—ফাইল চিত্র।
মণিপুর সংঘর্ষের পাঁচ মাস পূর্ণ হল আজ। এখনও সমাধন-সূত্র দূর অস্ত্। তবে, কুকি এলাকায় জারি করা অনির্দিষ্টকালের বন্ধ প্রত্যাহার করে নিল কুকিদের যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ। তাদের মহিলা শাখার ধর্নাও স্থগিত রাখা হল।
বিষ্ণুপুরে দুই ছাত্রছাত্রীর খুনের তদন্তে সিবিআই রবিবার কুকি এলাকায় গোপনে হানা দিয়ে দুই মহিলা ও দুই পুরুষকে গ্রেফতার করে। দুই নাবালিকাকেও সঙ্গে নিয়ে আসে গুয়াহাটিতে। ওই ৬ জন ও এনআইএ-র হাতে গ্রেফতার হওয়া আরও এক শিক্ষককে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে মুক্তি দেওয়ার দাবিতে কুকি যৌথ মঞ্চ আইটিএলএফ বন্ধের ডাক দেয়। সিল করে দেওয়া হয় মেইতেই জেলাগুলির সব সীমান্ত। আর এক জনজাতি যৌথ মঞ্চ কোটু আজ কাংপোকপি জেলায় সংঘর্ষের ৫ মাস পূর্তি উপলক্ষে ১৫ ঘণ্টার বন্ধ পালন করে। সিবিআই ও এনআইএর ‘পক্ষপাতদুষ্টতা’র প্রতিবাদে ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কে তারা অবরোধের ডাক দিয়েছে।
সিবিআই ও এনআইএর তরফে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, তারা নির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই সকলকে গ্রেফতার করেছে। তদন্ত বা গ্রেফতারিতে কোনও পক্ষপাতের প্রশ্নই নেই। সব তথ্য-প্রমাণ আদালতে পেশ করা হবে। চূড়চাঁদপুর থেকে ধৃত শিক্ষক সেমিনলুন গাংতের এনআইএ হেফাজত ৮ দিন বেড়েছে। আজ বিকেলে আইটিএলএফ বিবৃতি দিয়ে জানায়, সব দিক বিবেচনা করে তারা আপাতত আজ সন্ধ্যা ৬টার পর থেকে অনির্দিষ্টকালীন বন্ধ প্রত্যাহার করছে। পরিস্থিতির উপরে নজর রেখে পরবর্তী তীব্রতর আন্দোলনের সিদ্ধান্ত হবে।
খুন হওয়া ছাত্রের মা ওয়াই বিরহিনী দেবী ওই চার অভিযুক্তের গ্রেফতারিতে সন্তোষ প্রকাশ করেও জানান, ধৃতদের গুয়াহাটি না নিয়ে গিয়ে তাঁর সামনে আনলে ভাল হত। তিনি বলেন, “আমার ছেলের মোবাইল কোনও মহিলা ব্যবহার করছিলেন বলে শুনেছি। কিন্তু আমরা যত বার ফোন করেছি, এক জন পুরুষ ফোন ধরেছে। ওই ব্যক্তিকেও খুঁজে বার করতে হবে।” ছাত্রীর বাবার অবশ্য একটাই আর্তি, “দেহ ফিরিয়ে আনা হোক।” নির্দল বিধায়ক নিশিকান্ত সাপামের তৈরি মঞ্চ ‘টিম নিশিকান্ত’ও সরকারকে চাপ দিয়েছে, তিন দিনের মধ্যে নিহত ছাত্রছাত্রীদের দেহ উদ্ধার করতে হবে। মণিপুর সিটিজেনস ফোরাম রাজ্যে শান্তি ফেরাতে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর হস্তক্ষেপ দাবিকরে রাজ্যপালের মাধ্যমে তাঁকে স্মারকপত্র পাঠিয়েছে।
বিষ্ণুপুরের তোরবুং গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার দু’হাজার বাসিন্দার মধ্যে প্রায় ১৭০০ মানুষ পালিয়েছিলেন কুকিদের আক্রমণে। তাঁদের মধ্যে ৫৫০ জন সাহসে ভর করে ফের গ্রামে ফিরেছেন। তাঁরা জানান, রোজগারের পথ, ঘরবাড়ি সব শেষ। আপাতত সরকারের অনুদান ও অন্যান্য সংগঠনের সাহায্যেই সংসার চালাতে হবে। এ দিকে, মণিপুরে বিজেপির দুই মন্ত্রী ও সাত বিধায়ক-সহ ১০ জন কুকি বিধায়ক পৃথক প্রশাসনের দাবিতে সরব হওয়ায় তাঁদের সদস্যপদ কেড়ে নেওয়ার দাবি তীব্র হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিংহ জানিয়েছেন,বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ে আলোচনা এবং বিবেচনা চলছে।