বিস্ফোরণের জেরে ১২ ফুট গর্ত হয়ে গিয়েছে রাস্তায়। ছবি: পিটিআই।
খুব ধীরে ধীরেই জঙ্গলঘেরা রাস্তা দিয়ে এগোচ্ছিল মাওবাদী দমনকারী পুলিশ দলের কনভয়। সাত গাড়ির কনভয়ে ৭০ জন নিরাপত্তারক্ষী ছিলেন। কনভয়ে থাকা একটি গাড়ি অন্যটির থেকে বেশ দূরত্ব বজায় রেখেই চলছিল। সাধারণত সন্ত্রাসদমনকারী কোনও অভিযানে বেরোলে কনভয়ে থাকা গাড়িগুলি একটি আর একটির থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই চলে। কারণ, হামলা হলে সকলের যেন একসঙ্গে মৃত্যু না হয়।
বুধবার ছত্তীসগঢ়়ের দন্তেওয়াড়ায় পুলিশের কনভয়ের উপর হামলা চালায়। তাতে ডিসট্রিক্ট রিজ়ার্ভ গার্ড (ডিআরজি)-এর ১০ জওয়ান নিহত হয়েছেন। বিস্ফোরণে ব্যবহার করা হয়েছিল ৫০ কেজি ইমপ্রোভাইজ়ড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি)। বিস্ফোরণ এতটাই জোরালো ছিল যে ১২ ফুট গভীর এবং ২৫ ফুট চওড়া গর্তের সৃষ্টি হয়।
কী ভাবে হামলা থেকে বেঁচে ফিরেছেন, সেই অভিজ্ঞতার কথা এনডিটিভি-কে জানিয়েছেন এক নিরাপত্তারক্ষী। তিনি জানান, কনভয়ে থাকা সাতটি গাড়ির মধ্যে তৃতীয়টিতে বিস্ফোরণ ঘটায় মাওবাদীরা। হামলা হওয়া ওই গাড়ির পিছনে ছিল তাঁদের গাড়িটি। ওই গাড়ি থেকে তাঁদের গাড়িটির দূরত্ব ছিল ১০০-১৫০ মিটার। নিরাপত্তারক্ষী বলেন, “বিস্ফোরণে সামনে গাড়িটিকে খেলনার মতো শূন্যে উঠে যেতে দেখলাম। গাড়িতে থাকা ডিআরজি-র জওয়ানরা রাস্তার দু’ধারে ছিটকে পড়লেন। গাড়িটি ফালা ফালা হয়ে গিয়েছিল।”
সঙ্গে সঙ্গে কনভয়ের বাকি গাড়ি থেকে নিরাপত্তারক্ষীরা হামলা চালানোর জন্য প্রস্তুত নেন। ওই নিরাপত্তারক্ষী জানান, তাঁরা গাড়ির নীচে আশ্রয় নিয়েছিলেন। মাওবাদীদের জবাব দেওয়ার জন্য পজিশন নিয়েছিলেন। হামলার পর পরই এক পুলিশকর্মী চিৎকার করে বলে ওঠেন, “উড়ে গিয়েছে, পুরো গাড়িটি উড়ে গিয়েছে।” এক পুলিশকর্মী সেই ঘটনার ভিডিয়ো করেন। বিস্ফোরণের পর সেখানে মাওবাদীরা এসেছিলেন। তাঁদের লক্ষ্য করে পুলিশ গুলি চালায়। পাল্টা জবাব দেন মাওবাদীরাও। বেশ কয়েক রাউন্ড গুলি বিনিময়ের পর একটা নিস্তব্ধতা নেমে আসে।
মাওবাদীরা জঙ্গলে পালিয়ে গেলে সহকর্মীদের বাঁচানোর জন্য ছুটে যান কনভয়ের অন্য পুলিশকর্মীরা। কিন্তু ওই গাড়িতে থাকা চালক-সহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এই হামলার পর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠে এসেছে। বলা হচ্ছে, সাধারণত যে রাস্তা দিয়ে কনভয় যায়, তার আগে সেখানে ‘রোড-ওপেনিং পেট্রোলিং’ হয়। রাস্তা পরিষ্কার কি না, তা খতিয়ে দেখে সবুজসঙ্কেত দেওয়ার পরই কনভয় যায় ওই রাস্তা দিয়ে। এ ক্ষেত্রে সেই পেট্রোলিং হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।