দলীয় এক কর্মসূচিতে আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। পিছনে বসে রয়েছেন আতিশী মার্লেনা। — ফাইল চিত্র।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশী মার্লেনাকে কয়েক দিনের মধ্যেই সাজানো মামলায় গ্রেফতার করা হতে পারে। বুধবার সকালে সমাজমাধ্যমে পোস্ট করে এই আশঙ্কার কথা শোনালেন আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরীওয়াল। দুপুরে সাংবাদিক বৈঠকেও বলেন একই উদ্বেগের কথা।
আপ প্রধানের দাবি, দিল্লির সরকারের ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা’ এবং ‘সঞ্জীবনী যোজনা’কে কেউ কেউ ভাল ভাবে নিচ্ছেন না। তাঁর নিশানা ছিল বিজেপির দিকেই। কেজরীর সন্দেহ, এই পরিস্থিতিতে দলের প্রথম সারির কয়েক জন নেতার বাড়িতে তদন্তকারী সংস্থা হানা দিতে পারে। তার পরে কয়েক দিনের মধ্যেই কোনও সাজানো মামলায় গ্রেফতার হতে পারেন আতিশী।
দিল্লির সরকার ‘মুখ্যমন্ত্রী মহিলা সম্মান যোজনা’র আওতায় ১৮ বছরের বেশি বয়সি দিল্লির মহিলাদের মাসে ২১০০ টাকা করে ভাতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সরকারি কর্মী বা কোনও রাজনৈতিক পদাধিকারী ছাড়া সব মহিলাই এই প্রকল্পের সুবিধা পাবেন। ২০২৪-২৫ অর্থবর্ষের বাজেটে দিল্লির আপ সরকার জানিয়েছিল, এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি মাসে মহিলাদের ১০০০ টাকা করে দেওয়া হবে। তবে সম্প্রতি কেজরীওয়াল জানান, ২০২৫ সালে দিল্লির বিধানসভা নির্বাচন আপ জিতলে এই ভাতা ২১০০ টাকা করে দেওয়া হবে।
এরই মধ্যে সম্প্রতি দিল্লি সরকারেরই নারী ও শিশু কল্যাণ দফতর থেকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। সেখানে বলা হয়, এখনও পর্যন্ত এই প্রকল্পের বিষয়ে কোনও সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি হয়নি। তাতে সাধারণ মানুষের উদ্দেশে আরও জানানো হয়, যে হেতু এখনও পর্যন্ত এই ধরনের কোনও প্রকল্প নেই, তাই আবেদনপত্র জমা নেওয়ারও প্রশ্ন নেই। যদি কোনও রাজনৈতিক দল বা ব্যক্তি এই প্রকল্পের নামে আবেদনপত্র গ্রহণ করেন, তা প্রতারণা। তাদের এ বিষয়ে কোনও এক্তিয়ার নেই। নারী ও শিশু কল্যাণ দফতরের এই বিজ্ঞপ্তি ঘিরেই বিতর্ক তৈরি হয়। কারণ, আপ নেতারা ইতিমধ্যে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রকল্পের জন্য রেজিস্ট্রেশন করাতে শুরু করেছেন। কয়েক দিন আগে কেজরী নিজেই বলেছিলেন, “মহিলাদের কোথাও যেতে হবে না। দলের স্বেচ্ছাসেবকেরা আপনাদের বা়ড়ি বাড়ি গিয়ে রেজিস্ট্রেশন করিয়ে আসবেন।”
এই বিতর্ককে হাতিয়ার করে দিল্লির আপ সরকারকে বিঁধতেও শুরু করেছে বিজেপি। কেজরীকে ‘প্রতারক’ বলে আক্রমণও চলছে। এই অবস্থায় আম আদমি পার্টির সরকারের উপর প্রতিবন্ধকতা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে পাল্টা অভিযোগ তুললেন কেজরী। আপ প্রধানের কথায় উঠে আসে দিল্লির রাজনৈতিক সমীকরণও। সাত জন সাংসদ এবং এক জন লেফটেন্যান্ট গভর্নরকে নিয়ে দিল্লিতে একটি ‘আধা-সরকার’ তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন কেজরী। আপ প্রধানের দাবি, কোনও ভাবে তাদের সরকারের কাজ রুখতে না-পেরে বিজেপি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার সাহায্য নিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের কাছে খবর আছে, ইডি, সিবিআই এবং আয়কর দফতরের কাছে উপর থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যে, সাজানো মামলায় গ্রেফতার করতে হবে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশীকে।” আপকে ভোটের প্রচার থেকে দূরে সরিয়ে রাখতেই এ সব চেষ্টা চলছে বলে দাবি কেজরীর। দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী আতিশীও কেজরীর সুরে সুর মিলিয়েছেন। সরকারি আধিকারিকদের উপর চাপ দিয়ে বিজেপি ভুল তথ্য ছড়ানোর চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ আতিশীর। প্রকল্পের বিষয়ে যে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ হয়েছে, সেটিও মিথ্যা বলে দাবি দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর।