চোখেও ধরা পড়ে থাইরয়েডের সমস্যা। ছবি: শাটারস্টক।
অল্পতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ছেন? এ দিকে যতই সচেতন থাকুন না কেন, ওজন কিছুতেই নিয়ন্ত্রণে থাকছে না। ভালমন্দ না খেয়েও বেড়ে যাচ্ছে ওজন, চুল ঝরছে অকালে, ত্বক হয়ে উঠছে জৌলুসহীন। কর্মব্যস্ত জীবনে ছোটখাটো এই শারীরিক সমস্যাগুলি আমরা প্রায়ই অবহেলা করি। অথচ এই উপর্গগুলির পিছনে লুকিয়ে থাকতে পারে থাইরয়েডের চোখরাঙানি। তাই থাইরয়েডের সমস্যা দেখা দিলে বিগড়ে যেতে পারে হরমোনের ভারসাম্য, দেখা দিতে পারে একাধিক রোগ। অনেক সময়ে শুরুতে বোঝা যায় না রোগের উপসর্গ। আর রোগ চিনতে যে দেরিটা হয়ে যায়, তাতেই নষ্ট হয় অনেকটা গুরুত্বপূর্ণ সময়।
থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে তা ধরা পড়তে পারে রোগীর চোখে। বিজ্ঞানের ভাষায় একে বলে ‘থাইরয়েড আই’। থাইরয়েডের সমস্যা থেকে চোখে যে অসুবিধা তৈরি হয়, তা এক প্রকার ‘অটোইমিউন ডিজ়িজ়’। কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরীরের যে রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা রয়েছে, তা ভাইরাস-ব্যাক্টেরিয়ার বদলে উল্টে দেহের বিভিন্ন অঙ্গকেই আক্রমণ করে বসে। একেই অটোইমিউন ডিজ়িজ় বলে। এ ক্ষেত্রে দেহেরই কোনও অংশকে ক্ষতিকর ভেবে তার বিরুদ্ধে ভুলবশত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করে শরীর। শরীরে থাইরয়েড হরমোনের ক্ষরণ কমে গেলে কিংবা বেড়ে গেলে কখনও কখনও এই একই সমস্যা দেখা দেয় চোখ এবং তার আশপাশের পেশিতে। চোখের আশপাশের পেশিকে চিনতে না পেরে তাকেই আক্রমণ করে রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা। এর জেরে চোখ ও তার পার্শ্ববর্তী নমনীয় পেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি হয়। এই প্রদাহের কারণে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কী কী লক্ষণ দেখা যায়?
১) অনেক সময়ে বাইরে থেকে দেখলে মনে হয় যেন, চোখের অক্ষিগোলক কোটরের বাইরে বেরিয়ে আসবে।
২) রক্তের মতো লাল হয়ে যায় চোখ। শুরু হয় ব্যথা। চোখের উপর এবং নীচে ফোলাভাব।
৩) অতিরিক্ত জল পড়া অথবা চোখ একেবারে শুকিয়ে যাওয়াও এই রোগের লক্ষণ।
৪) চোখ নাড়াতে সমস্যা হওয়া, চোখে উজ্জ্বল আলো পড়লে অস্বস্তি হওয়া।
৫) দেখা দিতে পারে দ্বৈত দৃষ্টি। এমনকি, দৃষ্টিশক্তি লোপ পাওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
কী করবেন?
যাঁরা থাইরয়েডের সমস্যায় ভোগেন, তাঁদের নিয়মিত চোখের ডাক্তার দেখাতে হবে। নিয়মিত চিকিৎসকের পর্যবেক্ষণে থাকলে অল্পেই ধরা পড়তে পারে সমস্যা। থাইরয়েডের রোগীদের চোখ ফুলে উঠলে কোনও মতেই দেরি করা যাবে না। চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে অনতিবিলম্বে।
এই রোগ ধরা পড়লে চিকিৎসকেরা ধূমপান ছাড়ার পরামর্শ দেন, থাইরয়েড রোগের চিকিৎসার উপর জোর দিতে বলা হয়, রোগীকে সেলেনিয়াম সাপ্লিমেন্ট দেওয়া হয়। এর পরেও যদি রোগ নিয়ন্ত্রণে না আসে তখন চিকিৎসকেরা অস্ত্রোপচার করার সিদ্ধান্ত নেন।