মিনিটে মিনিটে ঢেকুর উঠছে, সমস্যাটা কী? প্রতীকী ছবি।
ঢেকুরের জ্বালায় অস্থির? রাস্তাঘাটে, বাসে, অফিসে জরুরি মিটিংয়ের সময়ে সশব্দে ঢেকুর উঠলে রীতিমতো অস্বস্তিতেই পড়তে হয়। ভারী কিছু খেলে ফেললে এক-আধ বার ঢেকুর উঠতেই পারে। কিন্তু তা যদি সব সময়ের সঙ্গী হয়ে যায় এবং ঘন ঘন ঢেকুর উঠতে থাকে, তা হলে তা চিন্তার ব্যাপার বইকি! ‘আমেরিকান জার্নাল অফ গ্যাস্ট্রোএন্টেরোলজি’ পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে, যেখানে জাপানের ওসাকা মেট্রোপলিটন ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ঘন ঘন ঢেকুর তোলা মোটেও ভাল লক্ষণ নয়। গোড়া থেকেই সতর্ক না হলে পরবর্তী কালে পেটের জটিল রোগ হতে পারে।
জাপানি গবেষক ইয়াসুহিরো ফুজিয়ারা দাবি করেছেন, পুরুষেরাই এই সমস্যায় বেশি ভোগেন। খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম, ক্রমাগত বাইরের খাবার খাওয়া, অতিরিক্ত তেল-মশলাদার খাবারের প্রতি ঝোঁক এবং মাত্রাতিরিক্ত নেশা এই সমস্যাকে বাড়িয়ে দেয়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যাঁরা বেশি নরম পানীয়, অ্যালকোহল, বেশি চিনি দেওয়া খাবার খান তাঁদেরই ঘন ঘন ঢেকুর ওঠে। তা ছাড়া যাঁদের অম্বলের সমস্যা বেশি ও যাঁরা অ্যাসিড রিফ্লাক্সের ওষুধ নিয়মিত খান, তাঁদের এই সমস্যা বাড়ে।
এই বিষয়ে জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দীপিকা শূর জানাচ্ছেন, ঘন ঘন ঢেকুর ওঠার সমস্যা যদি ক্রনিক হয়ে যায়, তখন তাকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ভাষায় বলা হয় ‘বেলচিং ডিজ়অর্ডার’। হজম ক্ষমতা খুব কমে গেলে তখন খাদ্যনালি দিয়ে হাওয়া বাইরে বেরিয়ে আসতে থাকে। পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয়। পাকস্থলীতে কোনও রোগ হলে বা আলসার বাসা বাঁধলেও এমন হতে পারে। তাই গোড়া থেকেই চিকিৎসা শুরু করা প্রয়োজন।
ঢেকুরের সঙ্গে আনুষঙ্গিক আরও কিছু উপসর্গ দেখা দিতে পারে। দীপিকার কথায়, পেটে যন্ত্রণা, খিদে কম, বমি ভাব, বদহজম যদি লেগেই থাকে, তা হলে বুঝতে হবে, পাকস্থলী বেহাল হতে শুরু করেছে। চিকিৎসকের পরামর্শ, খাবার খাওয়ার সময়ে পেট কিছুটা খালি রেখে খাওয়াই উচিত। কিন্তু খিদে পেলে এই নিয়ম মানেন না বেশির ভাগ মানুষই। পাকস্থলীর যতটা ধারণ ক্ষমতা, তার চেয়ে বেশি খেয়ে ফেললেই তখন পেট আইঢাই করতে থাকে। পাকস্থলী থেকে বেরনো অ্যাসিড খাদ্যনালি দিয়ে উপরে উঠে আসতে থাকে। তখন গলা-বুক জ্বালা করে, চোঁয়া ঢেকুর ওঠে। তাই পরিমিত খেতে হবে এবং ভাল করে চিবিয়ে খেতে হবে। তেলমশলা দেওয়া খাবার না খেয়ে বাড়ির খাবার খেতে হবে। যে কোনও রকম নরম পানীয় বা প্যাকেটজাত পানীয় খাওয়া বন্ধ করতে হবে।