অধীররঞ্জন চৌধুরী। —ফাইল চিত্র।
অধিকার রক্ষা কমিটির কাছে কংগ্রেসের লোকসভার নেতা অধীররঞ্জন চৌধুরী দুঃখপ্রকাশ (রিগ্রেট) করায়, তাঁর বিরুদ্ধে আলাদা করে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাঁর ‘সাসপেনশন’ তুলে নেওয়ার জন্য স্পিকারের কাছে সুপারিশ করেছিল ওই কমিটি। আজ অধিকার রক্ষা কমিটি লোকসভায় জমা দেওয়া নিজেদের রিপোর্টে ওই তথ্য জানিয়েছে।
১০ অগস্ট সংসদের বাদল অধিবেশনে অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার শেষে অধীর চৌধুরীর বিরুদ্ধে অসংসদীয় আচরণের অভিযোগ তুলে অধিকার ভঙ্গের প্রস্তাব আনে সরকার পক্ষ। যা পাশও হয়ে যায়। বিষয়টি পাঠানো হয় অধিকার রক্ষা কমিটির কাছে। বলা হয়, যত দিন না অধিকার রক্ষা কমিটি অধীরের বিরুদ্ধে ওঠা অসংসদীয় আচরণের অভিযোগ খতিয়ে দেখে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিচ্ছে, তত দিন সাসপেন্ড থাকবেন অধীর। অধীরের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব বিতর্ক চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী বা অন্য কোনও মন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ে ভিত্তিহীন অভিযোগ আনা ও বাধাদানের অভিযোগ উঠেছিল। যার ভিত্তিতে ১৮ অগস্ট ও ৩০ অগস্ট বৈঠকে বসে অধিকার রক্ষা কমিটি। গত ৩০ অগস্ট কমিটির সামনে উপস্থিত হন অধীর।
কমিটি আজ যে রিপোর্ট লোকসভায় পেশ করেছে তাতে এভিডেন্স বা সাক্ষ্য পর্বে বলা হয়েছে, অধীর চৌধুরী ৩০ অগস্ট অনাস্থা প্রস্তাবে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের সময়ে যে বাধা দিয়েছিলেন তার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘‘বিতর্কের সময়ে আমি ইচ্ছাকৃত ভাবে কোনও সাংসদের অনুভূতিতে আঘাত দিতে চাইনি।...আমার কোনও সাংসদের মনে আঘাত দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না। আমাদের স্পিকারের উপরে পুরো ভরসা রয়েছে। তিনি একাধারে আমাদের অভিভাবকও। স্পিকার তাঁর ক্ষমতাবলে যে কোনও অসংসদীয় শব্দ বাদ দিতে পারেন। ...। আমি আবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই আমার কাউকে আঘাত দেওয়ার কোনও উদ্দেশ্য ছিল না...।’’
রিপোর্টের ফাইন্ডিং ও কনক্লুসন পর্বের ১৫ নম্বর পয়েন্টে বলা হয়েছে, অধীররঞ্জন চৌধুরী এ বিষয়ে নিজের দুঃখ প্রকাশ করেছেন। অধিকার রক্ষা কমিটির প্রথাই হল, আন্তরিক ভাবে দুঃখপ্রকাশ/ ক্ষমা চাওয়া সব সময়ে খতিয়ে দেখা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে অধীর চৌধুরীর দুঃখপ্রকাশ বুঝিয়ে দিচ্ছে অন্য কোনও সাংসদের অনুভূতি ক্ষুণ্ণ করা তাঁর উদ্দেশ্য ছিল না। কমিটি সুপারিশ পর্বে জানিয়েছে, সব দিক খতিয়ে দেখে মনে করা হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও অন্য মন্ত্রীদের বক্তব্যের সময়ে অধীর যে বাধাদান করেছিলেন সেটি
ইচ্ছাকৃত এবং তিনি তা করে সংসদের অবমাননা করেছিলেন। তবুও কমিটির সামনে নিজের সাক্ষ্য দেওয়ার সময়ে তিনি যে দুঃখপ্রকাশ করেন তার ভিত্তিতে কমিটি তাঁর বিরুদ্ধে নতুন করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ার সুপারিশ করছে। তাই কমিটি মনে করে অধীর চৌধুরী যে ক’দিন সাসপেন্ড ছিলেন তা তাঁর জন্য যথেষ্ট শাস্তি। সেই কারণে কমিটি লোকসভার স্পিকারের কাছে অধীর চৌধুরীর সাসপেনশন দ্রুত তুলে নেওয়ার জন্য সুপারিশ করছে। সেই সুপারিশ দ্রুত কার্যকর হয়। সেই রাতেই অধীরের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়।