—প্রতীকী ছবি।
জ্যোতিষশাস্ত্রে ভয় ধরানো কিছু যোগ বা দোষ আছে। গুরু-চণ্ডাল যোগ সেগুলির মধ্যে একটি। গুরু-চণ্ডালকে যোগ বলার থেকে দোষ বলাই বেশি যুক্তিযুক্ত।
গুরু-চণ্ডাল নামই বুঝিয়ে দেয় এই দোষ কেন ভয়ের। বৃহস্পতি হলেন গুরু এবং রাহু হলেন দৈত্য। বৃহস্পতি এবং রাহু একই সঙ্গে অবস্থান করলে গুরু-চণ্ডাল দোষ সৃষ্টি হয়।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে রাহু-কেতু হল উত্তর এবং দক্ষিণ গাণিতিক বিন্দু (নোড)। রাহুর নির্দিষ্ট দূরত্বে যে গ্রহ অবস্থান করে, সেই গ্রহের পূর্ণ ফল দানের ক্ষমতা নষ্ট হয়। রাহুর কাছাকাছি বৃহস্পতি অবস্থান করলে বৃহস্পতিরও ফল দান করার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এর ফলে বৃহস্পতির ফল দানের ক্ষমতা প্রায় শেষ হয়ে যায় এবং রাহুর প্রভাব বৃদ্ধি পায়।
বৃহস্পতি এবং রাহুর গতি বিপরীত হওয়ায় জন্মপত্রিকায় রাহুর গতিপথে বৃহস্পতি অবস্থান করলে তা শক্তিশালী দোষ সৃষ্টি করে। সাধারণত রাহু এবং বৃহস্পতির অবস্থান ১০ ডিগ্রির মধ্যে হলে যোগ বা দোষ ফলপ্রসূ হয়। গ্রহদ্বয়ের অবস্থান ৫ ডিগ্রির মধ্যে হলে তা ভয়ঙ্কর। নাড়ীজ্যোতিষ মতে রাহুর ডিগ্রি বেশি এবং বৃহস্পতির ডিগ্রি কম হলে তা ভয়ঙ্কর। বিপরীত হলে সমস্যা থাকে, কিন্তু অতটা ভয়ঙ্কর নয়।
জ্যোতিষশাস্ত্র মতে বৃহস্পতি শুভ গ্রহ, সব সময় শুভ ফল দান করে। বিদ্যা, শিক্ষা, বিচার-বিবেচনার ক্ষমতা, সুস্থ চিন্তাভাবনা, ন্যায়বিচার ইত্যাদির উপর বৃহস্পতির প্রভাব রয়েছে। নাড়ীজ্যোতিষ মতে বৃহস্পতিকে লগ্ন ধরা হয়। বৃহস্পতির সঙ্গে রাহুর অবস্থান বেশ কিছু বিষয়ে অশুভ ইঙ্গিত নির্দেশ করে।
গুরু-চণ্ডাল দোষে কেন সমস্যার সৃষ্টি হয়? রাহু অশুভ গ্রহ। নেশার প্রতি আশক্তি, কু-সঙ্গ, অবাস্তব চিন্তা ইত্যাদি রাহুর প্রভাবের ফলে হয়। গুরু-চণ্ডাল যোগে রাহুর প্রভাবে প্রভাবিত হওয়ার এবং বৃহস্পতির প্রভাব হ্রাসের কারণে সুস্থ চিন্তা, সুস্থ জীবনধারা ব্যাহত হয় এবং ভ্রান্তির কারণে মানুষ কু-পথে চালিত হয়। নাড়ীজ্যোতিষ মতে এই দোষ আয়ুর উপরেও প্রভাব দান করে। বৈদিক জ্যোতিষ মতে গুরু-চণ্ডাল যোগে রাহুর অন্তর্দশা আর প্রত্যন্ত দশাকালে বিশেষ সচেতনতা অবলম্বন জরুরী।
গুরু-চণ্ডাল যোগের ক্ষেত্রে রাহুর প্রতিকার হিসেবে রত্ন, গ্রহমূল বা ধাতু ধারণের পরিবর্তে বা ধারণের সঙ্গে জীবনধারার পরিবর্তন অবশ্যই প্রয়োজন। রাহুর দশা চলাকালীন সময়ে দান, দেবী ছিন্নমস্তার পূজা, দেবী দুর্গার পূজা, মৃত্যুঞ্জয় মন্ত্র যপে শুভ ফল লাভ হয়।