ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি বা আইআইটি। এই ভারতীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা এবং গবেষণা করা পড়ুয়াদের দেশি-বিদেশি সংস্থায় বিশাল চাহিদা। লাখ লাখ টাকা মাইনে দিয়ে তাঁদের নিজেদের সংস্থায় কাজ করাতে চায় সবাই। কিন্তু তার মধ্যেও কেউ কেউ খুঁজে নিয়েছেন অন্য পথ। এমনই ১১ জন আইআইটি প্রাক্তনী যাঁরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে উজ্জ্বল এবং গর্বিত করেছেন দেশকে।
অরবিন্দ কেজরীবাল (আইআইটি খড়গপুর): ১৯৬৮ সালের ১৬ অগস্ট হরিয়ানার সিওয়ানি-র উচ্চ মধ্যবিত্ত পরিবারে জন্ম অরবিন্দ কেজরীবালের। ১৯৮৫ সালে আইআইটি জয়েন্ট এন্ট্রান্স পরীক্ষায় সর্বভারতীয় র্যাঙ্ক ছিল ৬৫৩। এর পর কেজরীবাল ভর্তি হন আইআইটি খড়্গপুরে।
মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে জামশেদপুরে টাটা স্টিল সংস্থায় চাকরি নেন। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ারকে টানছিল আমলা-জীবন। অগত্যা সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার প্রস্তুতির জন্য চাকরি থেকে ইস্তফা। সেই সময় কিছু দিনয় কলকাতায় কাটান দিল্লির বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী।
১৯৯৫ সালে ইন্ডিয়ান রেভিনিউ সার্ভিস (আইআরএস)-এ আয়কর বিভাগের অ্যাসিস্ট্যান্ট কমিশনার হন কেজরী। প্রথমে ইঞ্জিনিয়ার, তার পর আমলা এখন পুরোদস্তুর জাতীয় রাজনীতির অন্যতম মুখ অরবিন্দ কেজরীবাল।
রঘুরাম রাজন (আইআইটি দিল্লি): মধ্যপ্রদেশের ভোপালে একটি তামিল পরিবারে জন্ম রঘুরাম রাজনের। ছোট থেকেই পড়াশোনায় চৌখস রাজন। ১৯৮১ সালে আইআইটি দিল্লি-তে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সে ভর্তি হন।
গোল্ড মেডেলিস্ট মেকানিক্যাল ইঞ্জিনায়ার টাটা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিসে ম্যানেজমেন্ট ট্রেনি হিসেবে যোগ দেন। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অব ইন্ডিয়ার প্রাক্তন গভর্নর এখন ‘ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো বুথ স্কুল অব বিজনেস’-এর অধ্যাপক। কাজ করেছেন বিশ্ব অর্থ ভান্ডারের মতো সংস্থায়।
বিনোদ খোসলা (আইআইটি দিল্লি): ভারতীয়-আমেরিকান বিখ্যাত উদ্যোগপতি বিনোদ খোসলা। তিনিও আইআইটি পাশ। আইআইটি দিল্লি থেকে ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে মন দেন ব্যবসায়।
একদা সান মাইক্রোসিস্টেমের সহ-প্রতিষ্ঠাতা পরে একক ভাবে তৈরি করেন খোসলা ভেঞ্চারস। ফোবর্সের বিচারে আমেরিকার ৪০০ ধনী ব্যক্তির তালিকায় এক জন ছিলেন বিনোদ খোসলা।
দীপেন্দর গোয়েল (আইআইটি দিল্লি): স্কুলে তিনি নাকি গড়পড়তা ছাত্র ছিলেন। প্রত্যেক বছর পরীক্ষার ফল বেরলে দেখা যেত শেষের দিকে রয়েছে দীপেন্দর গোয়েলের নাম। আচমকাই অষ্টম শ্রেণিতে তৃতীয় হয়েছিলেন।
চণ্ডীগড়ের বাড়ির কেউ ভাবতে পারেনি ওই ছেলেটিই আইআইটি দিল্লি-তে পড়তে যাবে। আইআইটি-ই তাঁর জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। নিজে থেকে কিছু করে দেখানোর আত্মবিশ্বাসে ভর করে। ২০০৫ সালে আইআইটি পাশ করা ছেলেটি তৈরি করেন জোম্যাটো ফুড ডেলিভারি অ্যাপ। অঙ্ক আর কম্পিউটার নিয়ে আইআইটি পাশ করা ছেলেটিকে তার পর আর পিছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি।
