Air Pollution in Kolkata

দূষণে বাড়ছে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, অ্যালার্জি! কী করবেন, কী করবেন না জানাচ্ছেন চিকিৎসক

সর্দিকাশি না অ্যালার্জি? লক্ষণগুলি এক হলেও বিষয়টি কিন্তু আদতে এক নয়। এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? জানাচ্ছেন চিকিৎসক অদ্রিজা রহমন মুখোপাধ্যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

কলকাতা শেষ আপডেট: ২৫ জানুয়ারি ২০২৩ ১৯:০২
Share:

মাঝেমধ্যে রক্তে ‘অ্যালার্জেন’ পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি হতে পারে। ছবি: সংগৃহীত।

কালীপুজোর পর থেকেই শুরু হয়েছিল গলা খুসখুস। শীত পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই দোসর হয়ে এল হাঁচি। প্রথম কয়েক দিন বাড়ির বড়দের নিদান মেনে আদা, মধু, তুলসীপাতা সহযোগে গরম পানীয় খেয়ে তৎক্ষণাৎ একটু আরাম পেলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। তার মধ্যে কলকাতায় হঠাৎ ঠান্ডা পড়ায় নাক দিয়ে জলও পড়ছে ক্রমাগত। অথচ এই ছোটখাটো, সাধারণ ঠান্ডা লাগার উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে, ওষুধ খেতে হবে, তা অনেকেই ভাবতে পারেন না।

Advertisement

কিন্তু দিন দিন এই উপসর্গ কমার বদলে যখন বাড়তে শুরু করে, তখন টনক নড়ে। শুধু তা-ই নয়, তার জন্যই নাকি কাজের জায়গায় সকলে সংক্রামিত হচ্ছেন এমন অভিযোগও করছেন অনেকে। কিন্তু শীতকালে ঠান্ডা লাগার মতো স্বাভাবিক ঘটনা নিয়ে এর আগে এত মাথা ঘামাতে হয়নি কাউকে। সহকর্মীদের মধ্যে কেউ কেউ আবার বলেছেন, এ নাকি সাধারণ ঠান্ডা লাগা নয়, মারাত্মক রকমের অ্যালার্জি।

কিন্তু অতিমারি পরবর্তী সময়ে এই উপসর্গগুলি হঠাৎ এত বেড়ে গেল কী করে? এর থেকে মুক্তির উপায়ই বা কী? বাতলে দিলেন চিকিৎসক অদ্রিজা রহমন মুখোপাধ্যায়। অদ্রিজা বলেন, “আশ্চর্যজনক হলেও এ কথা সত্যি যে, আগের বছরগুলির তুলনায় শীতকালীন অ্যালার্জির প্রকোপ যেন এ বছর অনেকটাই বেশি। অনেকে ভাবেন ঠান্ডার জন্যেই বোধ হয় অ্যালার্জি হচ্ছে। তা হলে তো ঠান্ডার দেশে সকলেই অ্যালার্জিতে ভুগতেন। তা তো হয় না। অ্যালার্জির আসল কারণ হচ্ছে বায়ুদূষণ। তবে দূষণের কারণে যে সকলে একই রকম ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়বেন, এমন ধারণা কিন্তু ঠিক নয়। কারও রক্তে ‘ইয়োসিনোফিল’-এর পরিমাণ বেশি থাকলে, কিংবা কারও ক্ষেত্রে হিস্টামিন কোষ ভেঙে রক্তে না মিশলে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়াও ভিন্ন হবে।’’

Advertisement

আবার জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত কোনও দিন অ্যালার্জির নাম শোনেননি এমন অনেকেই হঠাৎ আক্রান্ত হচ্ছেন এই সমস্যায়। অদ্রিজার মতে, “অ্যালার্জির প্রবণতা কেন বাড়ে তা জানতে গেলে প্রথমে বুঝতে হবে অ্যালার্জির কারণ। দেহের কোষে ‘হিস্টামিন’ নামে একটি যৌগ বন্দি অবস্থায় থাকে। শরীরবান্ধব নয়, এমন কিছু জিনিস শরীরে প্রবেশ করলে হিস্টামিনের বন্দি দশা নষ্ট হয়। তৎক্ষণাৎ সেটি তখন রক্তে ছড়িয়ে পড়ে। রক্তে মিশতেই এর খারাপ প্রভাব পড়ে শরীরে। শীতকালে এটা বেশি হয় কারণ, এই সময়ে ‘অ্যালার্জেন’-এর সংখ্যা বাতাসে বেশি পরিমাণে থাকে। চোখ চুলকানো থেকে হাঁচি, কাশি, সর্দি, গলা খুসখুস, শ্বাসকষ্ট, ‌র‌্যাশ— এ সবেরই নেপথ্যে রয়েছে হিস্টামিন।”

আগে শীতকালে ঘুম থেকে উঠলে ভোরবেলা কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকত চারদিক। কিন্তু এখন যত দূর চোখ যায়, শুধুই ঘিরে থাকে ধোঁয়ার চাদর বা ‘স্মোগ’। এই ধোঁয়া কিন্তু আমাদের জন্য খুব একটা স্বাস্থ্যকর নয়। বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়তে থাকা শহর ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া তো সমাধান নয়, তা হলে কী করণীয়? অদ্রিজা বলেন, “তার আগে বলা ভাল চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া মনগড়া ওষুধ একেবারেই খাবেন না। যতই সাধারণ ঠান্ডা লাগা হোক, দোকান থেকে ইচ্ছে মতো অ্যান্টি-বায়োটিক খাওয়া ভীষণ বিপজ্জনক। গরম জলের বাষ্প নেওয়া, গার্গল করা পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু বেশি সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ অবশ্যই নিতে হবে।”

এ ছাড়া আর কী কী বিষয় মাথায় রাখা জরুরি?

অতিমারির সময় থেকে যে মাস্ক পরার অভ্যাস শুরু হয়েছিল, তা-ই চালিয়ে যেতে হবে। মাঝেমধ্যে রক্তে ‘অ্যালার্জেন’ পরীক্ষা করে দেখে নিতে হবে কোন কোন জিনিসে অ্যালার্জি হতে পারে। তবে অদ্রিজার মতে, শিশু এবং বয়স্কদের ভয় যেহেতু সবচেয়ে বেশি, তাই প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সংক্রমণ হওয়ার আগেই দু’টি টিকা নিয়ে রাখা জরুরি। একটি ফ্লু থেকে এবং আর একটি নিউমোনিয়া থেকে বাঁচার জন্য। তবে টিকা নেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement