(বাঁ দিকে) বাবার সঙ্গে পল্লব সিংহ। সোনু সুদ (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
হাসপাতালের লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তরুণ। চোখ বেয়ে টপ টপ করে পড়ছিল জল। ভিজিয়ে দিচ্ছিল হাতে ধরা লম্বা হাসপাতালের বিল। সাধ্যের বাইরের কয়েকটা সংখ্যা লেখা তাতে। স্থির দৃষ্টিতে সেই বিলের দিকে তাকিয়ে ছিলেন তিনি। আর ঘুরেফিরে একটাই চিন্তা আসছিল মাথায়— বাবাকে বোধ হয় বাঁচাতে পারব না। যত বার ভাবনাটা পাক খাচ্ছিল মাথায়, ততই গতি বাড়ছিল গাল বেয়ে নামা জলের। তরুণ ভাবছিলেন, “কী করব এখন? কী করার আছে? সামর্থ্য নেই বলেই কি অসুস্থ বাবাকে ফিরে পাওয়ার অধিকার নেই আমার?” মরিয়া হয়েই ভাবনাগুলি লিখেছিলেন এক্স (সাবেক টুইটার) হ্যান্ডলে। যদি কেউ তাঁর অবস্থার কথা জেনে পাশে দাঁড়ায়। যদি কেউ বাড়িয়ে দেয় সাহায্যের হাত!
দেখা গেল সত্যিই এগিয়ে এসেছে এক ভরসার হাত। বলিউড অভিনেতা সোনু সুদ সাহায্য করতে চেয়েছেন ওই তরুণকে। এর আগেও বহু বিপদে পড়া মানুষের কাছে দেবদূত হয়ে এসেছেন সোনু। বিপদ থেকে উদ্ধার করেছেন তাঁদের। এ ক্ষেত্রেও তার অন্যথা হল না। এক্স হ্যান্ডলেই সোনু ওই পোস্টের জবাব দিয়ে লিখলেন, ‘‘ভাই, আমরা তোমার বাবাকে হারিয়ে যেতে দেব না। তোমার নম্বর আমাকে সরাসরি ইনবক্সে পাঠাও।’’
ওই তরুণের নাম পল্লব সিংহ। নিজের পোস্টে নিজের পরিস্থিতির বিশদ ব্যাখ্যা দিয়েছেন তিনি। একের পর এক পোস্টে লিখেছেন, কী ভাবে তাঁর বাবার হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসার জন্য দিল্লি এমস-এর একটি কাউন্টার থেকে অন্য কাউন্টারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি। পল্লব জানিয়েছেন, তিনি উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার বাসিন্দা। তাঁর বাড়ির সবচেয়ে কাছের স্বাস্থ্যকেন্দ্র গোরক্ষপুরে। যা উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর খাস তালুক। কিন্তু সেখানে বাবার চিকিৎসা করাতে পারেননি পল্লব। কারণ চিকিৎসক জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবার হৃদ্যন্ত্রের তিনটি ধমনীতেই রক্ত চলাচল প্রায় বন্ধ হয়ে এসেছে। যার জন্য হৃৎপিণ্ড ২০ শতাংশ কাজ করছে। কিন্তু গত ১৫ সেপ্টেম্বর হার্ট অ্যাটাক হলেও এখনও পর্যন্ত অপারেশন করিয়ে উঠতে পারেননি পল্লব।
কারণ তিনি এখন কপর্দকহীন। বেসরকারি হাসপাতালে যাওয়ার টাকা নেই, দিল্লি এমসে এনেছিলেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু সেখানেও চিকিৎসকদের সময় পেতে দরজায় দরজায় ঘুরতে হচ্ছে তাঁকে। ওষুধ দিয়ে বাবাকে ঠিক রাখতে জলের মতো খরচ হচ্ছে টাকা। কিন্তু সুরাহা হচ্ছে না কিছুতেই।
পল্লব জানিয়েছেন, তাঁর চার সদস্যের পরিবারে তিনি ছাড়া রয়েছেন বাবা-মা আর বোন। মা এমসেই স্নায়ুজনিত রোগের চিকিৎসার জন্য দীর্ঘ দিন ধরে ভর্তি। তাঁর চিকিৎসায় খরচ হয়েছে লাখ লাখ টাকা। আর এ বার বাবাও অসুস্থ। পল্লব লিখেছেন কী ভাবে এই পরিস্থিতিতেও তিনি বেঁচে আছেন, তিনি জানেন না। কিন্তু আপাতত বাবা-মাকে হারানোর মতো মনের অবস্থা নেই তাঁর।
পল্লবের এই পোস্ট দেখার কিছু পরেই বলিউড অভিনেতা সোনু যোগাযোগ করেন পল্লবের সঙ্গে। সাহায্যের কথা জানিয়ে পোস্ট করেন কয়েক জন নেটাগরিকও। এঁদেরই এক জন পল্লবের সঙ্গে কথা বলে জানান, দেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী দেখা করেছেন পল্লবের সঙ্গে। তাঁর বাবার চিকিৎসায় সব রকম সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনিও। তবে বলিউড অভিনেতা সোনুর দ্রুত প্রতিক্রিয়া এবং ভরসা জাগানো আশ্বাসের প্রশংসা করেছেন সকলেই।