চেতন ভগত (আইআইটি দিল্লি): তাঁর প্রায় সব বই-ই বেস্টসেলার। তাঁর লেখা বই নিয়ে তৈরি হয় হিট সিনেমা।! ‘ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান’, ‘থ্রি মিস্টেকস্ অব মাই লাইফ’, ‘হাফ গার্লফ্রেন্ড’— একের পর এক বেস্টসেলারের লেখক চেতন হালে মুখ দেখাচ্ছেন টিভি শো এবং সিরিজে।
আগাগোড়া পড়াশোনায় তুখোড় চেতনও আইআইটি পাশ। তিনিও মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে আইআইটি দিল্লি থেকে পাশ করেন। পরে আইআইএম আমদাবাদ থেকে এমবিএ করেন।
এনআর নারায়ণমূর্তি (আইআইটি কানপুর): বিখ্যাত তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা ‘ইনফোসিস’-এর প্রতিষ্ঠাতা তথা প্রাক্তন চেয়ারম্যান এনআর নারায়ণমূর্তি স্নাতকোত্তর করেন আইআইটি কানপুর থেকে। সালটা ১৯৬৯।
২০১২ সালে ফরচুন ম্যাগাজিনের বিচারে তিনি এ প্রজন্মের প্রথম ১২ জন উদ্যোগপতিদের এক জন। ২০০৮ সালে পদ্মভূষণ সম্মানে তাঁকে ভূষিত করে ভারত সরকার।
সুন্দর পিচাই (আইআইটি খড়গপুর): আইআইটি খড়্গপুর থেকে পাশ করা রোগা, লাজুক ছেলেটাকে আজ সারা বিশ্ব এক নামে চেনে। তিনি সুন্দর পিচাই। গুগল আলফাবেটের সিইও।
নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে এসে সিলিকন ভ্যালি শাসন করা সুন্দর পিচাইয়ের সফর নজরকাড়া এবং অনুপ্রেরণাযোগ্য। আইআইটি খড়্গপুর থেকে বিটেক পাশ করা ছেলেটি এখন বিশ্বের সফল ব্যক্তিদের মধ্যে এক জন।
সচিন বনশল (আইআইটি দিল্লি): অনলাইনে কেনাকাটা করতে ভালবাসেন আর সচিন বনশলকে চেনেন না? ঠিক ধরেছেন। তিনি ভারতের অন্যতম বৃহৎ ই-কমার্স সংস্থা ফ্লিপকার্টের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। যদিও সেই সংস্থা এখন ওয়ালমার্ট কিনে নিয়েছে।
এই সচিন বনশলও আইআইটি প্রাক্তনী। কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে ২০০৫ সালে আইআইটি দিল্লি থেকে পাশ করেন।
ভবিষ্য অগ্রবাল (আইআইটি বম্বে): ওলা ক্যাবের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ভবিষ্য অগ্রবাল। কম্পিউটার সায়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে পাশ করে ভাবলেন চাকরি নয়, নিজে কিছু করবেন।
সেখান থেকেই পথচলা শুরু ওলা ক্যাবের। ২০১৮ সালে টাইম ম্যাগাজিনের বিচারে বিশ্বের ১০০ জন প্রভাবশালীর মধ্যে ছিলেন তিনি।
জিতেন্দ্র কুমার (আইআইটি খড়গপুর): জিতু ভাইকে এখন কে না চেনে? একের পর এক হিট ওয়েব সিরিজ উপহার দেওয়া জিতেন্দ্র কুমারও প্রাক্তন আইআইটি পড়ুয়া।
আইআইটিতে গিয়েছিলেন সিভিল ইঞ্জিনিরিং পড়তে। কিন্তু সেখান থেকে ফিরলেন অভিনেতা হয়ে। তার পর ‘কোটা ফ্যাক্টরি’ থেকে ‘পঞ্চায়েত’ ওয়েবসিরিজ হয়ে ‘শুভ মঙ্গল সাবধান’ সিনেমা, সর্বত্রই তাঁর উপস্থিতি।
রোহিত বনশল (আইআইটি দিল্লি): তখন সবে সবে ভারতের বাজারে ই-কমার্স সংস্থার রমরমা শুরু হয়েছে। রোহিত বনশল নামে এই আইআইটি প্রাক্তনী তৈরি করলেন স্ন্যাপডিল।
স্ন্যাপডিলের সহ-প্রতিষ্ঠাতা এবং সিওও রোহিত আইআইটি দিল্লি ফেরত।