দুর্ঘটনাগ্রস্ত সেই বিমান। ছবি: রয়টার্স।
সকলে এলেও ফাঁকা পড়ে রয়েছে অফিসের পাঁচটি ডেস্ক। কম্পিউটার বন্ধ। ডেস্কে রাখা ক্যালেন্ডারে লাল কালি দিয়ে গোল করে চিহ্নিত করা তারিখটিও জ্বলজ্বল করছে। কিন্তু ওই ডেস্কে যাঁরা বসতেন, তাঁদের দেখা নেই। অফিসেও যেন একটা শূন্যতা কাজ করছে। থমথমে পরিবেশ। অফিসে ঢুকতেও সহকর্মীদের ওই পাঁচটি চেয়ারে চোখ চলে যাচ্ছে। একরাশ শূন্যতা নিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ফেলে যে যাঁর নিজের কাজের জায়গায় গিয়ে বসছেন।
অফিসের যে পাঁচটি চেয়ার ফাঁকা পড়ে রয়েছে, সেগুলি ওই অফিসেরই পাঁচ কর্মীর। কিন্তু ওই চেয়ারে আর তাঁদের বসতে দেখা যাবে না। না, কাজ ছেড়ে চলেও যাননি, সংস্থা তাঁদের ছাঁটাইও করেনি। পাঁচ কর্মীরই সম্প্রতি পদোন্নতি হয়েছিল। আর পদোন্নতি উদ্যাপন করতে তাঁরা ব্যাঙ্ককে ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। ডেস্কে রাখা ক্যালেন্ডারেও তারিখটি দাগিয়ে রেখেছিলেন পাঁচ জনেই। কিন্তু উদ্যাপন করতে যাওয়াই তাঁদের কাল হল। রবিবার দক্ষিণ কোরিয়ায় জেজু এয়ারলাইন্সের বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে পাঁচ জনেরই।
রবিবার জেজু এয়ারলাইন্সের ৭সি২২১৬ বিমান মুয়ান বিমানবন্দরে ‘বেলি ল্যান্ডিং’ করানোর সময় রানওয়ে থেকে ছিটকে গিয়ে বিমানবন্দরের পাঁচিলে ধাক্কা মারে। আর সেই দুর্ঘটনায় বিমানের ১৮১ জন যাত্রীর মধ্যে ১৭৯ জনেরই মৃত্যু হয়। সেই তালিকায় ছিলেন দক্ষিণ কোরিয়ার এক সংস্থার এই পাঁচ মহিলা সহকর্মী। তাঁদের মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না অন্য সহকর্মীরা। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, সহকর্মীদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করতে হাতে কালো ফিতে বাঁধেন তাঁরা। ওই পাঁচটি চেয়ারে ফুল দিয়ে মৃত সহকর্মীদের শ্রদ্ধাও জানানো হয়।
সংস্থার এক কর্তা লি ডায়-কিউন বলেন, ‘‘আমরা পাঁচ সহকর্মীকে হারিয়েছি। সবেমাত্র তাঁদের পদোন্নতি হয়েছিল। ওঁদের মৃত্যু মেনে নিতে পারছি না। মন ভারাক্রান্ত। ফাঁকা ডেস্কগুলির দিকে তাকিয়ে বুকটা ছ্যাঁৎ করে উঠছে। এখনও মনে হচ্ছে ওঁরা বেঁচে আছে।’’ দীর্ঘ কয়েক বছর ধরেই ওই পাঁচ কর্মী পরস্পরের ঘনিষ্ঠ। একই সঙ্গে নানা অনুষ্ঠানে যেতেন, ঘুরতে যেতেন। তাইল্যান্ডেও একসঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন। সেখানে ভাল ভাবে ছুটি কাটিয়ে দেশে ফিরতেই দুর্ঘটনার শিকার হন।