—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পরে বাংলাদেশে পাকিস্তানের প্রভাব দ্রুত বাড়ায় আশঙ্কিত সাউথ ব্লক। গত দেড় মাস ধরেই একাত্তরের গণহত্যার স্মৃতি মুছে ফেলে পাকিস্তানকে প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য এবং সাংস্কৃতিক স্তরে ‘বন্ধু’ হিসেবে গ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গিয়েছে বলে মনে করছে সাউথ ব্লক। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তানি দূতাবাসের সক্রিয়তা।
বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-কে (বিজিবি) শক্তিশালী করার নামে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার পাকিস্তান থেকে ৩৫ হাজার ৭.৬২ মিমি এ কে-১৫ সেকেন্ড হ্যান্ড অ্যাসল্ট রাইফেল কিনছে। জানা গিয়েছে, শেখ হাসিনার পদত্যাগের তিন সপ্তাহ পরে, পাকিস্তানকে নতুন করে কামানের গোলাবারুদ সরবরাহের বরাত দিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। এর মধ্যে ৪০ হাজার রাউন্ডের বেশি গোলাবারুদ, ৪০ টন আরডিএক্স রয়েছে। ডিসেম্বরের মধ্যেই এই বিপুল পরিমাণ গোলা-বারুদ বাংলাদেশে পৌঁছবে। দু’দেশের মধ্যে প্রতিরক্ষা সম্পর্ক গভীর করতে পাকিস্তানি সেনা কর্মকর্তারা জঙ্গি-বিরোধী কার্যকলাপের প্রশিক্ষণ দেবে বাংলাদেশকে। পাকিস্তানে চেরাটে যৌথ প্রশিক্ষণেও অংশ নেবে বাংলাদেশ সেনা। হাসিনা সরকারের পতনের পরে রাজনৈতিক, কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক-সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলামাবাদের সঙ্গে সম্পর্কের নতুন অধ্যায় সূচিত হয়েছে ঢাকার। পাকিস্তানের ‘পঞ্জাব বোর্ড অব ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড ট্রেড’ ঢাকায় সম্ভাব্য বাংলাদেশি বিনিয়োগকারীদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে তাদের দূতাবাসের কাছে। সঙ্গে দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া হয় পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগের জন্য প্রচার চালাতে। এ ছাড়াও ১৪ অগস্ট বাংলাদেশ-সহ বেশ কিছু দেশের জন্য বিনামূল্যে ভিসা সুবিধা চালু করেছে ইসলামাবাদ। পাকিস্তানের সমর্থন ও অর্থায়নে বাংলাদেশভিত্তিক ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান চেম্বার অফ কমার্স’ নামে একটি সংগঠন গড়েছে।
সম্প্রতি নিউ ইয়র্কে আয়োজিত শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকটিই নয়, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে আগেও টেলিফোনে কথোপকথন হয় শরিফের। এর আগে ঢাকায় পাকিস্তানি হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের সময় বন্ধুত্বের বার্তা দেন ইউনূস। হাইকমিশনার মারুফ স্বরাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে দাবি করেন, সম্প্রতি ঘোষিত ভিসা ফি-মুক্ত প্রবেশ সুবিধা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক বৃদ্ধি করবে। দুই দেশের মধ্যে বিমান চালানো নিয়েও তাদের মধ্যে আলোচনা হয়।
দু’সপ্তাহ আগে মহম্মদ আলি জিন্নার ৭৬ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন করা হয়েছে ঢাকার জাতীয় প্রেস ক্লাবে। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের ডেপুটি হাইকমিশনার কামরান ধাঙ্গল। একই দিনে আইএসআইয়ের উদ্যোগে আয়োজিত এক বৈঠকে স্থানীয় বিহারী মুসলিম ছাত্ররা যাতে উর্দু শিখতে পারে সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। স্থির হয়, তাদের উর্দু শেখানোর খরচ বহন করবে পাকিস্তানি দূতাবাস। বিহারি বংশোদ্ভূত ব্যবসায়ীদের দীর্ঘমেয়াদি ব্যবসায়িক ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্তও নিয়েছে পাকিস্তান।