লক্ষ্মী সুধারাম। কোয়েমবত্তূরের আলুনদুরাই গ্রামে জন্ম। পড়াশোনায় খুব মনোযাগী ছিলেন। কিন্তু মা-বাবা বেশি দিন মেয়েকে বাড়িতে বসিয়ে রাখতে চাননি। তাই একপ্রকার জোর করেই মাত্র ১৭ বছর বয়সে তাঁর বিয়ে দিয়ে দেন।
বিয়ের ৩ বছর পরই স্বামী মারা যান। মেয়ে নির্মলার বয়স তখনদেড় বছর। তাঁর ভাইয়ের বয়স আরও কম। কারও কাছে সাহায্যের হাত পাতেননি তিনি। নিজেই উপার্জন করে সংসার চালাতে শুরু করেন।
ভোরে উঠে সংসারের সমস্ত কাজ করে দুই ছেলেমেয়েকে স্কুলেপৌঁছে দেওয়া। তারপর আখচাষের কাজে যাওয়া। এ ভাবেই চলছিল অভাবের সংসার।
কিন্তু অভাবের মধ্যেও তাঁর ইচ্ছা ছিল মেয়েদের সাহায্য করা। গ্রামের নির্যাতিতাদের পাশেও দাঁড়াতেন তিনি। নিজে বেশি দূর পড়াশোনা করতে পারেননি। স্বপ্ন দেখেছিলেন মেয়ে নির্মলাকে বড় সরকারি অফিসার করার। যাতে সমাজের সেবা করতে পারেন।
তাঁর উৎসাহ এবং অক্লান্ত পরিশ্রমে মেয়ে নির্মলা আজ একজনআইপিএস অফিসার। ২০০৯ সালের আইপিএস তিনি। মা লক্ষ্মী সুধারাম মারা যান ২০১৬ সালে। একজন আখচাষির মেয়েথেকে কী ভাবে তিনি আইপিএস হলেন নির্মলা?
২০০৪ সালে স্নাতক হওয়ার পর বেসরকারি ব্যাঙ্কে কাজ পান নির্মলা। কিন্তু মা চাইতেন পাবলিক সার্ভিস কমিশনে বসুক মেয়ে। মেয়েকে নিজের ইচ্ছার কথা জানিয়েছিলেন।
তাঁদের গ্রামে জন্ম এক আইএএস অফিসারের সম্পর্কে নির্মলাকে গল্পও বলেছিলেন। ওই অফিসারও খুব কষ্ট করে পড়াশোনাকরেছেন। তাঁর কাহিনি বলে তিনি মেয়ে নির্মলাকে পরীক্ষায় বসার জন্য উৎসাহিত করেন।
নির্মলার কাছে তখন আইপিএস, আইএএস সব অবাস্তব। তিনিও যে কোনওদিন এমন হতে পারবেন, তা কল্পনাতেও আনতে পারতেন না। তাই মাকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি এ সব পারবেন না।
তবে ওই আইএএস-এর কাহিনি শুনে আত্মবিশ্বাসী হয়েছিলেন নির্মলা। ওই অফিসারের সম্পর্কে আরও তথ্য পড়তে শুরু করেন তিনি। তাঁর কষ্টকরজীবন নিয়ে পড়াশোনা করতে শুরু করেন।
এর পর উদ্বুদ্ধ নির্মলাও আইপিএসের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, বই কিছুই ছিল না তাঁর কাছে। প্রথম ৬ মাস লাইব্রেরিতে বসে লাগাতার পড়াশোনা করতেন। কিন্তু বুঝতেই পারতেন না ঠিক কী পড়তে হবে।
শেষে কাগজে বিনা বেতনে ইউপিএসসি ক্লাসের একটি বিজ্ঞাপন দেখে সেখানে নির্মলাকে ভর্তি করিয়ে দেন তাঁর মা। নির্মলা প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন।
তখন ব্যাঙ্কের চাকরিও ছেড়ে দিতে হয়েছিল তাঁকে। ফলে সংসারের পুরো চাপটাই পড়েছিল তাঁর মায়ের উপর। এর এক বছর পর বিনা বেতনে কোচিংয়ের আরও একটি সুযোগ পান নির্মলা।
চেন্নাইয়ের তামিলনাড়ু স্টেট ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর সিভিল সার্ভিস-এ কোচিং নিতে শুরু করেন। এখানে বিনামূল্যে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল পড়ুয়াদের জন্য। এই ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েই নির্মলা মূলত আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন।
বই কেনার টাকা ছিল না। সহপাঠীদের বই নিয়ে ফটোকপি করে নিতেন। তাঁকে সাহায্য করতেন তাঁর ব্যাচের অর্জুন বলে একবন্ধু। পরে অর্জুনকেই বিয়ে করেন নির্মলা। নাগপুরের আয়কর অফিসার অর্জুন।
২০০৯ সালে ইউপিএসসি পরীক্ষায় পাশ করেন তিনি। সারা ভারতে ২৭২ স্থান পান। মহারাষ্ট্রের নান্দেন জেলায় প্রথম পোস্টিংহয় তাঁর। আজীবন মায়ের আদর্শেই চলতে চান। সততার পাশে দাঁড়িয়ে মায়ের স্বপ্ন পূরণ করতে চান।