—ফাইল চিত্র।
শুধু উত্তরপ্রদেশ নয়। আরএসএস-বিজেপির কর্মসূচি মেনে এ বার সংসদেও জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল নিয়ে আলোচনা তুলে দিতে চাইছে বিজেপি। তবে সরকারি ভাবে বিল এনে নয়। বিজেপি সাংসদেরা ব্যক্তিগত স্তরে বা প্রাইভেট মেম্বার্স বিল নিয়ে আসছেন। আরএসএস-বিজেপির কর্মসূচির আর একটি অঙ্গ, অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়েও বিজেপি সাংসদেরা একই ভাবে ব্যক্তিগত স্তরে বিল নিয়ে আসবেন।
রবিবারই উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নীতি ঘোষণা করেছেন। তার আগে রাজ্যের আইন কমিশন রাজ্যের জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে খসড়া আইনও প্রকাশ করেছে। আগামী সোমবার থেকে সংসদের বাদল অধিবেশন শুরু হবে। সেখানে যোগীর পুরনো লোকসভা কেন্দ্র গোরক্ষপুরের বর্তমান সাংসদ রবি কিষণ ও রাজ্যসভার সাংসদ রাকেশ সিন্হা জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিল পেশ করবেন। রাজস্থান থেকে রাজ্যসভা সাংসদ কিরোরিলাল মীনা অভিন্ন দেওয়ানি বিধি নিয়ে বিল আনবেন।
সাধারণত খুব কম প্রাইভেট মেম্বার্স বিলই সংসদে পাশ হয়। বিল পাশ হলেও সরকার না-চাইলে তার আইনের চেহারা পাওয়া মুশকিল। তা সত্ত্বেও একেবারে সংসদে এই বিল নিয়ে আসাটা রাজনৈতিক কৌশলেরই অঙ্গ বলে বিজেপি সূত্রের ব্যাখ্যা। কংগ্রেস, এসপি নেতারা বলছেন, বিজেপি নেতারা আসলে মুসলিমদের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার বেশি বলে তাঁরা তা নিয়ন্ত্রণ করতে নেমেছেন বলে বার্তা দিতে চাইছেন। আসল লক্ষ্য হল, ২০২২-এর উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে মেরুকরণ। উত্তরপ্রদেশে এই নীতি সফল হলে ২০২৪-এর লোকসভা ভোটের আগে জাতীয় স্তরেও একই কৌশল নেওয়া হবে।
গত বছর স্বাধীনতা দিবসে খোদ প্রধানমন্ত্রী লাল কেল্লা থেকে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনের কথা বলেছিলেন। গত কাল যোগী ঘোষণা করেছেন, তিনি রাজ্যে ‘হম দো, হমারে দো’ নীতি রূপায়ণ করতে চান। জনসংখ্যায় স্থিতাবস্থা ও সব নাগরিকের কাছে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য পৌঁছে দিতেই এই নীতি প্রয়োজন। কিন্তু অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী বা যোগী, কারও যুক্তির সঙ্গেই বাস্তবের মিল নেই। ২০১৯-এ অর্থ মন্ত্রকের আর্থিক সমীক্ষাতেই বলা হয়েছে, দেশে জন্মহার কমছে। বর্তমানে যে জনসংখ্যা রয়েছে, তা ধরে রাখতে জন্মহার যত হওয়া দরকার, পশ্চিমবঙ্গ-সহ ন’টি রাজ্যে ওই হার তার থেকে কম। উত্তরপ্রদেশেও জন্মহার কমেছে। আগামী দু’দশকের মধ্যে দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ০.৫ শতাংশে নেমে আসবে। এত দিন দেশের জনসংখ্যার বেশির ভাগই তরুণ বলে অর্থনীতিতে তার সুবিধে মেলার কথা বলা হত। ২০৩০ থেকে সমাজে বয়স্কদের সংখ্যা বাড়বে।
পরিসংখ্যান অন্য কথা বললেও বিজেপি কেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরব? বিরোধীদের দাবি, এর লক্ষ্য মেরুকরণ। যোগীর নীতিতেই বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে জনসংখ্যার ভারসাম্যর কথা বলা হয়েছে। এতেই স্পষ্ট, তাঁর আসল লক্ষ্য মুসলিমদের বিরুদ্ধে প্রচার। এই নীতির বিরোধিতা হলেই যোগী বলবেন, মুসলিমেরা আসলে নিজেদের জনসংখ্যা বাড়িয়ে সংখ্যায় হিন্দুদের ছাপিয়ে যেতে চায়। কংগ্রেস নেতা ডি কে শিবকুমারের বক্তব্য, ‘‘প্রধানমন্ত্রীর উচিত উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করা।’’ উল্টো দিকে বিজেপির যুক্তি, কংগ্রেসের অভিষেক মনু সিঙ্ঘভিও গত বছর রাজ্যসভায় জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ বিল এনেছিলেন।
বিরোধীদের পাশাপাশি বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তোপেও পড়েছেন যোগী। যোগীর নীতিতে এক সন্তান হলে দম্পতিদের বাড়তি সুবিধার কথা বলা হয়েছে। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ বিল থেকে এই অংশ বাদ দেওয়ার দাবি তুলেছেন। তাঁদের মতে, এটি চিনের মতো ‘লিটল এম্পেরর সিনড্রোম’। যেখানে একটি সন্তানের দিকেই বাবা-মার নজর থাকবে। কিন্তু শেষে এক সন্তানের ঘাড়ে বাবা-মা ও চার জন দাদু-দিদার দেখভালের দায়িত্ব এসে পড়ে। চিনেও এই নীতি প্রত্যাহার করা হয়।