প্রতীকী ছবি।
যখন গ্রেফতার হয়েছিলেন, তখন গুজরাতে সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী। একজন-দু’জন নয়, এক সঙ্গে ১২৭ জনকে জঙ্গি-যোগের অভিযোগে সুরাত থেকে গ্রেফতার করেছিল নরেন্দ্র মোদীর পুলিশ।
দু’দশক পেরিয়ে ওঁরা যখন অভিযোগমুক্ত হলেন, তত দিনে সেই নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাটিয়ে দিয়েছেন প্রায় সাত বছর!
সময়টা ২০০১ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিক। মাত্রই কয়েক মাস আগে মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন মোদী। সুরাতের অঠওয়ালাইনসের পুলিশ ১২৭ জনকে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনে গ্রেফতার করেছিল। সুরাতের সগরমপুরায় নভসরি বাজারের কাছে রাজশ্রী হলে সভা চলাকালীন এঁদের গ্রেফতার করা হয়। এর কিছু দিন আগেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ইসলামি জঙ্গি সংগঠন সিমি-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। গুজরাত পুলিশের অভিযোগ ছিল, ধৃতেরা সকলেই সেই নিষিদ্ধ সংগঠন সিমি-র সদস্য। নরেন্দ্র মোদীর পুলিশের অভিযোগ ছিল, সংগঠনের বিস্তার নিয়ে আলোচনা করতেই সে দিন জড়ো হয়েছিলেন তাঁরা। গুজরাতের বহু যুবকের সঙ্গেই সে দিন গ্রেফতার হয়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গ, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থান, কর্নাটক এবং বিহার থেকে আসা অনেকে। প্রায় ৯ মাস জেলে কাটানোর পরে ধৃতেরা জামিন পেলেও ইউএপিএ-র বিভিন্ন ধারায় তাঁদের বিচার চলছিল এত দিন। অবশেষে ‘উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে’ ধৃত সকলকেই শনিবার মুক্তি দিল সুরাতের মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট এ এন দাভে-র আদালত। শনিবার আদালতে নির্দোষ ঘোষিত হয়েছেন ১২২ জন। বিচারপর্ব চলাকালীনই মারা গিয়েছেন বাকি ৫ জন।
বিচারপর্বে জানা যায়, ধৃতেরা ওই সময় সারা ভারত সংখ্যালঘু শিক্ষা বোর্ড নামে একটি সংগঠনের ডাকা সভায় যোগ দিতে জড়ো হন। পুলিশের অভিযোগ, ওই নামের আড়ালে আসলে সিমি-র সভা চলছিল। কিন্তু শনিবার রায় দিতে গিয়ে বিচারক জানান, ধৃতদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য, সন্তোষজনক কোনও প্রমাণ দিতে পারেনি গুজরাত পুলিশ। এমনকি ধৃতেরা ওখানে বেআইনি কোনও কাজ করার জন্য জড়ো হয়েছিলেন বলে পুলিশ যে দাবি করেছিল, তা-ও তারা প্রমাণ করতে পারেনি বলে জানিয়েছে আদালত। ধৃতদের কাছ থেকে বহু ‘নিষিদ্ধ কাগজপত্র’ উদ্ধার হয়েছে বলে দাবি করেছিল গুজরাত পুলিশ। কিন্তু পুলিশের সেই দাবিতে আদালত সন্তুষ্ট নয় বলে জানিয়েছেন ধৃতদের তরফে আইনজীবী এম এম শেখ।
বিচারপর্বেই কেটে গিয়েছে প্রায় দু’দশক। শনিবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির ছিলেন ১১১ জন। গ্রেফতারির সময় এঁদের অনেকেরই বয়স ছিল কুড়ির কোঠায়।
তাঁদেরই একজন আমদাবাদের আসিফ শেখ। ‘‘আমি কলেজের ফার্স্ট বয় ছিলাম। ইচ্ছে ছিল, কলেজ পাশ করে বেরিয়ে সাংবাদিক হব। আজ আমি মশলা বিক্রি করে সংসার চালাই! কেন মিথ্যে মামলায় জড়িয়ে এত দিন ধরে আমাদের জীবন শেষ করে দেওয়া হল, তার জবাব দেওয়ার কেউ নেই,’’ রায় ঘোষণার পরে কেঁদে ফেললেন তিনি। একই অবস্থা প্রায় সকলেরই। এক দিকে মামলা চালানোর খরচ, অন্য দিকে জঙ্গি-যোগের তকমা মোছার আপ্রাণ লড়াই চালাতে হয়েছে এত দিন।
এ বার জঙ্গি-তকমা ঘুচলেও বাকি জীবনটা কী ভাবে কাটবে, জানেন না আসিফেরা।