামে তো নয়ই। গত বছর হাথরসে দলিত কিশোরীর ধর্ষণ-খুনের পরে গোটা দেশের সংবাদমাধ্যম, নেটমাধ্যমে ঝড় বয়ে গিয়েছিল। কিন্তু বিরোধী নেতাদের রাস্তায় নামতে সে ভাবে দেখা যায়নি। গোটা সময়টাই বিদেশে ছিলেন মুলায়ম-পুত্র। এর পর তাঁর সোমবারের এই সিদ্ধান্ত সুতরাং বেশ ‘তাৎপর্যপূর্ণ’।
প্রশ্ন উঠছে, অখিলেশের এমন উদাসীনতার কারণ কী? যোগী-রাজ্যের আর এক বিরোধী বিএসপি নেত্রী মায়াবতী উনিশের লোকসভা ভোটের পরেই এসপি-র সঙ্গে জোট ছিন্নই শুধু করেননি, কার্যত বিজেপি-র ‘বি’ দল হিসেবে থেকে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে বারবার। পুরনো মামলা খুঁচিয়ে তুলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে দলিত নেত্রীর পিছনে লাগানোর পর তিনি গুটিয়ে রয়েছেন বলে অভিযোগ অনেকের। প্রশ্ন উঠছে, তা হলে কি অখিলেশের উপরেও কোনও ভাবে চাপ তৈরি করছে কেন্দ্র?
প্রসঙ্গত, উত্তর প্রদেশের ভোট পর্যবেক্ষকদের একাংশ বলছেন, মায়াবতীর রাজনীতির ধরন হল যে বিপক্ষের যতই চাপ থাক, নির্বাচনের মাস দেড়েক আগে তিনি নড়ে চড়়ে বসেন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে ঝাঁপান। তাঁর দল এ ভাবে ভোট করতে অভ্যস্ত। যদি তাই হয়, তা হলেও কোনও বিরোধী মহাজোটের অভাবে আখেরে লাভ হবে বিজেপির-ই। দলিত ভোট ভাগ হবে, এসপি আরও হীনবল হবে। একই সঙ্গে এমআইএম-এর আসাদুদ্দিন ওয়েইসি মাঠে নেমেছেন মুসলমান ভোটের লক্ষ্যে। এর পিছনে বিজেপি-র কোনও রাজনৈতিক কৌশল রয়েছে কি না, সে প্রশ্নও উঠছে। তাই নিজেদের মুসলমান, জাঠ এবং দলিত ভোটকে একজোট করতে বাড়তি উদ্যোগ প্রয়োজন ছিল অখিলেশের। সে সব না করে নিজেই ভোটে দাঁড়াবেন না বলে সোমবার ঘোষণা করে দিলেন তিনি।
২০১২ সালে অখিলেশের জয়ের পিছনে ছিল তাঁর বাবা মুলায়ম সিংহ যাদবের রাজনৈতিক বিচক্ষণতা। যাদব সম্প্রদায়ের পাশাপাশি তিনি ওবিসি-র মঞ্চকে আরও প্রসারিত করতে পেরেছিলেন দলের জন্য। ঠাকুর, ব্রাহ্মণ ছাড়াও কুর্মির মতো আরও অনেক ক্ষুদ্র সম্প্রদায়কে এসপি-র ছাতার তলায় এনেছিলেন। একই ভাবে ২০০৭ সালে বিএসপি-র দলিত এবং অন্যান্য জাতকে সঙ্গে নেওয়ার রাজনীতি ফলপ্রসূ হয়। তাঁর ‘ব্রাহ্মণ ভাইচারা সম্মেলন’ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল সেই কাজে। আসন্ন ভোটেও ঠিক একই ভাবে ব্রাহ্মণ, ওবিসি, এবং অন্যান্য জাতকে একজোট করার প্রয়োজন বিজেপি-কে হারাতে গেলে। সেই সঙ্গে জরুরি মুসলমানদের অটুট আস্থা অর্জন। কিন্তু সেই কাজের জন্য মরিয়া হয়ে ভোট ময়দানে ঝাঁপানো দরকার। কিন্তু নিজে ভোটে না লড়লে দলীয় কর্মীদের কতটা অনুপ্রেরণা যোগানো যাবে সে প্রশ্নও উঠছে। একই সঙ্গে সামনে আসছে আরও একটি প্রশ্ন, আসন্ন নির্বাচনে অখিলেশের তবে রণকৌশল কী? এই প্রশ্নের জন্য আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে হবে।