নির্যাতিতার পরিবার সংবাদ মাধ্যমকে জানিয়েছিল, শেষকৃত্যের সময় তাঁরা কেউই উপস্থিত ছিলেন না।
পরিবারের আপত্তি সত্ত্বেও মাঝরাতেই দাহ করা হয়েছিল হাথরসের ধর্ষিতার দেহ। শেষকৃত্যে উপস্থিত ছিলেন না কিশোরীর কোনও আত্মীয়। সেই ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছিল উত্তরপ্রদেশ সরকার। পরবর্তী কালে যাতে আর মুখ না পোড়ে, সে কারণে দাহ নিয়ে একটি নির্দেশিকা জারির প্রস্তাব দিয়েছে যোগী আদিত্যনাথের সরকার। সেখানে ‘আইন-শৃঙ্খলা’ মেনে কী ভাবে দাহ করা হবে, তা বলা রয়েছে।
২০২০ সালের অক্টোবরে হাথরসে গণধর্ষিত হয় কিশোরী। পরে হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। রাত ২টোর সময় বাড়ির কাছে একটি মাঠে দাহ করা হয় কিশোরীকে। পুলিশ জানিয়েছিল, বাড়ির লোক তখন উপস্থিত ছিলেন সেখানে। যদিও পরিবার সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, শেষকৃত্যের সময় তাঁরা কেউই উপস্থিত ছিলেন না। ইলাহাবাদ হাই কোর্ট জানায়, শেষকৃত্যের সময় নির্যাতিতার অধিকার এবং সম্মান ক্ষুণ্ণ হয়েছিল।
সেই নিয়ে মামলা চলছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে। ২১ জুলাই একটি হলফনামা পেশ করে রাজ্য সরকার। দুর্ঘটনা বা অপরাধের মামলা চলাকালীন অভিযুক্তের মৃত্যু হলে বা নির্যাতিতার মৃত্যু হলে তাঁর দেহ কী ভাবে সম্মানের সঙ্গে দাহ করা হবে, তা নিয়ে হলফনামায় প্রস্তাব দেয়। হিন্দিতে লেখা সেই হলফনামায় সই রয়েছে উত্তরপ্রদেশের স্বরাষ্ট্রসচিব রাজেশ কুমারের।
হলফনামায় বলা হয়েছে, ‘মৃতদেহ সৎকারের রীতি মেনে সম্মানের সঙ্গে দাহ করতে হবে, তা করবে পরিবারই।’ দেহের যদি ময়নাতদন্ত হয়, তা হলে তার রিপোর্ট অবশ্যই পরিবারকে দিতে হবে। দেহ পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদেরও প্রাপ্তিস্বীকারপত্রে সই করতে হবে। পাশাপাশি তাঁদের থেকে লিখিত সম্মতিপত্র আদায় করতে হবে পুলিশকে, যেখানে লেখা থাকবে, পরিবারের সদস্যরাই দেহ প্রথমে বাড়িতে এবং তার পর শ্মশান বা সমাধিস্থলে নিয়ে যাবেন।
হলফনামায় রাজ্য সরকার প্রস্তাব দিয়েছে, ময়নাতদন্তের পর অ্যাম্বুল্যান্সে করে যখন দেহ বাড়িতে পাঠানো হবে, তখন সেখানে থাকবেন পরিবারের অন্তত দু’জন সদস্য। ‘যানজট, ধর্ম বিশ্বাস বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হতে পারে’, এমন কোনও কারণে পথে অ্যাম্বুল্যান্স থামানো যাবে না। হাথরসের নির্যাতিতার বৌদি দাবি করেছিলেন, ময়নাতদন্তের পর কিশোরীর দেহের কী হয়েছিল, তা পরিবারের কেউই জানতেন না। এমনকি, অ্যাম্বুল্যান্সে পরিবারের কেউ উপস্থিতও ছিলেন না। সেই সূত্রেই হলফনামায় এই প্রস্তাব।
যদিও পাশাপাশি হলফনামায় এ-ও বলা হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর দেহ নিয়ে যাওয়ার সময় পরিবার বা অন্য কেউ অ্যাম্বুল্যান্সের পথ আটকালে, তাঁকে বা তাঁদের ‘শাস্তি’ দেওয়া হবে। এ ধরনের কাজকে ‘মৃতদেহের অসম্মান’ বলে ধরে নেওয়া হবে।
হলফনামায় প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, ময়নাতদন্তের পর পরিবার দেহ নিতে না এলে, কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তা অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে শেষকৃত্যের জন্য পাঠানো হবে। অ্যাম্বুল্যান্সে থাকবেন দু’জন কনস্টেবল। পরিবার সৎকার করতে না চাইলে তাদের সঙ্গে কথা বলবেন কোনও আমলা বা স্থানীয় সম্মাননীয় ব্যক্তি। তার পরেও পরিবার সম্মত না হলে পাঁচ জন নাগরিকের উপস্থিতিতে শেষকৃত্য করা হবে। তাঁদের মধ্যে এক জনকে অবশ্যই মৃতের সম্প্রদায়ের হতে হবে।
হাথরসের নির্যাতিতার পরিবার অভিযোগ করেছিল, তাদের অমতেই রাতে কিশোরীর দেহ সৎকার করা হয়। তাঁদের দাবি, হিন্দু রীতিতে রাতে সৎকার হয়নি। সেই নিয়েও প্রস্তাব রয়েছে। বলা হয়েছে, যদি রাতে শেষকৃত্য করতেই হয়, তা হলে জেনে নিতে হবে মৃতের ধর্ম, রীতি তাতে সায় দেয় কি না। পরিবারের সম্মতি লাগবে। আর পরিচয়হীন দেহ সম্মানের সঙ্গে শেষকৃত্যের জন্য রাজ্য সরকারের থেকে অনুদান পাবে পুলিশ। হলফনামায় সেই প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে।